এক্ষেত্রে কল্পনা করা যেতে পারে এমন টিউব বা নলকে, যা অর্ধেক পানিতে ডুবে আছে। টিউবটি সামনে পিছনে কাত হয়ে আশপাশের পানিকে আঘাত করলে তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
Published : 09 Apr 2024, 03:38 PM
সমুদ্রের ঢেউ এখন শুধু সার্ফিংয়ের জন্য নয়, বরং ‘ক্লিন এনার্জি’ বা পরিবেশবান্ধব শক্তির নতুন উৎসও হতে পারে— বলছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় সমুদ্রের তরঙ্গকে বিদ্যুতে রূপান্তরের চতুর এক উপায় মিলেছে।
এতে করে উপকূলীয় বিভিন্ন শহর থেকে শুরু করে গভীর সমুদ্রে চলাচল করা যান- সব কিছুতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। আর এটি সম্ভব হবে পরিবেশের কোনও ক্ষতি না করেই।
গবেষণা দলটির এ সাফল্যের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বিশেষ এক ডিভাইসের, যার মাধ্যমে সমুদ্রের ঢেউ থেকে ‘ব্লু এনার্জি’ আহরণ সম্ভব।
‘লিকুইড-সলিড ট্রাইবোইলেকট্রিক ন্যানোজেনারেটর (টিইএনজি)’ নামে পরিচিত ডিভাইসটি টিউবের ভেতর পানির গতিবিধিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করে থাকে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞান ও গবেষণাধর্মী সাইট নোরিজ।
এক্ষেত্রে কল্পনা করা যেতে পারে এমন টিউব বা নলকে, যা অর্ধেক পানিতে ডুবে আছে। টিউবটি সামনে পিছনে কাত হয়ে আশপাশের পানিকে আঘাত করলে তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
প্রচলিতভাবে, এ ধরনের বিভিন্ন টিইএনজি ডিভাইসে বড় এক ত্রুটি ছিল। তা হল, এগুলো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। এজন্য গুওজহাং দাই, কাই ইয়িন ও জুনলিয়াং ইয়ানের নেতৃত্বে গবেষকরা এর সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি তৈরির লক্ষ্য নিয়েছিলেন।
পানি থেকে শক্তি সংগ্রহের কাজ করে ইলেক্ট্রোড। গবেষকরা এই ইলেকট্রোডের স্থান বদলে বিদ্যুৎ সংগ্রহের হার বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। গবেষকরা দেখেছেন, টিউবকে কাত করলে এর মাঝখান থেকে শেষ অংশ পর্যন্ত পানির আঘাত সবচেয়ে বেশি লাগে।
বেইজবল খেলায় ক্যাচ ধরার সময় ক্যাচার যেভাবে লাফ দেয়, অনেকটা সেভাবেই কাজ করে এ প্রক্রিয়া।
গবেষকরা তাদের এ ধারণাটি পরীক্ষা করার জন্য দুটি টিইএনজি ডিভাইস তৈরি করেছেন, যেখানে ইলেক্ট্রোড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে পরিষ্কার প্লাস্টিকের টিউব ও তামার ফয়েল।
এর মধ্যে একটি ডিভাইসে ইলেক্ট্রোড ছিল টিউবের কেন্দ্রে, আর অন্যটির প্রান্তে।
পরবর্তীতে, গবেষকরা এসব টিউবকে পানি দিয়ে ভরে ফেলেন ও সমুদ্রের ঢেউয়ের গতির অনুকরণ করে সামনে পিছনে দোলাতে একটি সুবিধাজনক স্থানে ডিভাইসগুলো বসান।
এ গবেষণার ফলাফল খুবই ইতিবাচক ছিল। যে ডিভাইসে ইলেক্ট্রোড শেষের দিকে ছিল, তাতে প্রচলিত সেটআপের তুলনায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেছে, যা ৩৫টি এলইডি লাইটে বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো যথেষ্ট। আর পানির গতিবিধি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর আলোও মিটমিট করে।
এ সহজ প্রক্রিয়ায় সমুদ্র থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের বেলাতেও বড় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
গবেষকদের দাবি, এই উন্নতমানের ‘টিইএনজি’ বড় পরিসরে সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহে, উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহে, পানির নিচে বিভিন্ন গবেষণা টুলের ব্যাটারি চার্জ করতে, এমনকি তারের প্রয়োজন ছাড়াই পানির নিচে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘আমেরিকান কেমিকাল সোসাইটি’র পিয়ার রিভিউড জার্নাল ‘অ্যাসিএস এনার্জি লেটার্স’-এ।