অ্যাসাঞ্জের কারামুক্তি জীবনকে আবার নতুন করে উপভোগ করার আশা জাগিয়েছে। নতুন অধ্যায় শুরু করাটাই এখন দুইজনের চাওয়া- বলেন উইকিলিক্স প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী।
Published : 25 Jun 2024, 07:50 PM
যুক্তরাষ্ট্রের গোপন দলিল ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর উচ্ছ্বাস-উদ্বেগের মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী স্টেলা।
বিবিসি রেডিও ফোর টুডে কে স্টেলা বলেছেন, স্বামীর মুক্তির খবরে তিনি উচ্ছ্বসিত। তার কাছে এ মুক্তি বিস্ময়কর। ৫ বছর ধরে অ্যাসাঞ্জ এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা স্বাভাবিক জীবন কখনও উপভোগই করতে পারেননি।
এখন অ্যাসাঞ্জের কারামুক্তি জীবনকে আবার নতুন করে উপভোগ করার আশা জাগিয়েছে। নতুন অধ্যায় শুরু করাটাই এখন তাদের দুইজনেরই চাওয়া।
স্টেলার কথায়, সেইসব কষ্টের দিনের অবসান অবশেষে হয়েছে ভেবে ‘এখন যারপরনাই আবেগাপ্লুত’ তিনি।
তবে, উদ্বেগও বোধ করছেন জানিয়ে স্টেলা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিচারকের সঙ্গে আসাঞ্জের চূড়ান্তভাবে চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চিন্তায় থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ আইন লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়ে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি করেছেন, সেটির ধারাবাহিকতাতেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
গত পাঁচ বছর ধরে ব্রিটেনের বেলমার্শ কারাগার বন্দি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন অ্যাসাঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস রফায় পৌঁছানোর পর তিনি মুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন।
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলায় যে ১৮টি অভিযোগ আনা হয়েছিল, চুক্তি অনুযায়ী তার একটিতে দোষ স্বীকার করে নেবেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা। বুধবার সেই আইনি প্রক্রিয়া সারা হবে নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডসের একটি আদালতে। এ প্রক্রিয়া শেষের পরই আসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরবেন।
অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা বিবিসি কে বলেন, “এখন যা করণীয় আছে, সেটি হচ্ছে অ্যাসাঞ্জ এবং মার্কিন বিচার বিভাগের মধ্যকার নীতিগত চুক্তি। সেটিই প্রশান্ত মহাসাগরের নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে বিচারকের কাছে সই হতে হবে। সেখানেই তিনি যাচ্ছেন।”
ওই প্রক্রিয়া সম্পাদনের পর অ্যাসাঞ্জ ‘মুক্ত মানুষ’ হয়ে যাবেন, বলেন স্টেলা। অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষমাও চাইবেন বলে জানান তিনি।
অ্যাসাঞ্জ সোমবার বিমানে করে লন্ডনের স্ট্যানটেড বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে গেছেন। সেখানে বিমানে জ্বালানি ভরার পর মঙ্গলবার দিনশেষেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে যাবেন।
বুধবার সেখানকার আদালতে অ্যাসাঞ্জ হাজির হবেন বিচারকের সামনে। তখনই তিনি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষ স্বীকার করবেন এবং এর মধ্য দিয়ে মামলার কাজ সম্পন্ন হবে।
তাকে জেলে যেতেও হবে না। কারণ যুক্তরাজ্যে অ্যাসাঞ্জের কারাবন্দি থাকার সময়টিকে সাজা খাটা হিসেবে গণ্য করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক মত সম্পন্ন হলে মুক্ত অ্যাসাঞ্জ এরপর তার জন্মস্থান অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে পারবেন।
অ্যাসেঞ্জের স্ত্রী স্টেলা যুক্তরাষ্ট্রের পথে থাকা তার স্বামীর ফ্লাইটের গতিপ্রকৃতি নজরে রাখতে মানুষকে আহ্বানও জানিয়েছেন।
স্যোশাল মিডিয়ায় অ্যাসাঞ্জের ফ্লাইটের বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, আমাদের সবার চোখ তার ফ্লাইটের দিকে থাকা উচিত, কোথাও কোনও ভুল হয় কিনা তা দেখার জন্য। অ্যাসাঞ্জের ফ্লাইট ভিজে১৯৯ এরই মধ্যে ব্যাংককে নেমেছে।
অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকস ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়।
ওই সব নথির মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধ সম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত আরো ৪০ হাজার নথি ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা এবং পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অ্যাসাঞ্জকে অত্যন্ত অনমনীয় এবং বিপজ্জনক শত্রু বলেই মনে করে এসেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলিদের ভাষ্য, অ্যাসাঞ্জের ফাঁস করা গোপন নথিতে নাম থাকা গুপ্তচরদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে শুরু থেকেই তাকে হস্তান্তরের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র।