যে ২০ সিনেমায় দেখা যাবে প্রযুক্তির বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই

বিতর্ক আপাতত তোলা থাক। আপাতত দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন সময়ে মানুষকে দাঁড়াতে হয়েছিল প্রযুক্তির বিরুদ্ধে– বাস্তবে নয়, সিনেমায়।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 01:51 PM
Updated : 13 May 2023, 01:51 PM

প্রযুক্তিজগতে এখন সম্ভবত সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়, জেনারেটিভ এআই এবং এর ব্যবহারে তৈরি বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকল্প মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনবে কি-না। আরও সোজাসাপ্টা করে বললে, এরাই মানুষের জন্য বিপদ হয়ে উঠবে কি-না।

যুক্তি আছে দুই পক্ষেই। সে বিতর্ক আপাতত তোলা থাক। আপাতত দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন সময়ে মানুষকে দাঁড়াতে হয়েছিল প্রযুক্তির বিরুদ্ধে– বাস্তবে নয়, সিনেমায়।

আজ থাকছে এমন ২০টি সিনেমার কথা যেখানে মানুষকে পাওয়া যাবে প্রযুক্তির মুখোমুখি-

টার্মিনেটর ২: জাজমেন্ট ডে

পুরো টার্মিনেটর সিরিজটিই প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের লড়াইয়ের গল্প, তার মধ্যে দ্বিতীয় পর্বটি অনবদ্য হিসাবে স্থান করে নিয়েছে দর্শকদের মনে। সেখানে ভবিষ্যত একটি পৃথিবীর এমন একটা সময় দেখানো হয়েছে যেখানে ‘স্কাইনেট’ নামের একটি কাল্পনিক আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক নিজেকে অনলাইনে আপলোড করে ফেলেছে। স্কাইনেটের পাঠানো আততায়ী-রোবট ‘টার্মিনেটর’-এর সঙ্গে শুরু হয় মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এক পর্যায়ে একটি টার্মিনেটর পরাক্রমশালী স্কাইনেটের পক্ষ ছেড়ে এসে যোগ দেয় মানুষের দলে।

মেট্রোপলিস (১৯২৭)

এই ধারার প্রথম দিককার সিনেমা মেট্রোপলিস। এক্সপ্রেশনিজমের অন্যতম দিকপাল, অস্ট্রিয়ায় জন্ম নেওয়া জার্মান চলচ্চিত্রকার ফ্রিটজ ল্যাঙ, যিনি নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে পরবর্তীতে আমেরিকায় পাড়ি জমান। প্রযুক্তির অগ্রাসনের বিরুদ্ধে মানুষ সিনেমা বানানোর ধারা এসেছে এই নির্বাক সিনেমার হাত ধরেই। সম্ভবত এটিই প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সায়েন্স ফিকশন সিনেমা যার একটি দুষ্টু রোবট চরিত্রের অবয়বে অনুপ্রাণিত হয়ে স্টার ওয়্যারের বিখ্যাত রোবট চরিত্র সি-৩পি০’র গড়ন বানানো হয়েছে।

২০০১: এ স্পেস অডিসি

‘হাল ৯০০০’ স্পেসশিপ নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কম্পিউটার। একটি লাল বাতি আর একটি কর্কশ কণ্ঠস্বর এতটুকুই উন্মুক্ত তার। হটাৎ করে দুজন নভোচারী আবিষ্কার করে কম্পিউটারটি তাদের পেছনে লেগেছে। তারা যে ক্ষুদে কুঠরির মত পডটিতে আটকা, ‘হাল’ তার দরোজা খুলছে না। এরকম ছোট ছোট দৃশ্য জুড়ে দিয়ে স্ট্যানলি কুবরিক টানটান শিহরনে ভরপুর তার অমর সৃষ্টিটি নির্মাণ করেন।

ওয়্যারগেইমস (১৯৮৩)

