সেনাবাহিনীর পরিবহন বিমানে করে রাজধানী খার্তুম থেকে বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Published : 22 Apr 2023, 08:43 PM
বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও চীনের নাগরিকদের আকাশ পথে সুদান থেকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী।
বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাপ্রধান ফাত্তাহ আল-বুরহান এই সুবিধা দিতে রাজি হয়েছেন এবং ‘আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে’ তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ১৫ এপ্রিল শনিবার থেকে ক্ষমতার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে দেশটির প্রভাবশালী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) তুমুল লড়াই শুরু হয়।
দেশজুড়ে ওই সংঘর্ষ এরইমধ্যে কয়েকশ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী খার্তুম এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে লড়াইয়ের তীব্রতা বেশি।
সুদানে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকেই বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় ওইসব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও চীনের নাগরিক এবং কূটনীতিকদের সেনাবাহিনীর পরিবহন বিমানে করে রাজধানী খার্তুম থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে বলেও সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়।
এদিকে, সৌদি আরব নিজস্ব উদ্যোগে দেশটির নাগরিকদের ভ্রাতৃপ্রতিম কোনো নিরাপদ দেশে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এ বিষয়ে সুদানের সেনাবাহনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সুদানে সৌদি আরবের কূটনৈতিক মিশনের কর্মীদের এরইমধ্যে সড়ক পথে বন্দর নগরী পোর্ট সুদানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে আকাশ পথে তাদের সৌদি আরব নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর জর্ডানের কূটনৈতিক মিশনের কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হবে।
সুদানে লড়াইয়ের প্রথম দিনই আরএসএফ বাহিনী খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দখল নেওয়ার দাবি করে। যদিও সেনাবাহিনী তাদের সেই দাবি ঠিক নয় বলে জানিয়েছে।
বিমানবন্দর ঘিরে উভয় পক্ষের তুমুল লড়াই চলার কারণে গত কয়েকদিন ধরে সেখানে বিমান উঠা-নামা বন্ধ রয়েছে।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ সুদানে তাদের দূতাবাসও বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু ওইসব দেশ এখনো তাদের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে পারেনি।
মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎস ঈদ-উল ফিতরের জন্য উভয় পক্ষ তিনদিনের যুদ্ধবিরতিতে একমত হয়েছিল, যা শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে।
কিন্তু যুদ্ধবিরতির মধ্যেও সেখানে লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
বিবিসি জানায়, শনিবারও রাজধানী খার্তুমে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলি এবং বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়াম আল-মাহদি খার্তুম থেকে বিবিসিকে বলেন, যুদ্ধবিরতির কোনো ধরণের লক্ষণ এখানে নেই।
‘‘গত অন্তত ২৪ ঘণ্টা ধরে আমাদের এখানে কারেন্ট নেই। আর প্রায় ছয় দিন ধরে কোনো পানিও আমরা পাচ্ছি না।
‘‘আমাদের তরুণদের মৃতদেহ সড়কে পড়ে পচচ্ছে। এমনকি চিকিৎসা দলের উপরও হামলা হয়েছে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুযায়ী, সুদানে এখন পর্যন্ত চারশাতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।
যদিও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলেই বিশ্বাস অনেকের। কারণ, হতাহত অনেকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেন না।
লড়াইয়ে হাজার হাজার মানুষ আহত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে আহত রোগী উপচে পড়ছে।
জাতিসংঘ বলেছে, লড়াই থেকে প্রাণ বাঁচাতে দারফুর অঞ্চল থেকে সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিবেশি দেশ শাদে পালিয়ে গেছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
রাজধানী খার্তুম দারফুর অঞ্চলে অবস্থিত।