Published : 23 Dec 2023, 04:15 PM
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রযুক্তি খাতের বেশ কয়েকটি শীর্ষ কোম্পানিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা দেখা গেছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো শহরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি আর্থিক পারিশ্রমিক পান যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রান্সিসকো শহরে কাজ করা কর্মীরা।
প্রযুক্তি খাতের পারিশ্রমিক নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম ‘লেভেলস ডট এফওয়াআই’। এই কোম্পানির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর স্যান ফ্রান্সিসকোতে প্রযুক্তি কর্মীদের গড় পারিশ্রমিক গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। দুই লাখ কর্মীর কাছ থেকে পাওয়া ডেটার ভিত্তিতে বলেছে প্ল্যাটফর্মটি।
২০২২ সালের তুলনায় শহরটিতে গড় পারিশ্রমিক বেড়েছে ছয় শতাংশ, যখন গোটা প্রযুক্তি খাতেই কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। এমনকি ২০২১ সালের চেয়েও শহরটিতে প্রায় চার শতাংশ পারিশ্রমিক বেড়েছে, যখন প্রযুক্তি খাতে চাকরি পেতে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হতো কর্মীদের।
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিয়াটলের (বার্ষিক গড় পারিশ্রমিক সোয়া দুই লাখ ডলার) চেয়ে স্যান ফ্রান্সিসকোতে একজন ‘মিড লেভেল’ বা পেশাগত জীবনে মধ্য পর্যায়ে রয়েছেন এমন প্রযুক্তি কর্মীর আয় ১১ শতাংশ বেশি।
এদিকে, বড় ব্যবধানে পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে নিউ ইয়র্ক। শহরটিতে বার্ষিক গড় পারিশ্রমিক এক লাখ ৮৫ হাজার ডলার, যা স্যান ফ্রান্সিসকোর চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম। তবে, শহর দুটির জীবনযাত্রার খরচ প্রায় একই।
লেভেলস ডটএফওয়াইআই-এর তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নিউ ইয়র্কে প্রযুক্তি কর্মীদের পারিশ্রমিক কমেছে এক শতাংশ।
প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা জুহাইর মুসা বলেন, স্যান ফ্রান্সিসকোতে পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ার কারণ হল, যখন বিভিন্ন কোম্পানি গণছাঁটাইয়ের পর আবারও কর্মী নিয়োগ দিতে শুরু করে, সেখানে তারা জ্যেষ্ঠ কর্মীদের নিয়েছে, যেখানে গড় বেতনও বেশি। এ ছাড়া, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ব্যবস্থা থেকেও মুখ সরিয়ে নিয়েছে প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ নেতৃত্ব।
“সাধারণত বিভিন্ন ‘আরটিও (রিটার্ন টু অফিস)’ প্রকল্পের সহায়তায় লোকজন স্যান ফ্রান্সিসকো’র বে অঞ্চলে ফিরে আসছেন।” --বলেন মুসা।
এ বছর প্রযুক্তি খাতে পারিশ্রমিক কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আরটিও। আর এর প্রভাব পড়েছে অস্টিন, পোর্টল্যান্ড ও ডেনভারের মতো শহরগুলোয়, যেগুলোকে মহামারী চলাকালীন প্রযুক্তি কর্মীদের জন্য উদীয়মান হাব হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর আগের দুই বছরে শহরগুলোর প্রযুক্তি কর্মীদের গড় বেতন বাড়লেও এ বছর তা কমতে দেখা গেছে। এর মধ্যে অস্টিনে বেতন কমেছে এক শতাংশ, পোর্টল্যান্ডে তিন শতাংশ ও ডেনভারে কমেছে আড়াই শতাংশ।
এ ছাড়া, প্রযুক্তি খাতে পারিশ্রমিকের তালিকায় শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে গেছে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রেমেন্টো। গত বছর নবম স্থানে থাকা শহরটির কর্মীদের এ বছরের গড় বেতন প্রায় দেড় লাখ ডলার।
এদিকে, মায়ামি ও ‘সিলিকন স্লোপ’ নামে পরিচিত ইউটা’র লেহি শহরের মতো জায়গা কখনওই লেভেলস ডট এফওয়াইআই-এর প্রযুক্তি খাতের বেতন তালিকার সেরা ১০-এ নাম লেখাতে পারেনি।
অন্যদিকে, এ বছর স্যান ফ্রান্সিসকোর জনসংখ্যাও কমতে দেখা গেছে, যা নিয়ে অঙ্গরাজ্যের সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অলাভজনক সংবাদ সাইট ‘স্যান ফ্রান্সিসকো স্ট্যান্ডার্ড’।
২০২০ ও ২০২১ সালে মহামারীতে প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা হারানোর পর গত বছর প্রায় পাঁচ হাজার নতুন বাসিন্দা এসেছেন শহরটিতে। একইভাবে, শহরটির নিকটবর্তী আলামেডা কাউন্টিতে অবস্থিত ওকল্যান্ড, বার্কলি ও ফ্রেমন্টের মতো জনপ্রিয় শহরগুলোতেও এ বছর ছয় হাজারের বেশি নতুন বাসিন্দা এসেছেন।
এ ছাড়া, পাওলো অল্টো, স্যান হোসে ও মাউন্টেইন ভিউয়ের মতো প্রযুক্তি হাব থাকা সান্তা ক্লারা কাউন্টিতেও এসেছেন সাড়ে আট হাজার নতুন বাসিন্দা।
সংবাদ সাইট বিজনেস ইনসাইডেরর প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যান ফ্রান্সিসকোর ‘টেক ক্যাপিটাল’ হিসেবে পুনরূত্থানের আরেকটি চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জেনারেটিভ এআই নিয়ে এ শিল্পে চলমান উন্মাদনা।
মুসা বলেন, এআই কোম্পানিগুলো এমন উপায়ে মেধা খোঁজার প্রতিযোগিতায় নেমেছে, যা অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানির পক্ষে এ মূহুর্তে সম্ভব নয়। এ ছাড়া, বিভিন্ন স্টার্টআপ ও নতুন উদ্যোগও প্রকৌশলীদের টানছে।
অন্যদিকে, প্রযুক্তি কর্মীদের ঈর্ষণীয় বেতন কাঠামো রাখার জন্য আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছে চ্যাটজিপিটি নির্মাতা কোম্পানি ওপেনএআই।
স্যান ফ্রান্সিসকোতে কর্মীদের ফিরে আসার ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তি যে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, গেল অক্টোবরে সে কথা বলেছেন স্টার্টআপ কোম্পানি ‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর সিইও গ্যারি ট্যানও।
“সফল হতে আপনাকে অনেক মানুষের আশপাশে থাকতে হয়।” --কানাডীয় টিভি শো মার্কেটপ্লেস-এ বলেন ট্যান।
“এখন বিষয়টি আরও বেশি সত্যি। কারণ এআই এমন এক নতুন খাত, যেখানে এখন ওপেনএআই, অ্যানথ্রোপিকের মতো সেরা কোম্পানিও নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম বানাচ্ছে। সে হিসাবে, স্যান ফ্রান্সিসকো’কে প্রযুক্তি খাতের ‘মক্কা’ বলা যায়।”