ধসে পড়ল ক্রিপ্টোভিত্তিক ব্যাংক সিলভারগেইট

“আজ আমরা দেখছি, যখন কোনো ব্যাংক ক্রিপ্টোমুদ্রার মতো ঝুঁকিপূর্ণ, অস্থিতিশীল খাতে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়, তখন কী ঘটতে পারে।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 12:23 PM
Updated : 9 March 2023, 12:23 PM

ধসের মুখে পড়েছে ক্রিপ্টো জগতের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সিলভারগেইট ব্যাংক।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি গ্রাহকের জমা দেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার ঘোষণার কথাও উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদনে।

ব্যাংকের মালিক কোম্পানি সিলভারগেইট ক্যাপিটাল কর্পোরেশন বলেছে, তারা ‘সাম্প্রতিক শিল্প ও নিয়ন্ত্রক উন্নয়নের আলোকে’ নিজেদের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নিজের হাই প্রোফাইল গ্রাহক এফটিএক্স ও জেনেসিসের মতো কোম্পানিটি নিজেও যে ধুঁকছে, তা বেশ কিছু সময় ধরেই পরিষ্কার হচ্ছিল। জানুয়ারিতে প্রকাশিত কোম্পানির আর্থিক হিসাব বলছে, কেবল এক প্রান্তিকেই গ্রাহকরা আট হাজার একশ কোটি ডলার তুলে ফেলায় কোম্পানির শত কোটি ডলারের বেশি লোকসান হয়েছে।

পরবর্তীতে পয়লা মার্চ আদালতে জমা দেওয়া কোম্পানির নথিতে উল্লেখ করা হয়, তাদের আর্থিক পরিস্থিতি প্রান্তিকের হিসাবের প্রতিবেদনের চেয়েও বাজে ফলাফল দেখাচ্ছে।

সিলভারগেইটের অনুপস্থিতিতে ক্রিপ্টো জগতের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে বেশ কিছু উদ্বেগের জায়গা আছে। বিশেষ করে, যখন বিভিন্ন কোম্পানি ক্রিপ্টোমুদ্রাকে নগদ অর্থে রূপান্তর করতে চাইবে।

এর মধ্যে অন্যতম উদ্বেগের জায়গা হলো বিভিন্ন ক্রিপ্টো কোম্পানি হয়তো ব্যাংকিং প্রয়োজনীয়তার জন্য তুলনামূলক কম নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর শরণাপন্ন হবে। ফলে, এই খাতে সম্পৃক্ত সকল গ্রাহকই ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। সহজ ভাষায় বললে, যদি তাদের নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক কোনো ব্যাংক না থাকে, তবে তাদের বাধ্য হয়ে এমন কোনো ব্যাংক খুঁজতে হবে, যারা এসব নিয়মের তোয়াক্কা করে না।

নিজেদের পরবর্তী ধাপ হিসেবে সুশৃঙ্খল ও প্রযোজ্য নিয়ন্ত্রণমূলক প্রক্রিয়ায় নিজেদের হিসাব মিটিয়ে দিচ্ছে ব্যাংকটি। এ ছাড়া, নিজস্ব মালিকানাধীন প্রযুক্তি ও ট্যাক্স সম্পদ’সহ এইসব দাবি-দাওয়ার সমাধান ও এর সম্পদের অবশিষ্ট মূল্য কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, সেটিও বিবেচনা করে দেখছে বলে উঠে এসেছে ভার্জের প্রতিবেদনে।

আর কোম্পানিটি নিজেদের ‘সিলভারগেইট এক্সচেঞ্জ নেটওয়ার্ক’ও বন্ধ করে দিচ্ছে, যেটির মাধ্যমে এই মাসের শুরুতে কয়েনবেইজ, জেমিনাই ও ক্রাকেন নিজেদের মধ্যে ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে অর্থ সরিয়েছিল।

এই সকল ঘটনার মধ্যেই কয়েনবেইজ, ক্রিপ্টো ডটকম ও পাক্সোসের মতো কোম্পানিগুলো ব্যাংকটি থেকে সরে আসতে শুরু করে। এমনকি এই সুযোগ নিয়েছে ক্রিপ্টোমুদ্রা টেথারও।

ফলে, নিজেদের মিত্র সংখ্যা কমে আসার পাশাপাশি এফটিএক্স ধসে তাদের ভূমিকা নিয়েও মার্কিন সরকারের তদন্তের মুখে পড়েছে কোম্পানিটি।

ভার্জ বলছে, সিলভারগেইটের এই ধস প্রায় নিশ্চিতভাবেই নিয়ন্ত্রকদের তদন্তের মুখে পড়বে। বিশেষ করে যারা প্রচলিত আর্থিক খাতে ক্রিপ্টোর সম্পৃক্ততা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

“আজ আমরা দেখছি, যখন কোনো ব্যাংক ক্রিপ্টোমুদ্রার মতো ঝুঁকিপূর্ণ, অস্থিতিশীল খাতে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়, তখন কী ঘটতে পারে।” --বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সিনেট ব্যাংকিং, হাউজিং অ্যান্ড আরবান অ্যাফেয়ার্স কমিটি’র চেয়ারপার্সন সিনেটর শেরড ব্রাউন।

“আমি এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম যে যখন বিভিন্ন ব্যাংক ক্রিপ্টোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে, তখন পুরো আর্থিক ব্যবস্থায় ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। আর করদাতা ও গ্রাহকরা এর চড়া মূল্য দেন।”