এবার ওয়াটারগেট সাংবাদিকদ্বয় সতর্ক করলেন এআই নিয়ে

সাংবাদিকতার গুরু জুটি কার্ল বার্নস্টাইন ও বব উডওয়ার্ড কথা বলেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে। ‘প্রচণ্ড শক্তিশালী’ এই হাতিয়ার নিয়ে তাদের শঙ্কা এর প্রভাবে হুমকির মুখে পড়বে আগামীর সাংবাদিকতা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 05:28 AM
Updated : 19 May 2023, 05:28 AM

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সাংবাদিকতার গুরু কার্ল বার্নস্টাইনের মূল্যায়ন, এটি ‘প্রচণ্ড শক্তিশালী’ এবং তার আশঙ্কা এর প্রভাবে হুমকির মুখে পড়বে আগামী দিনের সাংবাদিকতা।

বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে ওয়াটারগেট জুটি বার্নস্টাইন ও বব উডওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পতনসহ ডনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্রমাগত উন্নয়নের ফলে বিশ্বে বিশাল সংখ্যক মানুষের চাকরি হারানোর ভীতির সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।

আর এমন বাস্তবতায় বার্নস্টাইন বলেছেন, “সত্য হচ্ছে জীবনে সব কথার শেষ কথা।”

“মিথ্যাকে প্রতিহত করতে হলে আমাদের সত্যকে জানতে হবে। তা করার জন্য গণমাধ্যম সমাজের অপরিহার্য উপাদান।” - বলেন তিনি।

আজকের দিনে কেউ একজন কেন সংবাদকর্মী হতে চাইবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তার জবাব- “সর্বোচ্চ আহরণযোগ্য সত্যকে” প্রকাশ করতে।

গত বছর নভেম্বরে প্রকাশের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে চ্যাটজিপিটি। এআইনির্ভর এই চ্যাটবটকে এই দুই কিংবদন্তী সাংবাদিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন বিবিসি’র অমল রাজন। চ্যাটবটটির দেওয়া উত্তরের অংশবিশেষ তিনি দুজনকে দেখান।

৭০-এর দশকের শুরুতে বার্নস্টাইন-উডওয়ার্ডের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেই বেরিয়ে আসে বিখ্যাত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি এবং ১৯৭২ সালে তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পদত্যাগে বাধ্য করায়।

ওই সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ওয়াশিংটন পোস্টের এই দুই প্রতিবেদক সাংবাদিকতায় সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার বলে বিবেচিত পুলিৎজার জেতেন।

তারা দুইজন কে ছিলেন, কি কি করেছেন সে ব্যাপারে চ্যাটবটটি গুছিয়ে সীমিত আকারে অনেকটা এভাবে লেখে– “অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের নতুন মানদণ্ড দাঁড় করিয়ে তারা নতুন প্রজন্মের অনেক সংবাদকর্মীকে অনুপ্রাণিত করেছেন।” 

তবে বার্নস্টাইন বলেন, চ্যাটবটের উত্তর তাকে ‘মুগ্ধ করতে পারেনি’। 

“আমাদের ব্যাপারে এদিকসেদিক থেকে মিলিয়ে কিছু একটা লিখেছে আর কি!”

তারা দুইজন অংশ নিয়েছিলেন এমন একটি সম্মেলেনের প্রচারপত্রের কিছু অংশ তিনি চ্যাটজিপিটির লেখা কনটেন্টের মধ্যে শনাক্ত করেন।

যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি এখনও বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তা সত্ত্বেও তিনি বলেন “এআই প্রচণ্ড শক্তিশালী এবং আগামীতে এর সঙ্গে আমাদের লড়াই করতে হবে।”

এআই এর সীমাবদ্ধতা নিয়ে উডওয়ার্ড বলেন “আমি পেন্টাগনে ফোন করে বলতে পারি যে, সেখানকার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাই’, উনি হয়তো আমার সঙ্গে কথা বলবেন, হয়তো বলবেন না। এই কাজটি  কিন্তু এআই করতে পারবে না।”

৭০-এর দশকের শুরুতে এই দুই তরুণ সংবাদকর্মী একটি চুরির ঘটনার প্রতিবেদন তৈরির জন্য আক্ষরিক অর্থেই দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনের বক্তব্য নেন। যে ঘটনা ছিঁচকে চুরি দিয়ে শুরু, তাদের তদন্তেই সেটিই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ঘটা শীর্ষ অনৈতিক কর্মযজ্ঞের চেহারা পায়, যাতে সায় ছিল স্বয়ং প্রেসিডেন্টের। আর এর সমাপ্তি ঘটে ইমপিচমেন্টের মুখে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।

সাংবাদিকদ্বয় তাদের এই ‘পুরস্কারজয়ী প্রতিবেদন সিরিজের জন্য মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রবাদতুল্য স্থান অধিকার করেন। ওয়াটারগেটে কেলেঙ্কারি নিয়ে তাদের রচিত বইয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’।

১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ওই চলচ্চিত্রে উডওয়ার্ডের ভুমিকায় অভিনয় করেন রবার্ট রেডফোর্ড এবং ডাস্টিন হফম্যান ছিলেন বার্নস্টাইনের ভুমিকায়।

প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পদত্যাগের আগ মুহূর্তের নাটকীয়তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদের অন্তিম মুহূর্তের মিল নিয়ে কথা বলছিলেন বার্নস্টাইন।

“আমরা কখনোই ভাবিনি আরও একজন প্রেসিডেন্টকে আমরা এমন করতে দেখব, ট্রাম্পের আমলে যা হলো তা আগের চেয়েও ভয়ংকর।”

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অপপ্রচারের দায়ে রুপার্ট মারডকের ফক্স নিউজকে এ বছর ৮০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে।

ফক্স নিউজ ছাড়াও মারডকের মালিকানায় রয়েছে টাইমস, দ্যা সান এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো আরো বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

রুপার্ট মারডক গণমাধ্যমে কতটা ক্ষমতাধর- এমন প্রশ্নের জবাবে বার্নস্টাইন বলেন “চলচ্চিত্রে তার দূরদর্শিতা ও অবদান রয়েছে। টিভিতে তিনি সাউথ পার্কের মতো শো’র সম্প্রচার সমর্থন ও উৎসাহ দিয়েছেন।”

“কিন্তু, সাংবাদিকতায় তিনি অসত্যের সংস্কৃতি তৈরি করেছেন।”

“আমি মনে করি অসত্যকে গ্রহণ করে ও ছাপিয়ে তিনি তার মেয়াদকে অশুভ করে তুলেছেন।”

বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা, ডনাল্ড ট্রাম্প এবং সিআইএসহ বেশকিছু বিষয়ের উপর উডওয়ার্ড বই লিখেছেন। কার্ল বার্নস্টাইনও পাঁচটি বেস্ট সেলার বই লিখেছেন এবং তিনি মার্কিন সংবাদ আয়োজনের নিয়মিত মুখ।