এর আগেও চীনের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের কর্মীদের নির্দিষ্ট কিছু ডেটায় প্রবেশাধিকার আছে বলে স্বীকার করেছিল টিকটক।
Published : 03 Nov 2022, 05:56 PM
ইউরোপীয়দের ডেটায় চীনা কর্মীদের প্রবেশাধিকার থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে টিকটক। চীনসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থিত কর্মীদের প্রবেশাধিকার থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে নিজেদের গোপনতা নীতিমালাও বদলাচ্ছে শর্ট-ফর্ম ভিডিও প্ল্যাটফর্মটি।
ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা যেন ‘সংগতিপূর্ণ, উপভোগ্য এবং নিরাপদ’ থাকে, সেটি নিশ্চিত করতেই চীনসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীদের সাধারণ ব্যবহারকারীদের ডেটায় প্রবেশাধিকার আছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
টিকটকের ব্রাজিল, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার কর্মীদের ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের ডেটায় প্রবেশাধিকার আছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।
সাধারণ ব্যবহারকারীদের ডেটায় বিভিন্ন দেশের কর্মীদের প্রবেশাধিকার থাকার স্বীকারোক্তি দিয়ে টিকটকের ইউরোপভিত্তিক প্রাইভেসি প্রধান ইলেইন ফক্স বলেছেন, “নিজেদের দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনেই ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ইসরায়েল, জাপান, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট দলে নির্দিষ্ট কিছু কর্মীকে আমরা টিকটক ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের ডেটায় প্রবেশাধিকার দিয়ে থাকি।”
এ বিষয়ে টিকটক বলেছে, “কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অনুমোদন প্রোটকল এবং ইউরোপের ডেটা নিরাপত্তা নীতিমালা (জিডিপিআর) স্বীকৃত” পদ্ধতিতে তারা এই প্রবেশাধিকারের বিষয়টি দেখভাল করেন।
এর আগেও চীনের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের কর্মীদের নির্দিষ্ট কিছু ডেটায় প্রবেশাধিকার আছে বলে স্বীকার করেছিল টিকটক।
জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটরদের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে টিকটকের প্রধান নির্বাহী শৌ জি চিউ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীর ডেটার মধ্যে স্পর্শকাতর নয় এমন ডেটা বিদেশি কর্মীদের দেখার সুযোগ আছে। তবে, তার জন্য আগে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিরাপত্তা দলের অনুমতি নিতে হয় তাদের। ব্যবহারকারীদের কোনো ডেটা চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের সরবরাহ না করারও দাবি করেছিলেন তিনি।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, কেবল যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সুইজারল্যান্ডের জন্য ২ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে গোপনতা নীতিমালার নতুন আপডেট।
উল্লেখ্য, সাধারণ ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে গোটা বছর জুড়েই রাজনৈতিক ও বাজার নিয়ন্ত্রকদের চাপের মুখে আছে টিকটক। বিশ্বব্যাপী একশ কোটির বেশি নিয়মিত ব্যবহারকারী আছে প্ল্যাটফর্মটির।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে টিকটক নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সেই কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
নিষিদ্ধ করার বদলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়কে ‘বিদেশী প্রতিপক্ষ’ যেন দেশের নাগরিকদের ডেটা চুরি করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অন্যদিকে, টিকটকের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কমিটি অন ফরেন ইনভেস্টমেন্ট’। দেশে বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ তদন্ত করে দেখে এ কমিটি।
টিকটক ‘চীনে ব্যক্তিগত ডেটা পাঠায় কি না’ সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে আয়ারল্যান্ডের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাও।
ইউরোপীয় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ইউরোপ থেকে চীনে ডেটার স্থানান্তর তদন্ত করে দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ডিজিটাল অধিকারবিষয়ক সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল ভিল।
ভিলের মতে, চীনের স্থানীয় ডেটা আইনের কারণে দেশটিতে ব্যবহারকারীদের সীমিত ডেটা স্থানান্তর করা হলেও তার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তবে, চীন সরকার এখন একক কোনো ব্যক্তির ডেটায় গুপ্তচরবৃত্তির দিকে ঝুঁকেছে বলেও মনে করেন না তিনি।
এই ধারণার সপক্ষে তিনি বলেন, “তাদের ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহের অন্য আরও উপায়ও আছে”।
অন্যদিকে, গত বছরের এক ব্লগ পোস্টে টিকটক দাবি করেছিল ইউরোপের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তাদের কার্যপ্রণালী।
ব্রেক্সিট পরবর্তী দৃশ্যপটে ডেটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা তৈরির চেষ্টা করছিল যুক্তরাজ্যের স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘দ্য ইনফর্মেশন কমিশনার্স অফিস’। কিন্তু মাঝপথে নতুন আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে সংস্থাটি।
অক্টোবর মাসে প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, মার্কিন নাগরিকদের ‘টার্গেট’ করতো টিকটক। মূল কোম্পানি ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে অন্তত দু’জন মার্কিন নাগরিককে অনুসরণের পরিকল্পনা করেছিল বলে সে সময় উঠে এসেছিল প্রতিবেদনে।