৮০’র দশকের অন্যতম বাণিজ্যিক সিনেমা যেখানে ম্যাথিউ একটি শিশু চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যে একটি মিলিটারি প্রোগামকে ভুল করে কম্পিউটার গেইম ভেবে চালু করে দেয় যা আরেকটু হলেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিচ্ছিলো। যা ঠেকানোর উপায় হচ্ছে এই গেইম থেকে বিরত থাকা।

দ্যা মিটশেল ভার্সাস দ্যা মেশিনস (২০২১)

গত কয়েক বছরের মধ্যে নির্মিত অন্যতম চিত্তাকর্ষক অ্যানিমেটেড সিনেমা। ‘সিরি-এসকুয়ে’ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পালে পালে অত্যাধুনিক রোবট বাহিনী ছেড়ে সব মানুষদের ধরে নিয়ে পৃথিবীর দখল নিয়ে ফেলেছে। তার বিরুদ্ধে একটা সাধারণ পরিবারের রুখে দাঁড়ানোর গল্প। বলার ঢঙে কিছুটা কমেডির ধাঁচ থাকলেও যান্ত্রিকতার বিপরীতে মানবিক আবেগ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে।

অ্যাভেনজার এইজ অফ আলট্রন (২০১৫)

টনি স্টার্ক বানানো আয়রন ম্যানের স্যুট মানব জাতির জন্য অঘটন ডেকে এনেছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আলট্রন নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে ঠিক করেছে পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মানব জাতিকে নির্মূল করে দিতে হবে। এসে রুখে দাঁড়ালো অ্যাভেনজার দল। তবে প্রযুক্তিকে নেতিবাচক করে দেখানো সিনেমাটি অ্যাভেনজার সিরিজের সবচেয়ে কম জনপ্রিয় সিনেমা।

টুমরোল্যান্ড (২০১৫)

পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে কৌতুহলি বিজ্ঞানমনস্ক কিশোরীর অভিযানের গল্প, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক কালের প্রতিভাবান এক উদ্ভাবক। ‘টুমরোল্যান্ড’ বা ভবিষ্যতের এমন এক পৃথিবী যা দানবীয় যত যন্ত্র, রোবট আর চৌকস সব প্রযুক্তিতে পরিপূর্ণ। তার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে বাঁচাতে তাদের রোমাঞ্চকর এক যাত্রার গল্প। বেশ বড় বাজেটে নির্মিত ডিজনি স্টুডিওর এই কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক সিনেমাটি।

রন’স গন রং (২০২১)

একটা প্রযুক্তি কি ভুলভাল করতে পারবে না? করলে কি খুব অনর্থ হয়ে যাবে? হয়তো ততটাও খারাপ হয় না। বাবল নামের কোম্পানি তৈরি করেছে একটি ত্রুটিপূর্ণ রোবট ‘রন’, আর সেটাই সিনেমাটির মুখ্যচরিত্র। ‘রন’এর কিছু দোষত্রুটি থাকলেও বার্নির এতে কিছু যায় আসে না। হ্যাঁ রন হয়তো মাঝেমধ্যে মানুষের উপর একটু আধটু চড়াও হয়ে পড়ে বটে, তাই বলে তো সে এতটাও খারাপ না। আর তার বিপরীতে বাবল কোম্পানির কাজ কারবার মোটেও সুবিধার না।

দ্যা মেট্রিক্স (১৯৯৯)

শুধুমাত্র ‘মানুষ বনাম যন্ত্র’ ঘরানারই নয়, কল্পবিজ্ঞান ভিত্তিক সিনেমার কথা বললে সবার শুরুতেই আসে ম্যাট্রিক্সের নাম। গল্পটা সবারই জানা যন্ত্র পৃথিবীর দখল নিয়ে ফেলেছে আর মানুষকে বন্দী করে রেখেছে একটা মেকি পৃথিবীতে। মরফিয়াস আর নিও’র মত কেউ কেউ বিদ্রোহের ডাক দিয়েছে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। কিয়ানু রিভসের মত তারকার ক্যারিয়ারে শুধু মোড় ঘুড়িয়ে দেয়নি ‘বুলেট-টাইম’ এর মত পরম ধীরগতির দৃশ্য এনে সিনেমাটোগ্রাফির ইতিহাস বদলে দিয়েছে মেট্রিক্স।

