Published : 06 May 2025, 06:28 PM
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার পর হোটেল ও শিকারাগুলো এখন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিলেও নেই পর্যটক। আতঙ্কে কাশ্মীর ছেড়ে চলে গেছেন ভ্রমণকারী-দর্শণার্থীরা।
এর জেরে ডাল লেক কার্যত পর্যটক শূন্য। অপরদিকে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের সীমান্তঘেঁষা জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাও সিল করে দেওয়া হয়েছে সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কায়।
বরফঢাকা পর্বত, পাহাড়ি ঝর্ণা আর মুঘল আমলের বাগানের জন্য খ্যাত হিমালয়ের বিভক্ত এই উপত্যকার স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যটনের ওপর অনেক বেশিমাত্রায় নির্ভরশীল। কিন্তু এখন অনেককিছুর মধ্যে তাদের জীবিকা ভারত-পাকিস্তান শত্রুতার প্রথম বলি হয়েছে।
পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ ভারত-পাকিস্তান পুরো কাশ্মির নিজেদের বলে দাবি করে। যদিও আংশিকভাবে অঞ্চলটি উভয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর আগে কাশ্মির নিয়ে দুইবার যুদ্ধও করেছে তারা।
তবে গত চার বছরে যুদ্ধবিরতি ও জঙ্গি তৎপরতা কমে আসায় অঞ্চলটিতে পর্যটনখাত চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল।
গত বছর ভারত শাসিত কাশ্মিরে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখের বেশি; পাকিস্তানি অংশে গিয়েছিল আরও প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের জন্য এটি ছিল বড় সাফল্য।
চলতি বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতেও হোটেল, শিকারা ও ট্যাক্সি প্রায় পুরোদমে বুকড ছিল। কিন্তু গত মাসে জঙ্গি হামলায় ২৬ পর্যটক নিহতের ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি বদলে যায়।
ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তান দায় অস্বীকার করে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভারত যে কোনও সময় সামরিক হামলা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছে।
শ্রীনগরের শতবর্ষী পর্যটন সংস্থা ও একাধিক শিকারা পরিচালনাকারী ইয়াসিন তুমান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বললেন, “সব বুকিং বাতিল হয়েছে, শিকারাগুলো খালি। আমাদের শিকারাগুলো মানুষে পরিপূর্ণ থাকত। এখন আর কোনও অতিথি নেই।”
পাকিস্তানের দিকে ৯,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পির চিনাসিতে রেস্তোঁরা ও অতিথিশালাগুলো প্রায় ফাঁকা। কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করায় এবং সীমান্তে ভারতের হামলার আশঙ্কা থাকায় পর্যটক সমাগম হচ্ছে না।
অন্যদিকে, সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি পর্যটনকেন্দ্র নীলম উপত্যকায় এখন কোনও পর্যটকই নেই বলে জানান হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র আবরার আহমদ বাট। উপত্যকার প্রায় ৩৭০টি হোটেল ও অতিথিশালা এখন খালি।
“এই পর্যটকশূণ্যতা এ মৌসুমের জন্য বড় ধাক্কা,” বলেন তিনি। ওই অঞ্চলে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পর্যটন খাতে কাজ করে।
ইসলামাবাদে একটি বিদেশি মিশনে কাজ করা সৈয়দ ইয়াসির আলি ভয় উপেক্ষা করে তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে পির চিনাসি ভ্রমণে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বলেন, “এই দিকটা নিরাপদ। আমি এখানে আছি- তাই জানি ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
কিন্তু মুসাদ্দিক হুসেইনের মতো ক্ষুদ্র দোকানদারদের জন্য কাশ্মীরে আতঙ্ক বাস্তবিকই অর্থনৈতিক ক্ষতি ডেকে আনছে। “ব্যবসায় একেবারেই মন্দা। আমাদের দেশে শান্তি থাকা উচিত, যাতে আমরা সমৃদ্ধ হতে পারি। আমরা চাই দুই দেশের মধ্যে শান্তি বজায় থাকুক,” বলেন তিনি।
ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে ট্যাক্সি চালক তানভীর বললেন, “পেহেলগামে হামলার আগে রাস্তায় গাড়ি চালানোর জায়গা পর্যন্ত ছিল না। এখন সারাদিন অপেক্ষা করি, একজন যাত্রীও পাই না।”