‘রাজনৈতিক নেতৃত্ব’ বিশ্বব্যাপী জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা পাঠানো অসম্ভব করে তুলেছে, বলেছিলেন ওই কর্মকর্তা।
Published : 03 Mar 2025, 03:12 PM
বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইউএসএআইডিকে দুর্বল করে দিতে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টায় অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু বাড়বে, এমন সতর্কবার্তা দেওয়ার আধঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সংস্থাটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়ার নোটিস পেয়েছেন।
রোববার ইউএসএআইডির বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রশাসক নিকোলাস এনরিচ তার কর্মীদের কাছে ইমেইলে ৭ পৃষ্ঠার একটি মেমো পাঠান; যাতে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্ব’ বিশ্বব্যাপী জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা পাঠানো অসম্ভব করে তুলেছে।
এই বক্তব্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। সরকারের ব্যয় কমানোর অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার ধনকুবের উপদেষ্টা ইলন মাস্কের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির সহায়তা স্থগিত হওয়ার পর রুবিও বলেছিলেন, জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচি এই স্থগিতাদেশের বাইরে থাকবে।
এনরিচের পাঠানো মেমোটি দেখেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রোববার ওই মেমো পাঠানোর ২০ মিনিট পর এনরিচ কর্মীদের উদ্দেশ্যে নতুন আরেকটি ইমেইল পাঠান। যাতে বলা হয়, তিনি ‘মাত্রই জানতে পেরেছেন’ যে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, এবং এই আদেশ ‘তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর’ হচ্ছে।
দ্বিতীয় এই ইমেইলটিও দেখেছে রয়টার্স।
বিষয়টির সম্বন্ধে অবগত একটি সূত্র এ বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছে, ইউএসএআইডিকে ভেঙে দেওয়ার পরিণতি নিয়ে ইমেইল পাঠানোর আগেই গত বুধবার এনরিচকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
রয়টার্স এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ব্যয় কমানোর দায়িত্বে থাকা ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।
এনরিচও এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
ইউএসএআইডির আটকে যাওয়া কর্মসূচিগুলোর মধ্য উগান্ডায় প্রাণঘাতী ইবোলার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডও আছে বলে মেমোতে জানিয়েছেন এনরিচ।
আফ্রিকার দেশটিতে নতুন করে ইবোলার প্রাদুর্ভাব নিয়ে এরই মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত দেড় মাসের মধ্যে প্রাণঘাতী এ রোগে আক্রান্ত ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, মারা গেছে ২ জন।
“এর (সহায়তা স্থগিত) ফলে যে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু, অস্থিতিশীলতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক হুমকি দেখা যাবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই,” মেমোতে এমনটাই লিখেছেন এনরিচ।
২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখের এ মেমোটি রোববার স্থানীয় সময় বিকালের দিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের মধ্যে বিস্তৃত আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, তারা ১০ হাজার বৈদেশিক অনুদান ও চুক্তি বাতিল করে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার বাঁচাতে যাচ্ছে। এ পদক্ষেপের ফলে ইউএসএআইডির বিশ্বব্যাপী কাজের প্রায় ৯০ শতাংশই বন্ধ হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেই ট্রাম্প সরকারের ব্যয় কমাতে ডিওজিই বিভাগ খুলে এর ভার ধনকুবের ইলন মাস্কের হাতে ছাড়েন। মাস্ক প্রথমেই যেসব পদক্ষেপ নেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কোপ পড়ে ইউএসএআইডির ওপর।
সংস্থাটির কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ইউএসএআইডির জীবন রক্ষাকারী সহায়তা যদি বছরখানেক স্থগিত থাকে তাহলে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ৭১ হাজার থেকে এক লাখ ৬৬ হাজার পর্যন্ত বাড়তে পারে (প্রায় ৪০ শতাংশ), বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে ২৮ থেকে ৩২ শতাংশ, ইবোলার মতো উদীয়মান সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধি পেতে পারে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত। পৃথক এক এক মেমোতো এনরিচ এমনই অনুমান করেছে, এই মেমোটিও দেখেছে রয়টার্স।
জানুয়ারিতে ট্রাম্প পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশে সব সহায়তা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্দেশ দিলেও জরুরি ওষুধ, খাদ্য ও আশ্রয়ের মতো জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সাময়িক ছাড় পাবে।
কিন্তু ডিওজিই-র কর্মী এবং রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা এই জীবন রক্ষাকারী সহায়তার জন্য অর্থের অনুমোদনও অসম্ভব করে তুলছে, বলেছেন এনরিচ।
তার মেমোতে বলা হয়েছে, ইউএসএআইডির একাধিক কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায় কোন কোন কর্মসূচি জীবন রক্ষাকারী হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কীভাবে সেগুলোর অর্থায়ন হবে সে বিষয়ে পরষ্পরবিরোধী নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থকে জীবন রক্ষাকারী কোনো স্বাস্থ্য কার্যক্রম অনুমোদন পায়নি, বলেছেন এনরিচ। কখনো কোনো কর্মসূচি যদি ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ থেকে ছাড়ও পায়, ডিওজিই তখনও সংস্থার পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে রাখে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি লিখেছেন, ইউএসএআইডি এক মাস আগেই উগান্ডায় ইবোলা প্রতিরোধে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিল, কিন্তু মাঠে কর্মরত অংশীদার সংস্থাগুলো কাজের জন্য অর্থ তুলতে পারছে না।