ল্যাপটপের নীতি পাল্টাতে দিল্লিতে যেভাবে ‘লবিয়িং করেছিল’ যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন কর্মকর্তারা প্রায়শই ভারতের আকস্মিক নীতি পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাদের ভাষ্য, ভারতের এ ধরনের পদক্ষেপ, একটি অনিশ্চিত ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2024, 06:39 AM
Updated : 22 March 2024, 06:39 AM

পর্দার আড়ালে ভারতের লবিয়িংয়ের ফলে ল্যাপটপের লাইসেন্সিং নীতি একেবারে পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

তবে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও)’র বিধিনিষেধ ও সম্ভাব্য নতুন নীতিমালা নয়াদিল্লি মেনে চলবে কি না, তা নিয়ে কর্মকর্তারা এখনও উদ্বিগ্ন, এমনই তথ্য উঠে এসেছে রয়টার্সের দেখা এক ইমেইল বার্তা ও মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের মন্তব্যে।

গত বছরের অগাস্টে নিজেদের আমদানিকৃত ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও সব ধরনের সার্ভার চালাতে অ্যাপল, ডেল ও এইচপি’র মতো কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। আর এ প্রক্রিয়া বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রির গতি কমিয়ে দিতে পারে– এমন আশঙ্কাও তৈরি করেছে।

তবে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নয়াদিল্লি নিজস্ব নীতি থেকে সরে এসে বলেছে, তারা শুধু পণ্য আমদানির ওপর নজর রাখবে। আর এর পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হবে এক বছর পর।

মার্কিন কর্মকর্তারা প্রায়শই ভারতের আকস্মিক নীতি পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তাদের ভাষ্য, ভারতের এ ধরনের পদক্ষেপ একটি অনিশ্চিত ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টি করে।

এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান, তারা সকল শেয়ারমালিকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন নীতি ঘোষণা করে থাকে, যেখানে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও তারা অনুপ্রাণিত করে। তবে, বিদেশের চেয়ে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রচারণাই বেশি চালাতে দেখা যায় দেশটিতে।

এ নথির কিছু ভাষা কাঠখোট্টা ছিল, যদিও জনসমক্ষে উভয় পক্ষই প্রায়শই এ ধরনের ভাষার প্রদর্শন করে থাকে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।

নীতিমালার নথি ও বিভিন্ন ইমেইল বার্তা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, ভারতের এমন পদক্ষেপে মার্কিন কর্মকর্তারা বিরক্ত হয়েছেন কারণ, কোনও নোটিশ ছাড়াই ল্যাপটপ আমদানিতে ভারতের এ ধরনের পরিবর্তন তাদের কাছে একেবারেই ‘অপ্রত্যাশিত’। এ ছাড়া, দুই দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ ও ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও ‘বড় সমস্যা’ ছিল এটি।

গবেষণা সংস্থা ‘কাউন্টারপয়েন্ট’-এর অনুমান বলছে, ভারতের বাজারে প্রতি বছর আটশ কোটি ডলারের ল্যাপটপ ও ব্যক্তিগত কম্পিউটার কেনাবেচা হয়।

তাই নীতি ঘোষণার পরপরই গত ২৬শে অগাস্ট নয়াদিল্লিতে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দেখা করেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন টাই।

ভারতের ‘অবাক করা’ এ ঘোষণা ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য কোম্পানিকে ভারতে ব্যবসা করতে দুবার ভাবতে বাধ্য করেছে,” নিজ বক্তব্যের ‘আলোচ্য বিষয়’ হিসেবে এক সংক্ষিপ্ত নথিতে উল্লেখ করেন টাই।

একই সময়, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন বাণিজ্য কূটনীতিক ট্র্যাভিস কোবারলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) সহকর্মীদের বলেছিলেন, ভারতীয় কর্মীরা স্বীকার করেছেন, হঠাৎ করে ল্যাপটপ লাইসেন্সিং নীতি চালু করা ভুল ছিল।

“ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ‘স্বীকার করেছে’, এটি তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। অন্যদিকে, এ বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানি,” লিখেছেন কোবারলি।

তবে, মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি কোবারলি। পাশাপাশি ‘ব্যক্তিগত কূটনৈতিক যোগাযোগের’ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাসও।

ভারতের নীতি ট্র্যাকিং

বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গয়াল রয়টার্সকে এক বিবৃতিতে বলেন, অগাস্টের বৈঠকের সময় ‘কিছু বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন’ টাই। আর সে সময় নয়াদিল্লির কাছে ‘ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের’ বিষয়টিও জানান। তবে, ভারত কেন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বা মার্কিন কর্মকর্তাদের ইমেইল নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

টাইয়ের নয়াদিল্লি সফরের সময় সেখানকার মার্কিন দূতাবাসের একজন প্রেস কর্মকর্তা সহকর্মীদের কাছে একটি সতর্কতামূলক ইমেইল বার্তা লিখেছিলেন, যেখানে উল্লেখ ছিল, মার্কিন কর্মকর্তারা কোন বিষয়গুলো নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে পারবেন। আর একে ‘নয়াদিল্লি কতোটা স্পর্শকাতর হতে পারে তার আরেকটি লক্ষণ’ হিসেবে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।

ল্যাপটপ নীতি নিয়ে মার্কিন সরকারের অবস্থান, “ভারতীয় সরকারের এমন একটি বাণিজ্যিক নীতি প্রণয়ন করার অধিকার ও দায়িত্ব আছে, যা দেশের জনগণের প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত”, উল্লেখ রয়েছে ইমেইল বার্তায়।

আর এ নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টও।