আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এআই দেখাচ্ছে ‘বিপ্লবের সম্ভাবনা’

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাংশ আঘাত হানা ‘হারিকেন লি’ সম্পর্কে নয় দিন আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল এটি, যেখানে প্রচলিত ব্যবস্থা এটি শনাক্ত করেছে ছয় দিন আগে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2023, 10:51 AM
Updated : 15 Nov 2023, 10:51 AM

আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা আছে নতুন এক যুগান্তকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার --এমনই দাবি নির্মাতাদের।

নতুন এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক গুগল মালিকানাধীন এআই কোম্পানি ‘ডিপমাইন্ড’। কোম্পানি বলেছে, এর সহায়তায় কেবল এক মিনিটেই ১০ দিনের আবহাওয়ার ‘অত্যন্ত নির্ভুল’ পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব।

ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ‘গ্রাফকাস্ট’ নামের ব্যবস্থায় তৈরি করা এ পূর্বাভাস কেবল নির্ভুল নয় বরং কার্যকরও। এর মানে, আগের চেয়ে কম তথ্য ব্যবহার করেও দ্রুত ফলাফল বের করা সম্ভব।

 সাইক্লোন, বন্যা ও দাবদাহের মতো প্রতিকূল আবহাওয়া শনাক্ত করে আগেই সতর্কবার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে এই প্রযুক্তি। গুগল বলছে, এর মাধ্যমে মানুষ আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি এটি মানুষের জীবন বাঁচানোর বেলাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বর্তমানে ‘নিউমেরিকাল ওয়েদার প্রেডিকশন’ নামের এক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়, যেখানে পদার্থবিজ্ঞানের সমীকরণ ও কম্পিউটারের অ্যালগরিদমকে সুপার কম্পিউটারে সমন্বয় করা হয়। এর জন্য বিশাল কম্পিউটিং সক্ষমতা থাকার পাশাপাশি আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া ব্যক্তিদের দক্ষতাও প্রয়োজন।

নতুন এই ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়েছে ডিপ লার্নিং প্রযুক্তি, যেখানে শুধু পদার্থবিদ্যার সমীকরণের ওপর নির্ভর না করে বরং পৃথিবীর আবহাওয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে বদলে যায়, সেখান থেকেও ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এই ধরনের মডেল তৈরি করা কিছুটা জটিল। কারণ, এর মধ্যে কয়েক দশকের আবহাওয়া ডেটার প্রশিক্ষণ দিতে হয়। তবে, এখন এর বাস্তব রূপ চলে আসায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের পরিমাণ অনেক কমে আসবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

১০ দিনের পূর্বাভাস পেতে এখন কোনো মেশিনে এক মিনিট সময় দিলেই চলবে, যে প্রক্রিয়ার জন্য এক সময় কয়েক ঘণ্টা একটি সুপারকম্পিউটারের ওপর নির্ভর করতে হতো।

সম্প্রতি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এর নির্মাতারা লেখেন, ৯০ শতাংশ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রচলিত মানদণ্ডের চেয়ে নতুন ব্যবস্থা বেশি নির্ভুল।

এ ছাড়া, কোনো প্রশিক্ষণ না নিয়েই প্রতিকূল আবহাওয়া শনাক্ত করেছে এই ব্যবস্থা। উদাহরণ হিসেবে, সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাংশ আঘাত হানা ‘হারিকেন লি’ সম্পর্কে নয় দিন আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল এটি, যেখানে প্রচলিত ব্যবস্থা এটি শনাক্ত করেছে ছয় দিন আগে।

ডিপমাইন্ড বলেছে, জলবায়ু সংকটের সময় গ্রাফকাস্টের দাবদাহবিষয়ক অনুমান বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে। আর এটি বিভিন্ন এমন জায়গার তাপমাত্রা অনুমান করতে পারে, যেগুলোতে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে, দাবদাহ আসার আগেই সম্ভাব্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ মিলবে।

এ ছাড়া, অন্যরা যেন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন, তার জন্য একে উন্মুক্ত করে দিতে পারে ডিপমাইন্ড। কোম্পানি বলছে, এটি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করা নতুন টুল ও গবেষণার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।