Published : 22 Nov 2022, 04:10 PM
মাস্কের টুইটার অধিগ্রহনের পর থেকেই মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম মাস্টোডন ও কাউন্টারসোশালের মতো অন্যান্য সামাজিক অ্যাপে পাড়ি জমাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। এরইমধ্যে টুইটারে চলমান অস্থিরতার কারণেই সম্ভবত ‘হাইভ’ নামের আরেক সামাজিক অ্যাপে সাইন-আপ সংখ্যা বেড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।
মঙ্গলবার মার্কিন অ্যাপ স্টোরে শীর্ষ ২০ অ্যাপের তালিকায় উঠে এসেছে এটি।
২০১৯ সালে অ্যাপটি তৈরি করেন সে সময়ের ২২ বছর বয়সী কাসান্ড্রা পপ। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ বলছে, টুইটারের সরাসরি নকল নয় এটি। বরং দেখে মনে হয় অনুর্ধ ৩০ বছর বয়সীরা, যারা জেনারেশন জি (Gen Z) নামে পরিচিত, তাদের রুচি মাথায় রেখেই নকশা করা হয়েছে এটি। ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এমনকি মাইস্পেস’সহ বেশ কিছু সামাজিক নেটওয়ার্কের বিভিন্ন ফিচার এসে জুটেছে এই অ্যাপটিতে। ছবি আর টেক্সটের পাশাপাশি এটি প্রোফাইলে মিউজিক যোগ করার সুবিধা দেয় ব্যবহারকারীকে।
মূল ফিডের পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গাড়ি, সঙ্গীত, ফ্যাশন, পোষা প্রাণী, কারুশিল্প, বই, ভ্রমণ, গেইমিং, শিল্প, খাদ্যে - এমন অসংখ্য বিষয় ভিত্তিক ‘কমিউনিটি’ খুঁজে নিতে পারবেন হাইভে অ্যাকাউন্ট খোলার পর।
অন্যান্য সামাজিক নেটওয়ার্কের মতোই ব্যবহারকারী এতে শেয়ার করা কনটেন্ট লাইক, কমেন্ট ও রিপোস্টের পাশাপাশি হ্যাশট্যাগও যোগ করতে পারেন।
প্রতিবেদন বলছে, এর কিছু ফিচার হয়তো সাবেক টুইটার ব্যবহারকারীদের টানবে, বিশেষ করে যারা নতুন ঠিকানা খুঁজছেন।
কারণ, বিভিন্ন নেভিগেশন অপশনের সহজ ও পরিচিত সংগ্রহ আছে এতে। — এর মধ্যে আছে মূল টাইমলাইন বা ফিড দেখার ট্যাব, ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে প্রবেশ ও নোটিফিকেশনের জন্য দুটি আলাদা ট্যাব ছাড়াও সামাজিক নেটওয়ার্কটিতে শেয়ার করা নানা বিষয় খুঁজে পেতে আছে ‘ডিসকভার’ নামের একটি বিভাগ। আর নতুন পোস্ট যোগ করতে আছে অ্যাপের মাঝামাঝি জায়গায় একটি বাটন।
ফেইসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ‘মিউচুয়াল ফ্রেন্ড’ ধরনের মডেল। এর বিপরীতে টুইটারের মতোই ফলোয়ারভিত্তিক মডেল ব্যবহার করে হাইভ।
বেশিরভাগ সামাজিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে হাইভের পর্থক্য হলো, ফিডে কালানুক্রমিক পারসোনালাইজেশন অ্যালগরিদম নেই এখানে।
পাশপাশি, আয় রোজগারের জন্য বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নেয় না এটি। এর পরিবর্তে, প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অতিরিক্ত ‘স্লট’ অর্থের বিনিময়ে আনলক করতে দেয় হাইভ। এর ফলে, প্রোফাইলে তুলনামূলক বেশি সংখ্যক মিউজিক রাখার সুবিধা মেলে।
অ্যাপের অ্যাপ স্টোরে দেওয়া তথ্য বলছে, বাড়তি স্লটের দাম শুরু হয় ৯৯ সেন্ট থেকে। তবে, তৃতীয় বা চতুর্থ স্লটের বেলায় এই দাম বেড়ে দাঁড়ায় এক দশমিক ৯৯ ডলারে।
