এই ‘হেভি টুইটার’ ব্যক্তিরা মাসিক নিয়মিত ব্যবহারকারীর ১০ শতাংশেরও কম। তবে, এদের টুইট থেকেই ৯০ শতাংশ টুইটের সূত্রপাত হয় এবং কোম্পানির আয়ের অর্ধেক আসে।
Published : 26 Oct 2022, 07:57 PM
সবচেয়ে সক্রিয় ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে টুইটারকে। কোম্পানির নিজস্ব গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, প্ল্যাটফর্মে আগের মতো সক্রিয় নন ‘হেভি হিটাররা’।
টুইটারে নিজস্ব গবেষণার বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কোভিড মহামারীর শুরু থেকেই সবচেয়ে সক্রিয় ব্যবহারকারীদের উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটিতে।
এই ‘হেভি টুইটার’ ব্যক্তিদের সংখ্যা প্ল্যাটফর্মটির মাসিক নিয়মিত ব্যবহারকারীদের ১০ শতাংশেরও কম বলে উঠে এসেছে টুইটারের নিজস্ব গবেষণাতে। সপ্তাহে অন্তত ছয় দিন টুইটারে লগইন করেন এবং সপ্তাহে তিন থেকে চারবার টুইট করেন এমন ব্যবহারকারীদের ‘হেভি হিটার’ বা ‘হেভি টুইটার’ হিসেবে চিহ্নিত করছে প্ল্যাটফর্মটি।
ওই ‘হেভি হিটারদের’ টুইট থেকেই টুইটারের ৯০ শতাংশ টুইটের সূত্রপাত হয় এবং বিশ্ববাজার থেকে কোম্পানির আয়ের অর্ধেক আসে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্ল্যাটফর্মে ইংরেজি ভাষার ব্যবহারকারীদের আচরণেও পরিবর্তন চিহ্নিত করেছে টুইটার। আর এ পরিবর্তনগুলো বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য প্ল্যাটফর্মটিকে কম আকর্ষণীয় করে তুলছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে সক্রিয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে এখন ক্রিপ্টো মুদ্রা আর ‘নট সেইফ ফর ওয়ার্ক (এনএসএফডব্লিউ)’ কনটেন্ট নিয়ে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে রয়টার্স; নগ্নতা এবং পর্নোগ্রাফি আছে এনএসএফডব্লিউ কনটেন্টের তালিকায়।
একইসঙ্গে প্রতিদিনকার সংবাদ, খেলাধুলা এবং বিনোদনকেন্দ্রীক কনটেন্টের প্রতি ব্যবহারকারীদের আগ্রহ কমছে। অথচ এ ধরনের বিষয়কেন্দ্রীক কনটেন্টের কারণেই সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজের অবস্থান গড়ে নিতে পেরেছিল টুইটার। বিজ্ঞাপনদাতারাও এ ধরনের কনটেন্টে বিজ্ঞাপন জুড়ে দিতে আগ্রহী; কিন্তু প্ল্যাটফর্মটির ব্যবহারকারীদের আগ্রহ অন্যদিকে।
সর্বশেষ প্রান্তিকে বিশ্বের অন্য যে কোনো অঞ্চলের বাজারের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকেই সবচেয়ে বেশি কামাই করেছে টুইটার। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন এমন ভোক্তাদের জন্যই প্রচার করা হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত দুই বছর ধরে ‘হেভি টুইটাররা’ কোন কোন বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন, কোন অ্যাকাউন্টগুলো ফলো করছেন এবং ব্যবহারকারীদের সংখ্যায় কী পরিবর্তন এসেছে তা পর্যবেক্ষণ করেছে টুইটার কর্তৃপক্ষ।
সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু প্রবণতা নজরে আসায় টুইটার গবেষণায় আগ্রহী হয়েছিল বলে নিজস্ব প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কোম্পানিটি। সার্বিকভাবে ব্যবসা বাড়লেও প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে সক্রিয় ব্যবহারকারীদের উপস্থিতি কেন কমছে তা বুঝতে আগ্রহী ছিল টুইটার।
কিন্তু, সক্রিয় ব্যবহারকারীরা কেন প্ল্যাটফর্মে সময় কম দিচ্ছেন সে প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি গবেষণা প্রতিবেদনে।
এ প্রসঙ্গে টুইটারের মন্তব্য জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। কোম্পানির এক মুখপাত্র বার্তাসংস্থাটিকে বলেছেন, “আমরা নানা ট্রেন্ড নিয়ে নিয়মিত গবেষণা চালাই, বহির্বিশ্বের যা ঘটছে তার ভিত্তিতেই এ প্রথা তৈরি হয়েছে।”
“সার্বিকভাবে আমাদের গ্রাহকসংখ্যা বাড়ছে এবং ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যা ছিল ২৩ কোটি ৮০ লাখ এমডিএইউ।”
এক্ষেত্রে ‘মনেটাইজেবল ডেইলি অ্যাক্টিভ ইউজার (এমডিএইউ)’ বা যেসব নিয়মিত ব্যবহারকারীর কর্মকাণ্ড থেকে অর্থ কামাইয়ের সুযোগ আছে তাদের কথাই বলেছেন ওই মুখপাত্র।
অন্যদিকে, মালিকানা হাতবদলের অপেক্ষায় আছে টুইটার। আদালতের নির্দেশে চার হাজার চারশ কোটি ডলারে টুইটার অধিগ্রহণের জন্য ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় পেয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক।
এপ্রিল মাসে শেয়ার প্রতি ৫৪ ডলার ২০ সেন্ট দাম দিয়ে সকল শেয়ার কিনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমঝোতা চুক্তি করলেও পরবর্তীতে সেই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে মামলার মুখে পড়েছেন মাস্ক।
মামলার বিচার কাজ শুরু হওয়ার আগে আবার মত পাল্টান তিনি। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী পুরো দাম দিয়েই টুইটার কিনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও মাস্কের কথায় ভরসা পায়নি প্ল্যাটফর্মটি।
সর্বশেষ, মাস্কের আবেদনের মুখে মামলার বিচার কাজ স্থগিত করে বিশ্বের শীর্ষ ধনীকে অধিগ্রহণের লেনদেন সম্পন্ন করার সময় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যারের আদালত।