এক্স মেশিনা (২০১৪)

একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট আর মানুষের মধ্যে যদি তফাত করা না যায়? এমন টানটান উত্তেজনাপূর্ণ জটিল পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলে এক্স মেশিনা সিনেমার প্রেক্ষাপট। অস্কার আইস্যাক অভিনয় করেছেন একজন প্রতিভাবান উদ্ভাবকের চরিত্রে, আর তার বানানো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চরিত্রে ছিলেন অ্যালিসিয়া ভিকান্দার। এআই রোবটি আর মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার তুলনা করার জন্য কোম্পানিতে কর্মরত একজন কর্মীকে আনা হয় এক্সপেরিমেন্ট ফ্যাসিলিটিতে। শ্বাসরুদ্ধকর রোমাঞ্চকর প্রতিটি দৃশ্যে অসাধারণ এক নির্মাণ।

আই, রোবট (২০০৪)

আইস্যাক আসিমভ রোবট শাস্ত্রের তিনটি মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করেন। তাকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে আই, রোবট সিনেমাটি। সঙ্গা অনুযায়ী তো রোবটের মানুষকে আঘাত করার কথা, কিন্তু একটি রোবট খুন করে ফেলেছে একজন মানুষকে। সেই রহস্যের জট ছড়াতে নামেন উইল স্মিথ।

মেগ্যান (২০২২)

২০২৩ এ বছরই মুক্তি পাওয়া সিনেমাটির শুরুতে যে কেউ ধরে নিতে পারেন এটি ভৌতিক ধাঁচের। নিজস্ব চেতনা রয়েছে এমন একটি পুতুলের গল্প যার মধ্যে আবার কিছুটা রসবোধ ও আছে। এম৩গ্যান নামের বুদ্ধিমত্তা আছে এমন একটি পুতুল বানিয়েছেন একজন উদ্ভাবক। উদ্দেশ্য মানুষকে সঙ্গ দেবে, প্রয়োজনে নাচবে, প্রয়োজনে মারামারি পর্যন্ত করবে।

চাইল্ড’স প্লে (২০১৯)

মূল চাইল্ড’স প্লে একটি ভৌতিক সিনেমা যেখানে একটি খুনীর আত্মা আশ্রয় নেয় একটি পুতুলের ভেতর। একই নামে ২০১৯ সালে বানানো সিনেমাটিতে এবার পুতুলটি একটি উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন রোবট, যে চাইলেই ইন্টারনেট থেকে ইচ্ছা মতো তথ্য লুফে নিতে পারে। এই ক্ষমতা তাকে করেছে আরো দুর্ধষ, যে করে বেড়ায় তাবত অশুভ কাজকারবার।

ট্রন (১৯৮২)

আজকের দিনে ট্রনকে মনে হবে আদ্দিকালের সিনেমা, তবে দেখতে বসলে মনে হবে আবেদন ফুরোয়নি এখনো। সিনেমায় অভিনেতা জেফ ব্রিজেস একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। শেষ পর্যন্ত যাকে তার নিজের বানানো প্রযুক্তিকে ধ্বংস করার জন্য সেটার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। অনেক দেরি করে এর পরবর্তী পর্ব বের হলেও মূল ট্রন একটি ধ্রুপদী সিনেমা।

ব্লেড রানার (১৯৮২)

