নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা, এক যাজক ও এক নিরাপত্তা রক্ষী আছেন।
Published : 24 Jun 2024, 09:43 AM
রাশিয়ার উত্তর ককেশাস অঞ্চলের দাগেস্তানে ইহুদিদের সিনাগগ, অর্থডক্স খ্রিস্টানদের গির্জা ও পুলিশের একটি ফাঁড়িতে বন্দুকধারীদের হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন।
রোববার দাগেস্তানের দুই শহর ডারবেন্ট ও মাখাচকালায় অর্থডক্স পরব পেন্টেকস্ট চলার সময় এসব হামলা চালানো হয়, জানিয়েছেন অঞ্চলটির প্রধান।
নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা, এক যাজক ও এক নিরাপত্তা রক্ষী আছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। হামলাকারীদের মধ্যে ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং অন্যদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। তবে অতীতে দাগেস্তানে উগ্রপন্থিদের হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
সোমবার ভোররাতে টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় দাগেস্তান অঞ্চলের গভর্নর সের্গেই মেলিকোভ বলেছেন, “এটি দাগেস্তান ও পুরো দেশের জন্য দুঃখজনক একটি দিন।”
দাগেস্তান রাশিয়ার উত্তর ককেশাস অঞ্চলের মুসলিম প্রধান এলাকাগুলোর একটি। এটি কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল বরাবর বিস্তৃত। মাখাচকালা অঞ্চলটির রাজধানী আর ডারবেন্ট প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি বড় শহর।
ডারবেন্টে হামলা
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই শহরের একটি গির্জায় হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা প্রধান যাজক ফাদার নিকোলাই কাচেরনিকভকে নৃশংসভাবে খুন করে। রোববার গির্জাটিতে পেন্টেকস্ট পরব চলাকালে সন্ধ্যাকালীন প্রার্থনার পর বন্দুকধারীরা একজন রক্ষীকে হত্যা করার পর সেখানে ঢুকে পড়ে এবং ৬৬ বছর বয়সী যাজককে গলা কেটে হত্যা করে, জানিয়েছে রাশিয়ার গণমাধ্যম আরটি।
এরপর ডারবেন্টের সিনাগগে হামলা চালানো হয়। সম্প্রতি সিনাগগটির নিরাপত্তা জোরদার করে বাইরে পুলিশের একটি স্কোয়াড মোতায়েন ও ভেতরে বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে রাশিয়ার ইহুদি কংগ্রেস।
এখানে হামলার সময় পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীরা বন্দুকধারীদের বাধা দেয় আর হামলাকারীদের গুলিতে নিহত হয়। এরপর সন্ধ্যাকালীন প্রার্থনার আগে ৪০ মিনিট ধরে সিনাগগটিতে তাণ্ডব চালায় হামলাকারীরা। শেষে আগ্নেয়বোমা ব্যবহার করে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মাখাচকালা হামলা
আঞ্চলিক এই রাজধানীর একটি ট্র্যাফিক পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণের মধ্য দিয়ে এখানে সহিংসতা শুরু হয় বলে জানা গেছে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তির একটি দল, তাদের মধ্যে দুইজন অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ছেন আর অপরজন সম্ভবত পুলিশের একটি গাড়িতে লুটপাট চালাচ্ছেন।
এখানের ঘটনা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত তথ্য তেমন একটা পাওয়া যায়নি বলে আরটি জানিয়েছে। এখানেও একটি সিনাগগে হামলা হয়েছে বলে রাশিয়ার ইহুদি কংগ্রেস নিশ্চিত করেছে।
কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছে, মাখাচকালার একটি গির্জার মধ্যে কিছু লোককে জিম্মি করে রেখেছে হামলাকারীরা। কিন্তু পরে পরিষ্কার হয় যে কাছাকাছি গোলাগুলি চলায় ওই লোকজন গির্জার ভেতরে ব্যারিকেড দিয়ে নিজেরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করছিল। তারা কোনো বিপদের মুখোমুখি হয়নি বলে দাগেস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান
অপরাধীদের ধরতে ডারবেন্টে কয়েক ঘণ্টা ধরে অভিযান চালানো হয়। প্রতিবেশী শহর দাগেস্তানস্কি অগনি থেকে সেখানকার পুলিশ প্রধান ডারবেন্টে এসে সহকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর বন্দুকধারীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন বলে আঞ্চলিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।
রাশিয়ার জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি (এনএসি) ঘোষণা করেছে, ডারবেন্টে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সক্রিয় পর্বটি স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১১টার দিকে শেষ হয়েছে আর অভিযানে দুই হামলাকারী নিহত হয়েছে।
স্থানীয় সময় রাত ২টা পর্যন্ত মাখাচকালায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলছিল, তখন পর্যন্ত অন্তত তিন হামলাকারী নিহত হয়।
দাগেস্তান প্রজাতন্ত্রের গর্ভনর মেলিকোভ জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ হামলাকারী বন্দুকধারীদের সহযোগীদের খোঁজ করছে।
হতাহত জোড়া এ হামলায় মোট কতোজন নিহত হয়েছেন তার পরিষ্কার কোনো চিত্র পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন এবং আরও ‘বেশ কয়েকজন’ বেসামরিক হতাহত হয়েছেন।
BREAKING:
A synagogue is on fire in Dagestan, Russia after an Islamist terror attack.
At least 6 people k*lled pic.twitter.com/9HA8RmIVAx
— Visegrád 24 (@visegrad24) June 23, 2024
অঞ্চলটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৩ পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত মোট ১৬ জনকে মাখাচকালার প্রধান আঞ্চলিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মাখাচকালায় নিহত সন্ত্রাসীদের মধ্যে দুইজন স্থানীয় এক পৌরপ্রধানের ছেলে বলে শনাক্ত হয়েছে, বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে। এরপর ওই পৌরপ্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তিনি তার পদ হারাতে পারেন।
রাশিয়ার অন্য কর্মকর্তারা বন্দুকধারীদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেছে।
শেষ খবর পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি।