‘নজরদারিবান্ধব’ আইনমুখী যুক্তরাজ্য, আপত্তি সকল মেসেজিং অ্যাপের

নতুন আইনের প্রস্তুতি চলছে যুক্তরাজ্যে। এর ফলে সরকারি সংস্থা যে কোনো চ্যাটিং অপারেটরকে প্রয়োজনে যোগাযোগ মনিটর করার কথা বলতে পারবে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2023, 01:04 PM
Updated : 19 April 2023, 01:04 PM

যুক্তরাজ্যের সরকারকে ‘অনলাইন সেইফটি বিল (ওএসবি)’ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল’সহ বেশ কিছু মেসেজিং সেবা।

নতুন আইনের প্রস্তুতি চলছে যুক্তরাজ্যে। এর ফলে সরকারি সংস্থা যে কোনো চ্যাটিং অপারেটরকে প্রয়োজনে যোগাযোগ মনিটর করার কথা বলতে পারবে। 

মেসেজিং সোদাতাদের শঙ্কা, নতুন এই আইন তাদের ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন’ ব্যবস্থার ভিত্তি দূর্বল করে দিতে পারে। কারণ, প্রেরক আর প্রাপক ছাড়া অন্য কারো কোনো বার্তা পড়ার সুযোগটি বন্ধ করে দেয় এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন, আর নতুন আইনটি এর বিরুদ্ধেই দাঁড়াবে।

নতুন আইনের পেছনে যুক্তি হিসাবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা অনলাইনে শিশু নিপীড়নের বিভিন্ন ছবি সরানোর কথা বলছেন।

দেশটির সরকার বলছে, এই আইনে প্রাইভেসি ও শিশু সুরক্ষা দুটো বিষয়ই রাখা সম্ভব। “আমরা ক্ষমতাবান এনক্রিপশন ব্যবস্থা সমর্থন করি।” --বলেন এক সরকারী মুখপাত্র।

“তবে এটা জননিরাপত্তার উর্ধ্বে নয়।”

“বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে যাতে তারা নিজেদের ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নিশ্চিত করতে পারে যে, তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে শিশু নিপীড়নের মতো ঘটনা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি না পায়।”

“অনলাইন সুরক্ষা আইন কোনোভাবেই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনে নিষেধাজ্ঞা দেয় না বা এই ব্যবস্থা দুর্বল করতে ভিন্ন পরিষেবারও প্রয়োজনীয়তা নেই।”

‘গণ নজরদারি’

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক খোলা বার্তায় বিভিন্ন ‘এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপের’ অপারেটররা এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

“এনক্রিপশন দুর্বল করে ফেলা, প্রাইভেসি’র ভিত্তি দূর্বল করে দেওয়া ও মানুষের ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবস্থায় গণ নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপায় হতে পারে না।”

ওই খোলা চিঠিতে যাদের স্বাক্ষর রয়েছে, তারা হচ্ছেন-

  • সফটওয়্যার কোম্পানি ‘এলিমেন্ট’-এর প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ হজসন।

  • অলাভজনক সংস্থা ‘অক্সেন প্রাইভেসি টেক ফাউন্ডেশন অ্যান্ড সেশন’-এর পরিচালক অ্যালেক্স লিনটন।

  • সিগন্যাল অ্যাপের প্রেসিডেন্ট মেরেডিথ হুইটেকার।

  • মেসেজিং অ্যাপ ‘থ্রিমা’র প্রধান নির্বাহী মার্টিন ব্ল্যাটার।

  • ভাইবার অ্যাপের প্রধান নির্বাহী অফির ইয়াল।

  • মেটার হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান উইল ক্যাথকার্ট।

  • মেসেজিং অ্যাপ ‘ওয়্যার’-এর ‘চিফ টেকনিকাল অফিসার’ অ্যালেন ডুরিচ।

চিঠিতে বলা হয়, নিজের বর্তমান অবস্থায় ওএসবি বিভিন্ন ব্যক্তিগত বার্তার ‘নিয়মিত, সাধারণ ও নির্বিচার নজরদারির’ পথ খুলে দেয়।

এই বিলে বিভিন্ন দেশের গণবিরোধী সরকারকে উৎসাহিত করার ঝুঁকি রয়েছে, যারা এই আইন নকল করে খসড়া তৈরির চেষ্টা চালাতে পারে।

যুক্তরাজ্যের সরকার বলছে, ‘ই২ইই’র প্রাইভেসি নিয়ে কাটাছেড়া না করেই বার্তা স্ক্যান করার প্রযুক্তিগত উপায় পাওয়া যেতে পারে। তবে সত্য হলো, এটা সম্ভব নয়।

এই প্রস্তাবনাকে ‘প্রাইভেসির দর্শনীয় লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এলিমেন্টের প্রধান নির্বাহী হডসন। আর একে সবার বেডরুমে সিসিটিভি ক্যামেরা যুক্ত করার সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি।

হোয়াটসঅ্যাপ প্রধান ক্যাথকার্ট বলেন, এনক্রিপ্টেড মেসেজিং ব্যবস্থার প্রাইভেসি দুর্বল করে ফেলার চেয়ে বরং অ্যাপটি যুক্তরাজ্যে ব্লক করে দেওয়া উচিৎ।

সিগনাল অ্যাপের প্রেসিডেন্ট হুইটটেকারও একই কথা বলেন। তার ভাষ্যমতে, এনক্রিপশন ব্যবস্থা ভিত্তি দুর্বল করলে অ্যাপটি ‘নিশ্চিতভাবেই, শতভাগ ওয়াকআউট করবে’।

সুইস ভিত্তিক অ্যাপ থ্রিমা বিবিসি নিউজকে বলেছে, এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ‘যেকোনো উপায়ে বা আকারে’ দুর্বল করার ‘প্রশ্নই ওঠে না’।

‘সেবায় অস্বীকৃতি’

প্রস্তাবিত আইন মেনে চলার বিষয়ে নিজেদের অনীহার কথা বিবিসি নিউজকে বলেছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি।

ইমেইল পরিষেবায় এই বিষয়টি ছাড় দেওয়া হলেও বিভিন্ন বিপজ্জনক ফিচারের জন্য পরিচিতি পাওয়া ইউরোপ ভিত্তিক ‘এনক্রিপ্টেড ইমেইল’ সেবা প্রোটন এই আইনের আওতায় আসতে পারে। 

কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ডি ইয়েন বলেন, শেষ উপায় হিসেবে আইনটি সংশোধন ছাড়াই কার্যকর হলে তারা যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যেতে পারে। ‘ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি রক্ষার ওপর ভিত্তি করে এমন এক পরিষেবা পরিচালনায়’ সক্ষম না হওয়াকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।