চিন্তার নতুন রীতি তৈরি করে চিরায়ত শিল্পের কাতারে নিজেদের স্থান করে, সময় কে ছাপিয়ে গেছে এমন একটি সিনেমা ব্লেড রানার। কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক সিনেমায় সম্ভববত সবচেয়ে বেশি আলোচিত হ্যারিসন ফোর্ড অভিনীত এই অমর কীর্তিটি। সেখানে এমন একটি চরিত্রে অভিনয় যা হয়তো মানুষ, হয়তো মানুষ নয় মানুষের মত দেখতে একটি যন্ত্র? যার কাজ হচ্ছে অবিকল দেখতে কিন্তু অবাধ্য এমন প্রতিমূর্তিদের বধ করা। নৈরাজ্যে ভরপুর এমন প্রেক্ষাপট যা দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।

দ্যা নেট (১৯৯৫)

‘দ্যা নেট’ এমন একটি দৃষ্টান্তমূলক সিনেমা যা আগাগোড়া বলে গেছে “ইন্টারনেট ভয়াবহ!” জনসাধারণের হাতের নাগালে ইন্টারনেট আসার আগেই স্যান্ড্রা বুলক অভিনীত এই চলচ্চিত্র সময়ের আগেই দূরদর্শী এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এতে দেখানো হয়েছে মানুষ ইন্টারনেট হাতে পেয়ে আবলতাবল সব কাজ করে যাচ্ছে।

জেক্সি (২০১৯)

জেক্সি নতুন ফোনের সঙ্গে আসা একটি চ্যাটবট, ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট, চিয়ারলিডার। যার সাহায্যে ফিলের জীবনে নতুন নতুন পারিবর্তন আসতে থাকে। কিন্তু যখনই সে তার ফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জেক্সিকে পাত্তা দেওয়া কমিয়ে দেয়, জেক্সি তাকে তাড়া করে তার জীবন দুর্বিষহ করে দিতে থাকে। ডার্ক কমেডি ধারার এই সিনেমাটি প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে খুবই মৌলিক অস্তিত্বগত কিছু প্রশ্ন সামনে এনেছে। আমাদের জীবন কে আরো গতিশীল করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানো যাবে, কিন্তু কতটুকু?

স্টেলথ (২০০৫)

জেইমি ফক্স ২০০৪ সালে ‘কোলেটারাল’ ও ‘রে’ এর মত ছবিতে অভিনয় করে অস্কার জেতেন। এর পরের বছর সাড়ে ১৩ কোটি ডলার বাজেটে নির্মিত সিনেমা স্টেলথ আয় করে মাত্র সাত দশমিক নয় কোটি ডলার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর একটি সয়ংক্রিয় যুদ্ধ বিমানকে গল্প এগিয়ে গেছে।

মাইনরিটি রিপোর্ট (২০০২)

ভবিষ্যতে, অন্তত ভবিষ্যতের পৃথিবীতে প্রযুক্তি এতদূর এগিয়ে গেছে যে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আগেই তাকে ঠেকানো যাচ্ছে। তাও ফাঁক-ফোকর থেকেই যাচ্ছে। স্টিভেন স্পিলবার্গের বানানো এই সিনেমায় টম ক্রুজ কে দেখানো হয়েছে সামনে ঘটবে এমন একটি খুনের দায়ে অভিযুক্ত হিসাবে, নিজেক নির্দোষ প্রমাণ করতে হলে তার খুঁজে বের করতে হবে একটি পরাক্রমশালী কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সিস্টেমের গলদ।

লুপার (২০১২)

কল্প-বিজ্ঞানে টাইম ট্রাভেল অহরহই ঘটে। লুপার সিনেমায় একজন ঘটেছে বিদ্ঘুটে কাণ্ড। লুপাররা গুপ্তঘাতক ভবিষ্যত থেকে ধরে আনা মানুষদের উচ্চ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খুন করে। কিন্তু ভবিষ্যত থেকে যদি তাকেই ধরে আনা হয়, তার বন্ধুকের নলের সামনে এনে দাঁড় করানো তারই ভবিষ্যতের প্রতিরূপকে।