Published : 03 Jun 2024, 01:55 PM
মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ক্লাউদিয়া শেইনবাউম। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের এই প্রার্থী বিশাল ব্যবধানের জয় পেয়েছেন।
মেক্সিকোর সরকারি নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে রাজধানী মেক্সিকো সিটির ৬১ বছর বয়সী সাবেক এই মেয়র রোববারের নির্বাচনে ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৬০ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। মেক্সিকোর গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এটাই ভোটের সর্বোচ্চ শতাংশ হতে পারে।
শেইনবাউম তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সম্মিলিত বিরোধীদলীয় প্রার্থী সেনেটর ও ব্যবসায়ী শোচিত গালভেজ থেকে ৩০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। গালভেজ ভোট পেয়েছেন ২৬ দশমিক ৬ থেকে ২৮ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে।
শেইনবাউম জানিয়েছেন, পরাজয় স্বীকার করে গালভেজ ফোনে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আগামী ১ অক্টোবর শেইনবাউম তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা, মেক্সিকোর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
শেইনবাউমএকজন সাবেক জলবায়ু বিজ্ঞানী। তিনি ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেক্সিকো সিটির মেয়রের দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাদরের আর্শীবাদপুষ্ট প্রার্থী।
শেইনবাউম বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওব্রাদরের অনেকগুলো সফল কর্মসূচী অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নিজের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। গত ছয় বছরে ওব্রাদরের নেতৃত্বে লাখ লাখ মেক্সিকান কীভাবে দারিদ্র থেকে বের হয়ে এসেছেন নির্বাচনী প্রচারণায় এই বিষয়টিতেই বেশি জোর দিয়েছিল শেইনবাউমের মোরেনা পার্টি।
শেইনবাউমের সমর্থকরা মেক্সিকো সিটির প্রধান চত্বর সোকালোতে তাদের প্রার্থীর জয় উদযাপন করছেন, এখানে তারা ‘ক্লাউদিয়া শেইনবাউম, প্রেসিডেন্ট’ লেখা ব্যানার দোলাচ্ছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
নিজের বিজয়ী ভাষণে শেইনবাউম বলেছেন, তিনি ওব্রাদরের ‘অগ্রগতি’ আরও এগিয়ে নিতে চান। “আমি আপনাদের হতাশ করবো না’ বলেছেন তিনি।
সমর্থকদের মুহুর্মুহু ‘প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্ট’ হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি বলেন, “এই প্রজাতন্ত্রের ২০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আমি মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়েছি।”
প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাদরের দল মোরেনার সভাপতি মারিও দেলগাদো শেইনবাউমের জয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছেন, “এটি আমাদের দেশের ইতিহাসে একটি চমৎকার মুহূর্ত।”
মোরেনা পার্টির ক্ষমতাসীন জোট মেক্সিকোর কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সম্ভাব্য দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয় পাওয়ার পথে রয়েছে। এ সাফল্য পেলে ক্ষমতাসীন জোট বিরোধীদলের কোনো সমর্থন ছাড়াই সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব পাস করতে সক্ষম হবে।
লোপেজ ওব্রাদর ২০১৮ সাল থেকে মেক্সিকোর ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি আর শীর্ষ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। কারণ মেক্সিকোর সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্ট শুধু ছয় বছরের এক মেয়াদেই ক্ষমতায় থাকতে পারেন।
ক্ষমতার সময় ফুরিয়ে আসলেও জনপ্রিয়তার দিক থেকে এখনো শীর্ষে ওব্রাদর। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে তার পক্ষে প্রায় ৬০ শতাংশ জনসমর্থন আছে। জনপ্রিয় এই নেতা তার মোরেনা পার্টির প্রার্থী শেইনবাউমের পক্ষে সর্বাত্মক সর্মথন দিয়েছিলেন।
যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওব্রাদর ক্ষমতায় এসেছিলেন তার অনেকগুলোই অপূর্ণ রয়ে গেছে। কিন্তু তার দারিদ্র হ্রাসের প্রচেষ্টা ও বয়স্ক মেক্সিকানদের সহায়তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তাই বর্তমান প্রেসিডেন্টের সমর্থন শেইনবাউমের ভোটার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মোরেনা বলেছে, ন্যূনতম মজুরি দ্বিগুণেরও বেশি করার মতো নীতির কারণে দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।