নাইজেরিয়া বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন পার করছে। অভাবের তাড়নায় মানুষ এখন ক্ষুব্ধ।
Published : 17 Jun 2024, 07:59 PM
“১৯৭৬ সাল থেকে প্রতি বছর একটি করে ভেড়া জবাই করেছি, কিন্তু এ বছর পারছি না।”
নাইজেরিয়ার আনুমানিক ১০ কোটি মুসলমানের মত ৭৮ বছর বয়সী মাল্লাম কাবিরু তুদুন ওয়াদা জীবনযাত্রা ব্যয় সঙ্কটের কারণে স্বাভাবিক সময়ের মতো এ বছর ঈদুল আজহা উদযাপন করতে পারছেন না।
নবী ইব্রাহিম (আঃ) সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে তার নিজের ছেলেকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার স্মরণে বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা ঐতিহ্যগতভাবে ঈদুল আজহায় ভেড়া বা বিভিন্ন প্রাণী কোরবানি দেয়।
পরে সেই পশুর মাংস গরিব, দুস্থ, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বণ্টন ও ভোজনের মধ্য দিয়ে তারা ঈদ উদ্যাপন করে।
উত্তর নাইজেরিয়ার কানো শহরের বাসিন্দা ওয়াদা বিবিসি-কে বলেন, "বিগত বছরগুলোতে আমি অন্তত একটি ভেড়া কিনতে পারতাম, কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই কঠিন যে এ বছর কেনার সামর্থ্য হয়নি।”
নাইজেরিয়া বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ খুব কষ্ট দিন পার করছে। অভাবের তাড়নায় মানুষ এখন ক্ষুব্ধ।
নাইজেরিয়ায় বার্ষিক মূদ্রাস্ফীতি গড়ে ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে; যা গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া খাবারের দামও আরও বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ।
একটি ভেড়া এখন গড়ে এক লাখ নায়রায় (৫০ পাউন্ড; ৬৩ ডলার) বিক্রি হয়, যা অনেকের নাগালের বাইরে।
আরেক নাইজেরিয়ান মাল্লাম আউয়াল ইয়াকাসাই (৬৬) বলেন, এ বছর ঈদে কোরবানি দেওয়ার একমাত্র উপায় হল খরচ ভাগ করে নেওয়া।
"দুইজন যাতে ভাগে কোরবানি দিতে পারি এজন্য একটা উট কিনেছি।”
মুসলিম এক ধর্মীয় নেতা ইদ্রিস গারবা সোকোতো বিবিসি-কে বলেন, “ঈদে ভেড়া, ছাগল বা উট জবাই করা একজন মুসলমানের সবচেয়ে প্রিয় আমলগুলোর একটি। গরু ও উটের ক্ষেত্রে সাতজন একসঙ্গে টাকা জোগাড় করতে পারে, একসঙ্গে কিনতে এবং জবাই করতে পারে- ইসলাম সেটাই অনুমোদন করেছে।”
কিন্তু অনেক মুসলমান এবং অন্যান্য নাইজেরীয় নিজেদের দৈনিক খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে একটি প্রাণী কিনে কোরবানি দেওয়াটা তাদের কাছে বিলাসিতা।
৫৪ বছর বয়সী শামসু মোহাম্মদ বলেন, কেউ যদি তাকে পশু কেনার অর্থ দেয় তাহলে এই অর্থ দিয়ে পশু না কিনে তিনি বরং সস্তা খাবার কিনে বাড়িতে মজুত করবেন।
তিনি বলেন, "কোরবানি দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, ইসলাম বলে, যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য কোরবানি। যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য এর প্রয়োজন নেই।”
ঈদের আগে মানুষ সাধারণত হাট থেকে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক প্রাণী কিনে নিয়ে পরিবারের কাছে যায়। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়।
কিন্তু নাইজেরিয়ার প্রেক্ষাপটে এ বছরটা একেবারেই আলাদা।
ইব্রাহিম বালারাবে ওয়ামবাই ভেড়া বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার গোটা বছরই সাধারণত ঈদকে ঘিরে কেটে যায়।
তিনি বলেন, “এবারের বাজার একেবারেই ভিন্ন। গত বছর ১৫টি ভেড়া বিক্রি করলেও এ বছর বিক্রি করেছি মাত্র সাতটি।”
নাইজেরিয়া সরকার বলছে, অর্থনীতির ঘুরে তারা সম্ভাব্য সবকিছুই করছে। প্রায় দেড় কোটি গরিব পরিবার প্রতি মাসে ২৫ হাজার নায়রা (১৬ ডলার) নগদ অর্থ পাচ্ছে, কিন্তু সেটি বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তা খুবই সামান্য।
এবারের ঈদের নামাজে তাই নাইজেরিয়ার লাখো মুসলমান সামনের দিনগুলোতে অবস্থার উন্নতির জন্য দোয়া করেছে; যাতে আগামী বছর তারা একটি পশু কোরবানি দিতে পারে আর সেইসঙ্গে নতুন পোশাক কিনে ঈদের আনন্দও উদযাপন করতে পারে।