পুনঃনকশার কথা বলে ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধী’ ফিচার সরালো টুইটার

“এই সিদ্ধান্ত যদি নীতি পরিবর্তনের প্রতীক হয়, মানে এগুলোকে তারা আর গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না, তবে সেটি অসম্ভব বিপজ্জনক একটি বিষয় হবে।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2022, 10:23 AM
Updated : 24 Dec 2022, 10:23 AM

ব্যবহারকারীর কনটেন্ট সার্চে ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধের’ হটলাইন ও অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রচারণা চালানো একটি ফিচার সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে টুইটার। এর কারণ হিসেবে ফিচারটি ‘নতুন করে ঢেলে সাজানোর’ কথা বলছে সামাজিক প্ল্যাটফর্মটি।

ফিচারটি ‘#ThereIsHelp’ নামে পরিচিত। এটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ইলন মাস্ক নিজেই। আর গত কয়েকদিনের মধ্যেই এটি সরানো হয়েছে বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাতে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

“বিভিন্ন প্রম্পট ঠিক করার পাশাপাশি আমরা সেগুলোকে ঢেলে সাজাচ্ছি। আমাদের কার্যক্রমের জন্য এগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।” --প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর রয়টার্সকে এক ইমেইল বার্তায় বলেন টুইটারের নিরাপত্তা প্রধান এলা আরউইন।

“আমাদের প্রত্যাশা, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এটি ফিরে আসবে।”

এই ফিচার সরানোর খবর আগে প্রকাশ না পেলেও এটি অনেক দেশের মানসিক স্বাস্থ্য, এইচআইভি, ভ্যাকসিন, শিশু নিপীড়ন, কোভিড-১৯, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিভিন্ন সহায়ক সংস্থার সার্চ ফলাফলে শীর্ষেই থাকতো।

ফিচারটি সরিয়ে ফেলায় টুইটারে থাকা ‘ভালনারেবল’ ব্যবহারকারীদের নিয়ে শঙ্কা বাড়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

মাস্ক বলেন, অক্টোবরে তার টুইটারের দখলের পর থেকে প্ল্যাটফর্মে ক্ষতিকারক কনটেন্ট সম্পর্কিত মতামত কমেছে। তার বক্তব্য সমর্থনে একটি ‘গ্রাফ’ টুইট করেন তিনি, যেখানে এই ধরনের প্রবণতা কমে আসার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে।

বিভিন্ন গবেষক ও নাগরিক অধিকার দল অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তাদের ভাষ্যমতে, প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন টুইটে তারা বর্ণবাদী মন্তব্য ও অন্যান্য ঘৃণাবাচক কনটেন্টের ব্যবহার বাড়তে দেখেছেন।

বিভিন্ন ভোক্তানিরাপত্তা দলের চাপের মুখে, ‘কেউ হয়তো বিপদে পড়তে পারে’ এমন সন্দেহের বেলায় ব্যবহারকারীদের বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারী হটলাইনের মতো সুপরিচিত সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলেছে টুইটার, গুগল ও ফেইসবুক’সহ বিভিন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা।

“এই ধরনের কার্যক্রম নিয়ে নিজস্ব সার্চ ফলাফলে ভালোই করছে গুগল। আর তাদের কয়েকটি পদ্ধতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা বিভিন্ন পরিবর্তন আনছি।” --ইমেইল বার্তায় বলেন আরউইন।

“আমরা জানি, অনেক ক্ষেত্রে এইসব প্রম্পট দরকারী। এগুলো যেন ঠিকমতো কাজ করে ও প্রাসঙ্গিক হিসেবেই থাকে, সেটি আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই।”

এদিকে, টুইটার থেকে ফিচারটি হারিয়ে যাওয়াকে ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন সম্প্রতি টুইটারে নিষ্ক্রিয় হওয়া কনটেন্ট পরামর্শক দলের সদস্য এরলিয়ানি আব্দুল রহমান।

সাময়িকভাবে ফিচারটি কেবল উন্নতির উপায় খোঁজার উদ্দেশ্যে সরানো হলেও, একে অপসারণ না করে, বরং সক্রিয় রেখেই কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

#ThereIsHelp-এ প্রচারিত ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘এইডস ইউনাইটেড’ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমর্থক থাই দল ‘আই ল’ শুক্রবার রয়টার্সকে বলেছে, ফিচারটির হারিয়ে যাওয়া তাদের কাছে ‘বিস্ময়কর’ মনে হয়েছে।

এইডস ইউনাইটেড বলেছে, ১৮ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত টুইটারের এই ফিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়েবপেইজ দিনে ৭০টি ‘ভিউ’ আকৃষ্ট করতো। তবে, ফিচারটি বন্ধ করার পর থেকে মোট ১৪টি ভিউ টানতে পেরেছে।

শুক্রবার হারিয়ে যাওয়া ফিচারটি সম্পর্কে টুইট করেন টুইটারের অংশীদার ‘সাউথইস্ট এশিয়া ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন নেটওয়ার্ক’-এর নির্বাহী পরিচালক দামার জুনিয়ার্তো। তিনি বলেন, এই ধরনের ‘বোকা কার্যক্রমের’ কারণে তার সংস্থা সামাজিক প্ল্যাটফর্মটি ছেড়ে চলে যেতে পারে।

কোম্পানির টুইট অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ বছর আগে কয়েকটি প্রম্পট উন্মোচন করেছিল টুইটার। আর এগুলো মিলতো ৩০টির বেশি দেশে।

এক ব্লগ পোস্টে টুইটার বলেছে, ব্যবহারকারী যেন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়ে টুইটার পরিষেবায় প্রবেশাধিকার ও সমর্থনের সুযোগ পান, ওই বিষয়টি নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব ছিল।

অলাভজনক সংস্থা ‘নেটওয়ার্ক কন্টেজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান বিশ্লেষক অ্যালেক্স গোল্ডেনবার্গ বলেন, কয়েকদিন আগেও সার্চ ফলাফলে দেখানো বিভিন্ন প্রম্পটের হদিস বৃহস্পতিবার থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি ও তার সহকর্মীরা অগাস্টে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে, আগের বছরের তুলনায় টুইটারে ‘নিজের ক্ষতি’ সম্পর্কিত শব্দের ব্যবহার বেড়েছে পাঁচ গুণ। বিশেষ করে, তুলনামূলক কম বয়সী ব্যবহারকারীর মধ্যে এই ধরনের কনটেন্ট দেখার ঝুঁকি বেশি থাকার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

“এই সিদ্ধান্ত যদি নীতি পরিবর্তনের প্রতীক হয়, মানে এগুলোকে তারা আর গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না, তবে সেটি অসম্ভব বিপজ্জনক একটি বিষয় হবে।” --বলেন গোল্ডেনবার্গ।