এ গবেষণায় প্রথমবারের মতো অ্যাপলের নিজস্ব বিভিন্ন অ্যাপের প্রাইভেসি সেটিং পরীক্ষা করে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা, যে অ্যাপগুলো আইফোন কেনার সময় প্রি-ইনস্টল করা থাকে।
Published : 08 Apr 2024, 04:19 PM
প্রাইভেসি প্রশ্নে বরাবরই বড় মুখে কথা বলে এসেছে অ্যাপল। গুগল, ফেইসবুকের মতো প্রাইভেসির তথ্য বিক্রি করে ব্যবসা করে না - এমন কথাও বলেছেন অ্যাপলের কর্তাব্যক্তিরা। তবে, অ্যাপলের সেই আত্মবিশ্বাসের দুর্গে সম্ভবত ফাঁটল ধরাচ্ছে নতুন এক গবেষণা।
অ্যাপল ডিভাইসে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ডেটা গোপন রাখার বিষয়টি অনেকের ধারণার চেয়ে বেশি কঠিন হতে পারে, এমন দাবি করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় ‘আল্টো ইউনিভার্সিটি’র নতুন এক পরীক্ষায়।
ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি অ্যাপল জোরালোভাবে দাবি করে এলেও গবেষকদের তথ্য বলছে, বাস্তবতা ভিন্ন। নিজেদের প্রতিশ্রুতি না-ও পূরণ করতে পারে কোম্পানিটি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই অ্যাপলের স্লোগান হল “প্রাইভেসির জবাব হচ্ছে আইফোন।”
এ গবেষণায় প্রথমবারের মতো অ্যাপলের নিজস্ব বিভিন্ন অ্যাপের প্রাইভেসি সেটিং পরীক্ষা করে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা —যেমন সাফারি ওয়েব ব্রাউজার, সিরি ও আইমেসেজ, যে অ্যাপগুলো আইফোন কেনার সময় প্রি-ইনস্টল করা থাকে।
অ্যাপলের নিজস্ব সিস্টেম অ্যাপগুলো থেকে ব্যবহারকারীরা খুব সহজে ছাড় পান না।
মে মাসে আয়োজিত হবে কম্পিউটিং সিস্টেমে মানবিকতা বিষয়ক ‘সিএইচআই’ সম্মেলন। সেখানেই গবেষণাটি সবার সামনে উন্মোচিত হবে। আর এতে বিভিন্ন অ্যাপের প্রাইভেসি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কয়েকটি সাড়া জাগানোর মতো ফলাফল আসছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি ও গবেষণামূলক সাইট নোরিজ।
‘আল্টো ইউনিভার্সিটি’র সহযোগী অধ্যাপক জ্যান লিন্ডকভিস্ট ও তার গবেষণা দলের তথ্য অনুসারে, ব্যবহারকারীর যদি এমনও মনে হয় যে তার তথ্য গোপন আছে, এরপরও ওই ডেটা চুরি করে নিতে পারে অ্যাপলের বিভিন্ন ডিফল্ট অ্যাপ।
উদাহরণ হিসেবে, সিরি চালু করার মানে এই নয় যে ব্যবহারকারী শুধু এর ‘ভয়েস কন্ট্রোল’ ফিচারটি ব্যবহার করছেন। বরং ব্যবহারকারীর ব্যবহৃত অন্যান্য অ্যাপ থেকেও ডেটা সংগ্রহ করতে পারে সিরি, যদি না তিনি ফোনের সেটিংয়ে গিয়ে তা ঠেকানোর অপশনটি চালু না করেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা যখন নিজস্ব ডেটা আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে ফোনের প্রাইভেসি সেটিংস সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন তাদের কাছে অ্যাপলের এ সেটিং প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্তিকর ও জটিল লেগেছে।
এমনকি অনলাইনে অ্যাপলের দেওয়া বিভিন্ন নির্দেশনাতেও এর স্পষ্টতা মেলেনি। ফলে ডেটা অ্যাক্সেস সীমিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করাও কঠিন হয়ে উঠেছিল অংশগ্রহণকারীদের কাছে। আর শেষ পর্যন্ত কেউই বিভিন্ন অ্যাপ থেকে ডেটা শেয়ারিংয়ের প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেননি।
আর প্রাইভেসির এ সমস্যা কেবল অ্যাপলের একার নয়।
গবেষকরা বলছেন, প্রাইভেসি সেটিং নিয়ে ব্যবহারকারীদের কাছে আরও স্পষ্টভাবে তথ্য জানাতে পারে অ্যাপল।
অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ আবার থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করে এর কিছুটা সমাধান পেয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ডিফল্ট ব্রাউজিং অ্যাপ সাফারি থেকে বদলে ফায়ারফক্সে নেওয়া। তবে, বড় পরিসরে সমস্যাটি এখনও রয়ে গেছে।
গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে, সংগৃহিত ডেটা সম্ভবত সিরি’র মতো এআই সিস্টেমের প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারকারীর জন্য ‘পারসোনালাইজড’ অভিজ্ঞতা তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এটি ব্যবহারকারীর কার্যকারিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখলেও বড় প্রশ্ন হল, ব্যবহারকারীর নিজের প্রাইভেসির ওপর আসলে কতোটা নিয়ন্ত্রণ আছে।
‘আল্টো ইউনিভার্সিটি’র এ গবেষণার শেষ অংশে উল্লেখ রয়েছে, অ্যাপল ডিভাইসে ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি রক্ষা করা সহজ নয়। আর বিভিন্ন অস্পষ্ট নির্দেশনা ও জটিল সেটিংয়ের কারণে ব্যবহারকারীরা তাদের ডেটা গোপন রাখতে গিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।
অ্যাপলকে এইসব প্রাইভেসি ব্যবস্থা আরও উন্নত করার আহ্বানও জানানো হয়েছে এ পরীক্ষায়।