ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাস দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা এবং গভীরভাবে বিভক্ত নিজ দলকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করবেন।
Published : 06 Sep 2022, 12:05 PM
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর মঙ্গলবারই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে লিজ ট্রাসের।
এদিন তিনি স্কটল্যান্ডে গিয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করবেন। সেখানে রানি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন।
এর আগে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রানির সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগ পত্র জমা দেবেন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাস দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা এবং গভীরভাবে বিভক্ত নিজ দলকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য পূরণে মন্ত্রিসভার শীর্ষ পদগুলোতে যাদের রাখবেন বা নিয়োগ দেবেন তাদের নাম ঘোষণা করবেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাজ্য যখন তুমুল জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি, তখন কর কমানো ও জ্বালানির খরচে নাভিশ্বাস ওঠা জনগণকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোট বাগিয়ে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটকে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নিলেন ট্রাস; এভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড় থেকে ছিটকে দিলেন তিনি।
“নেতৃত্বে এবং আমাদের মহান দেশকে কিছু দিতে আমার ওপর আস্থা রাখায় ধন্যবাদ। এই কঠিন সময় থেকে সবাইকে বের করে আনতে, অর্থনীতিকে বিকশিত করতে এবং যুক্তরাজ্যের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে আমি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবো,” কনজারভেটিভ দলের প্রধান হওয়ার পর এক ভাষণে বলেছেন ট্রাস।
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া ট্রাস বিদায়ী বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন, যিনি নানান কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় তার সরকারের জনসমর্থন হু হু করে নামতে শুরু করেছিল; নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যরাও সঙ্গ ছাড়া শুরু করলে জুলাইয়ে জনসন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
জনসন মঙ্গলবার ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে বিদায়ী ভাষণ দেবেন। এরপর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে গিয়ে রানির সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র দেবেন। এরপর বালমোরাল প্রাসাদে হাজির হয়ে নতুন সরকার গঠনের অনুমতি চাইবেন ট্রাস।
এ নিয়ে ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর থেকে ৭ বছরের মধ্যে চতুর্থ কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী দেখতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য।
এই সময়ের মধ্যে দেশটিকে এক সংকট থেকে আরেক সংকটে পড়তেও দেখা গেছে। ট্রাস এমন সময়ে দায়িত্ব নিচ্ছেন, যখন কয়েক বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া দেশটি দীর্ঘ মন্দা এবং মূল্যস্ফীতি বর্তমানের তুলনায় আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। গত চার দশকের মধ্যে প্রথমবার দেশটিতে পণ্যমূল্য এতটা বেড়ে গেছে। জ্বালানি, খাদ্য এবং তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এজন্য দায়ী।
যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন নতুন না হলেও এবার সরকারপ্রধান বদলে যাওয়ার দৃশ্য খানিকটা অপরিচিতই মনে হতে পারে। কেননা, রানি বিদায়ী ও নতুন দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই বাকিংহাম প্রাসাদের বদলে বালমোরালে দেখা করছেন।
কয়েকদিন আগেই এক ঘোষণায় বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছিল, যাতায়াত সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে রানি তার গ্রীষ্মকালীন আবাসস্থল বালমোরাল থেকেই নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন।
নিজের শাসনামলে ট্রাসের আগেও ১৪ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দেখা রানি এলিজাবেথ (৯৬) সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রকাশ্যে আসার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। নানা শারীরিক জটিলতায় ভূগছেন তিনি। অজ্ঞাত এক অসুখে গত বছরের অক্টোবরে তাকে এক রাত হাসপাতালেও থাকতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দিনই দীর্ঘ ভ্রমণের ঝক্কি নিতে হচ্ছে ট্রাসকে। অন্যদের যেখানে রানির দেখা পেয়ে ফিরতে পাড়ি দিতে হতো মাত্র দুই মাইলের মতো, সেখানে ট্রাসকে দিতে হবে হাজার মাইল পাড়ি।
আরও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যের সংকটের ত্রাতা হতে পারবেন লিজ ট্রাস?
যেভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন লিজ ট্রাস
লিজ ট্রাস: মার্গারেট থ্যাচার সাজা ছোট্ট মেয়েটিই যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে