মাই নাম্বার কার্ডটিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স, কর বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি সেবা যুক্ত করা হয়। ছবিসহ কার্ডটিতে একটি মাইক্রোচিপ রয়েছে যেখানে এইসব তথ্য জমা থাকে।
Published : 18 Aug 2023, 03:15 PM
সাড়ে পাঁচ কোটি নাগরিকের জন্য ইস্যু করা ডিজিটাল কার্ডের মধ্যে এক লাখ ৩০ হাজারে ত্রুটি থাকার দায় স্বীকার করে তিন মাসের বেতন ফেরত দিয়েছেন জাপানের ডিজিটাল মন্ত্রী।
জাপানে নতুন প্রচলিত ‘মাই নাম্বার কার্ড’ প্রকল্পের ব্যর্থতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ১৫ অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বেতন ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেন মন্ত্রী তারো কোনো।
প্রতিবন্ধী নথির সঙ্গে মাই নাম্বার কার্ড যুক্ত করার বিষয়ে জনগণের জ্ঞানের অভাব, ভুল কার্ডের সঙ্গে স্বাস্থ্য বীমা যুক্ত হওয়ার ঘটনা এবং সরকারি চাকুরিজীবীদের পেনশন নথিতে ভুলের কথা উঠে এসেছে ওই অন্তর্বতীকালীন প্রতিবেদনে।
২০১৬ সালে চালু করা মাই নাম্বার কার্ডটিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স, কর বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি সেবা যুক্ত করা হয়। ছবিসহ কার্ডটিতে একটি মাইক্রোচিপ রয়েছে যেখানে এইসব তথ্য জমা থাকে।
কার্ডটিতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টকে তাদের কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যার মধ্যে অন্তত এক লাখ ৩০ হাজারকে মানুষকে ভুল কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলেছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
ডিজিটাল আইডির ব্যাপারে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ নতুন নীতিমালা ও নির্দেশনা জারি করার কথা বলেছে দেশটির সরকার।
“সরকারি তহবিল থাকে এমন অ্যাকাউন্টের রেজিস্ট্রেশনেও ভুল হয়েছে, যা করেছে খোদ ডিজিটাল এজেন্সি। এটা খুবই দুঃখজনক যে ভুলের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।” মঙ্গলবার বলেছেন মন্ত্রী। এজেন্সিটির তথ্য সিস্টেমকে “অপর্যাপ্ত” এবং সেটি সাড়া দিতে বেশ “সময় ক্ষেপণ করে” বলেও স্বীকার করেন তিনি।
“ডিজিটাল মন্ত্রী হিসাবে আমার দায় নেওয়া উচিৎ।” – বলেছেন তিনি।
দেশটির জনগণের মধ্যে সরকারের ডিজিটাল সেবার প্রতি একধরনের অনীহা আছে এবং ডিজিটাল আইডি গ্রহণের ব্যাপারে তারা খুব একটা আগ্রহী নন। তাই এই দায়িত্বটি সম্পন্ন করা মন্ত্রীর জন্য বেশ দুরুহ বলে মন্তব্য করেছে দ্যা রেজিস্টার ডটকম।
প্রায় সব নাগরিককে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে মাই কার্ডের আওতায় আনার লক্ষ্য ছিলো জাপান সরকারের।
কিন্তু বিদ্যমান জটিলতায় সে সময়সীমা ২০২৪ সালের হেমন্ত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং এর মধ্যে বর্তমানে প্রচলিত ছবিহীন জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা কার্ডকে বিলুপ্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটিতে। একবার সে কার্ডটির মেয়াদ ফুরালে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকলে কোনো কার্ডধারীকে স্বাস্থ্যসেবা পেতে প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হবে।
কিন্তু জাপানী জনগণ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সেই কার্ডটি চালু রাখার জন্য একটি অনলাইন পিটিশনে খুব অল্প সময়ে এক লাখ মানুষ স্বাক্ষর করেন।
কিন্তু জাপান পুরো বিষয়টিকে আরও সহজ করতে পারত বলে মন্তব্য উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। বর্তমানে একটি মাই নাম্বার কার্ড পেতে হলে প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবেদনকারীদের স্থানীয় পোস্ট অফিস থেকে তাদের পরিচয়ের প্রমাণ দিয়ে কার্ডটি সংগ্রহ করতে হয়। কেউ কোনো কারণে পিন নাম্বার ভুলে গেলে, কার্ডটি স্থগিত হয়ে যেতে পারে এবং কার্ডটি চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে নতুন কার্ড পেতে দুই মাস সময় লাগে।
কোনো কাজে ব্যর্থতার জন্য পুরো তিন মাসের বেতন ফেরত দেওয়ার রীতি জাপানের বাইরে অদ্ভুতুরে ঠেকতে পারে, তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে এমন উদাহরণ জাপানে খুব বিরল নয়।
এর আগে ২০১৬ সালে টোকিও’র গভর্নর ইউরিকু কোইকি অলিম্পিক ব্যয় হিসাবের বাইরে চলে যাওয়ায় তার নিজের বেতন থেকে দুই লাখ ডলার প্রদান করেন।
দেশটিতে খোলামেলা কথা বলার জন্য জনপ্রিয়তা আছে মন্ত্রী কোনো’র। এক জরিপে জাপানের পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার নামও উঠে এসেছে।
এ বছরের মে মাসে তিনি ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে খুব বিনয়ের সঙ্গে বলেন, চ্যাটজিপিটি তাকে ভুলবশত তাকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করেছে, যা তিনি নন।