গত কয়েক বছরে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে একের পর এক গ্যাংস্টারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
Published : 29 Mar 2024, 10:43 PM
গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হয়েছিলেন তিনি। ভারতে উত্তর প্রদেশ রাজ্য পাঁচবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে, পুরোনো অপরাধের কারণে ২০০৫ সাল থেকেই উত্তর প্রদেশ এবং পঞ্জাবের জেলে কেটেছে তার। সেই মুখতার আনসারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। বর্তমানে উত্তর প্রদেশের বান্দার এক কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। তার মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আনসারির পরিবার বলছে তাকে জেলে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল।
বিবিসি জানায়, বৃহস্পতিবার বান্দার কারাগার কর্তৃপক্ষ বলেছে, ওইদিন সন্ধ্যায় তার বমি হয়েছিল। এরপর, জেল কর্তৃপক্ষ রাতে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় রানি দুর্গাবতী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়।
৯ জন চিকিৎসকের একটি দল অবিলম্বে তার চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু, তাদের সবরকম প্রচেষ্টার পরও মুখতার আনসারির হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তার ভাই গাজিপুরের সাংসদ, আফজল আনসারি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মুখতার আনসারিকে জেলে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত দুবার জেলে আনসারির খাবারে বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিষক্রিয়াতেই আনসারি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে দাবি করেন তার ভাই।
কারা বিভাগ অবশ্য বলছে, স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায়, মঙ্গলবার ভোরে আনসারি শৌচাগারে পড়ে গিয়েছিলেন। এরপর, জেলেই চিকিৎসকদের একটি দলকে ডাকা হয়। তারা মুখতার আনসারিকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করার সুপারিশ করেছিলেন। মাত্র কয়েকদিন পরই তার মৃত্যু হল।
গত কয়েক বছরে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে একের পর এক গ্যাংস্টারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। কখনও তারা মারা গেছে পুলিশি এনকাউন্টারে। কখনও বা তাদের জেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় খুন করা হয়েছে। কখনও বা জেলের মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে। মুখতার আনসারির মৃত্যু নিয়ে তাই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো।
কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্র রাজপুত বলেছেন, “জেলে মুখতার আনসারির মৃত্যু ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশ সরকারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত। সবার জানা উচিত তলে তলে কি চলছে।”
মুখতার আনসারির বিরুদ্ধে ৬১টি ফৌজদারি মামলা ছিল। খুনের অভিযোগই ছিল ১৫টি। অপরাধ জগতে তিনি প্রবেশ করেছিলেন গত শতাব্দীর আটের দশকে। পরে নিজের আলাদা গ্যাং তৈরি করেছিলেন। মউ, গাজিপুর, বারাণসী এবং জৌনপুর এলাকা জুড়ে তোলাবাজি, অপহরণ, খুনের মতো বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল এই চক্র।
পরে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়ে আনসারি বিধায়ক হন। ২০০৪ সালে, তার এক গোপন আস্তানা থেকে একটি মেশিনগান পাওয়া গিয়েছিল। সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনে অভিযুক্ত হয়ে তিনি কারাবন্দি হন।
২০২৩-সালের এপ্রিলে বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণানন্দ রাইকে হত্যার অপরাধে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৩ মার্চ তাকে জাল বন্দুক লাইসেন্সের এক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার আনসারিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। মুখতার আনসারির মৃত্যুতে, রাজ্যজুড়ে অশান্তি মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই, উত্তর প্রদেশ জুড়ে ফৌজদারি বিধির ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের পুলিশের ডিজি প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন, বান্দা, মউ, গাজিপুর এবং বারাণসী জেলায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।