বর্তমানে প্রত্যেক মানুষের সকল প্রকাশভঙ্গি এখন কপিরাইটের আওতায় চলে আসে, যার মধ্যে রয়েছে ব্লগ পোস্ট, ছবি, ফোরাম পোস্ট, সফটওয়্যার কোড, ও সরকারি নথিসহ বিভিন্ন কনটেন্ট।
Published : 09 Jan 2024, 03:45 PM
কপিরাইটযুক্ত কনটেন্ট বিনামূল্যে ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে ‘অনুরোধ করেছে’ ওপেনএআই।
এ ধরনের তথ্য ব্যবহার না করে তাদের এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ‘অসম্ভব’ বলেও এক কমিটির কাছে উল্লেখ করেছে জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা কোম্পানিটি।
“কারণ বর্তমানে প্রত্যেক মানুষের সকল প্রকাশভঙ্গি এখন কপিরাইটের আওতায় আসে, যার মধ্যে রয়েছে ব্লগ পোস্ট, ছবি, ফোরাম পোস্ট, সফটওয়্যার কোড, ও সরকারি নথিসহ আরও বিভিন্ন কনটেন্ট। তাই, কপিরাইটযুক্ত কনটেন্ট ব্যবহার না করে বর্তমানের শীর্ষস্থানীয় এআই মডেলগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে না।” – ওপেনএআই-এর এমন বক্তব্য উঠে এসেঠে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে।
“এক শতাব্দীরও আগে তৈরি করা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত বই ও ছবির মধ্যে প্রশিক্ষণের তথ্য সীমিত রাখা একটি আকর্ষণীয় পরীক্ষা হতে পারে, তবে এর মাধ্যমে এমন এআই ব্যবস্থা তৈরি করা যাবে না যা বর্তমান জনসাধারনের চাহিদা পূরণ করে।” – ব্রিটিশ সংসদের ‘হাউজ অফ লর্ডস কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ডিজিটাল কমিটি’তে জমা দেওয়া নথিতে বলেছে কোম্পানিটি।
ওপেন এআই-এর চ্যাটজিপিটি এআই টুলটি ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রকাশের পর থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এর ‘ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ ব্যবহারকারীর বিভিন্ন প্রশ্ন বুঝে মানুষের মতো উত্তর দিতে পারে বলে অবস্থান তৈরি করেছে।
এআই মডেলটি স্বল্প সময়ের মধ্যেই বড় কয়েকটি কীর্তি দেখিয়ে দিয়েছে, যার মধ্য রয়েছে গবেষণা পত্রের সারসংক্ষেপ তৈরি করা, যৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, এমনকি বাণিজ্য বা মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যাওয়ার মতো বিষয়।
তবে, চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পর থেকে, নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো বেশ কয়েকটি প্রকাশনার পাশাপাশি মার্কিন কৌতুক অভিনয় শিল্পী সারাহ সিল্ভারম্যান, কানাডীয় কবি মারগারেট অ্যাটউড, জনপ্রিয় মার্কিন ঔপন্যাসিক জন গ্রিশাম, মার্কিন ঔপন্যাসিক জর্জ আরআর মার্টিনের মতো বিভিন্ন তারকা ও লেখক এআই মডেলের প্রশিক্ষণের জন্য অনুমতি ছাড়াই তাদের কনটেন্ট ব্যবহার করার জন্য ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের অভিযোগ, তাদের লাখ লাখ প্রবন্ধ চ্যাটজিপিটিকে প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে সংবাদপত্রটির মেধাভিত্তিক সম্পদের ‘ব্যাপক কপিরাইট লঙ্ঘন, বাণিজ্যিক শোষণ এবং অপব্যবহার’ হয়েছে। পাশাপাশি, এআই মডেলটি এখন তথ্যের উৎস হিসাবে সংবাদপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বলে দাবি তাদের।
“যদি মাইক্রোসফট ও ওপেনএআই বাণ্যিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমাদের কনটেন্ট ব্যবহার করে থাকে তবে আইন অনুযায়ী তাদের অনুমতি নিতে হবে। তারা সেটা করেনি।” - বলেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এ ধরনের কপিরাইটযুক্ত কনটেন্ট ছাড়া ওপেনএআই হবে একেবারেই ভিন্ন একটি বাণ্যিজ্যিক পণ্য – এমনটি বলেছেন মার্কিন লেখকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘অথর্স গিল্ড’ ও আরও ১৭ জন লেখক মিলে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে করা ক্লাস অ্যাকশন মামলার আইনজীবী র্যাচেল জামেন।
“অভিযুক্তরা লেখদের কনটেন্ট অনুলিপি করার সিদ্ধান্ত কোনো প্রস্তাব বা কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়েই নিয়েছে। এটি সামগ্রিকভাবে লেখকদের ভূমিকা এবং জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে।” – বলেন জামেন।
তবে, ওপেনএআই বলেছে তারা প্রকাশকদের সঙ্গে নতুন অংশীদারিত্ব করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন কনটেন্টে প্রবেশাধিকারের জন্য তারা এরইমধ্যে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ও মিডিয়া জায়ান্ট অ্যাক্সেল স্প্রিংগারের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
"আমরা কনটেন্ট নির্মাতা ও মালিকদের অধিকারকে সম্মান করি এবং তারা এআই প্রযুক্তি এবং নতুন আয়ের মডেল থেকে যেন উপকৃত হন তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ," ওপেন এআইয়ের একজন মুখপাত্র গত মাসে বলেছিলেন বলে উঠে এসেছে ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক প্রতিবেদনে।
নতুন তৈরি নথিতে ওপেনএআই বলেছে যে কোম্পানিটি কপিরাইট আইন মেনে চলে, এবং বিশ্বাস করে যে ‘আইনিভাবে কপিরাইট আইন প্রশিক্ষণ নিষিদ্ধ করে নয়।’