মাস্কের টুইটার দখলের পর থেকেই হাইভের জনপ্রিয়তায় জোয়ার এসেছে।
অ্যাপ বিশ্লেষক কোম্পানি ‘সেন্সর টাওয়ার’-এর তথ্য অনুযায়ী, আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েডে হাইভের এযাবতকালের সর্বমোট ইনস্টল সংখ্যা সাত লাখ ৩৩ হাজার। এর মধ্যে গত ৩০ দিনেই এসেছেন দুই লাখ ১৪ হাজার ব্যবহারকারী।
সেন্সর টাওয়ার বলেছে, অ্যাপের মোট ডাউনলোডের ৮৬ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে। ফলে, হাইভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে বলে মনে হচ্ছে।
সেন্সর টাওয়ারের তথ্যের সঙ্গে অ্যাপ বিশ্লেষক ‘ডেটা ডটএআই’র অনুমানের অনেকাংশে মিল থাকলেও এতে মার্কিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি দেখাচ্ছে, প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার।
শুক্রবার থেকে নতুন ব্যবহারকারী সাইন-আপের আরেকটি উত্থান দেখেছে অ্যাপটি, যা সপ্তাহ শেষেও চলছে।
সেন্সর টাওয়ারের তথ্য বলছে, গত কয়েক দিনে (১৮ থেকে ২০ নভেম্বর) প্রায় এক লাখ ৪৪ হাজার নতুন ইনস্টল হয়েছে হাইভ অ্যাপটি। এর মধ্যে ২২ হাজার এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এই সময়ে, মার্কিন অ্যাপ স্টোরের সামগ্রিক আইফোন অ্যাপ তালিকায় ৩৩৮ নম্বর থেকে ‘লাফ দিয়ে’ মঙ্গলবার ১৭ নম্বর অ্যাপ হিসেবে অবস্থান করছে অ্যাপটি। যুক্তরাজ্যে এটি আছে ১৭ নম্বরে ও কানাডায় এর অবস্থান ২৪ নম্বর।
সেন্সর আরও বলেছে, প্রতিবেদনটি লেখার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ‘সোশাল নেটওয়ার্কিং’ ক্যাটেগরিতে তিন নম্বর অ্যাপ হিসেবে অবস্থান করছিল এটি।
হাইভের টিকটক পোস্ট অনুযায়ী, আরও ৮০ হাজার মানুষ অ্যাপটি যাচাই করতে সাইন আপ করায় সপ্তাহের শেষে ‘ক্র্যাশ’ করে এটি।
মঙ্গলবার সকালে হাইভের টুইটার অ্যাকাউন্ট জানায়, অ্যাপের সর্বমোট ব্যবহারকারী সংখ্যা ‘নয় লাখ ছুই ছুই’।
সেন্সর টাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপের ডাউনলোড কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে, যখন চার লাখ ৩৯ হাজার নতুন ইনস্টল দেখতে পায় অ্যাপটি। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এই উত্থান বাস্তবায়নের পেছনে হাত থাকতে পারে অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতার এক টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারকে ভিডিও তৈরি করতে অর্থ প্রদানের জন্য সিদ্ধান্তের। সে সময় তিনি দাবি করেন, এর ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় আড়াই লাখ নতুন ইনস্টল হয়েছে।
টেকক্রাঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল এর সামাজিক নেটওয়ার্কিং ধারণার মিশ্রণ বা মাস্টোডনে সাইন আপের তুলনায় এর ব্যবহার সহজ হওয়ার কারণে হাইভের জনপ্রিয়তা বাড়ছে তেমন হয়তো নয়।
মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চলীয় সময় বিকেল চারটায় (বাংলাদেশ সময় রাত তিনটায়) ১০ লাখ ব্যবহারকারী অতিক্রমের কথা জানান কাসান্ড্রা।