আগুয়ান ইউক্রেইনীয় বাহিনীর তাড়ায় একাধিক শহর হাতছাড়া রাশিয়ার

ইউক্রেইনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ুম শহরের এ তড়িঘড়ি পতনকে মস্কোর অন্যতম বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2022, 05:15 AM
Updated : 11 Sept 2022, 05:15 AM

ইউক্রেইনীয় বাহিনীর ‘পাল্টা আক্রমণে’ ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান একটি ফ্রন্টলাইন থেকে পিছু হটতে হয়েছে রাশিয়াকে, ছেড়ে দিতে হয়েছে উত্তরপূর্ব ইউক্রেইনে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ ইজিয়ুমকেও।

শনিবার খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ুম শহরের এ তড়িঘড়ি পতনকে মার্চে ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ থেকে সরে আসতে বাধ্য হওয়ার পর মস্কোর সবচেয়ে বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পালিয়ে যাওয়ার সময় হাজার হাজার রুশ সেনা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম রেখে গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইউক্রেইন উত্তরপূর্ব অঞ্চলে তাদের সেনাদের অগ্রসর হওয়ার ঘটনাকে যুদ্ধের ‘মোড় পরিবর্তনের পয়েন্ট’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিচ্ছে।

রুশ বাহিনী তাদের দনবাস অভিযানের রসদ ঘাঁটি হিসেবে ইজিয়ুমকে ব্যবহার করতো।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপরিচালিত বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছে, তারা রুশ বাহিনীকে ওই এলাকা ছেড়ে দোনেৎস্কের অন্যান্য এলাকায় মোতায়েন সেনাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেখানকার অভিযানের গতি বাড়াতে বলেছে।

খারকিভের রুশ প্রশাসনের প্রধান ‘জীবন বাঁচাতে’ বাসিন্দাদের প্রদেশটি ছেড়ে রাশিয়ায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলে তাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন শহরের পুনর্দখল নেওয়া নিয়ে ইউক্রেইন যা যা বলছে, তার সব সত্যি হলে তা হবে রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের ধাক্কা। কিইভবাহিনীর এ পাল্টা আক্রমণে রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও ভাষ্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর।

এ জয় ইউক্রেইনের উদ্দীপনা বাড়াবে। দেশটি তাদেরকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আসা পশ্চিমা দেশগুলোকে তাদের সক্ষমতা এবং তারা যে ধারাবাহিক সহায়তা পাওয়ার উপযুক্ত, তা দেখাতে বদ্ধপরিকর ছিল।

রাশিয়ার রপ্তানি করা তেলের মূল্যসীমা বেধে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অগ্রসর হলে মস্কো ইউরোপে সব ধরনের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেবে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এ হুমকির মুখে মহাদেশটিতে শীত আসার আগে যুদ্ধে অগ্রগতি দেখানোর চাপ ছিল ইউক্রেইনের ওপর।

শনিবার কিইভে ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলেছেন, ইউক্রেইনের বাহিনী তাদেরকে যে অস্ত্র দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে যে তারা রুশ বাহিনীকে হারাতে সক্ষম, তা দেখিয়েছে।

“সেজন্যই ফের বলছি, যত অস্ত্র আমরা পাবো, তত দ্রুত আমরা জিতবো, তত দ্রুত যুদ্ধ শেষ হবে,” বলেছেন তিনি।

রাতে দেওয়া ভিডিও ভাষণে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলদোমির জেলেনস্কি জানান, চলতি মাসের শুরুতে পাল্টা আক্রমণ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইউক্রেইন প্রায় ২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনর্দখল করেছে।

“রুশ সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির বাহিনী, দৌড়াতে থাকো!” টুইটারে এমনটাই লিখেছেন জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক।

ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা এখনও ইজিয়ুম যে তাদের নিয়ন্ত্রণে তা নিশ্চিত না করলেও ইয়েরমাকের পোস্ট করা এক ছবিতে কিইভবাহিনীকে শহরটির উপকণ্ঠে দেখা গেছে।

উত্তরে অবস্থিত কুপিয়ানস্ক ইউক্রেইনীয় বাহিনীর দখলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর রুশ বাহিনী খারকিভের বড় অংশ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। কুপিয়ানস্ক উত্তরপূর্ব ইউক্রেইনজুড়ে রাশিয়ার পুরো ফ্রন্টলাইনে রসদ সরবরাহের একমাত্র রেলওয়ে কেন্দ্র ছিল।

রাশিয়ার ঘোষণার আগে শনিবার ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা কুপিয়ানস্কের সিটি হলে তাদের সেনাদের নীল-হলুদ ইউক্রেইনের পতাকা তোলার ছবি পোস্ট করেছিলেন।

পূর্বাঞ্চলীয় ইউক্রেইনের রুশপন্থি বাহিনীর সাবেক এক কমান্ডার ইগর গিরকিন টেলিগ্রামে রাশিয়ার এ পিছু হটাকে ‘বড় ধরনের পরাজয়’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

চলতি মাসের শুরুতে ইউক্রেইন তাদের ‘পাল্টা আক্রমণ’ শুরু করেছিল খেরসন দিয়ে, তবে সেখানে তাদের অভিযানের কী অবস্থা, সে বিষয়ে দেশটির কর্মকর্তারা এখনও ‍মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন।