বিটকয়েন থেকে ব্লকচেইন: বহুল প্রচলিত শব্দগুলোর মানে কি?

বিটকয়েন, ব্লকচেইন, ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের মতো শব্দগুলো অনেকের কাছে এখনও অপরিচিত বা ‘রহস্যময়’ মনে হলেও, এতে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2022, 12:33 PM
Updated : 14 Dec 2022, 12:33 PM

ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ এফটিএক্স বিপর্যয় ও কোম্পানির সাবেক প্রধান স্যাম ব্যাঙ্কম্যান-ফ্রিডের গ্রেপ্তারের ঘটনা গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি আলোচনার কেন্দ্রে ফিরিয়ে এনেছে সার্বিক ক্রিপ্টো খাতকে।

বিটকয়েন, ব্লকচেইন, ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের মত শব্দগুলো অনেকের কাছে এখনও অপরিচিত বা ‘রহস্যময়’ মনে হলেও ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই।

যারা এ ধরনের শব্দ প্রথম শুনছেন বা এগুলো সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা চান, তাদের জন্য ক্রিপ্টো খাতের বহুল প্রচলিত কয়েকটি শব্দের সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছে বিবিসি।

বিটকয়েন

বিটকয়েন এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা (ক্রিপ্টোমুদ্রা)। বিশ্ববাজারে যেমন ডলার, পাউন্ড বা ইউরোর মত বিভিন্ন ধরনের মুদ্রার প্রচলন আছে, ডিজিটাল জগতেও তেমনি বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা চালু হয়েছে। বাজারের বহুল প্রচলিত ডিজিটাল মুদ্রাগুলোর মধ্যে আলাদা পরিচিতি আছে ইথেরিয়াম আর ডোজকয়েনের।

মূল ধারার আর্থিক ব্যবস্থায় প্রচলিত মুদ্রার সঙ্গে ডিজিটাল মুদ্রার মূল পার্থক্য হল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল মুদ্রার লেনদেন ব্যবস্থার ওপর খবরদারি বা নিয়ন্ত্রণ করে না। সে হিসেবে ক্রিপ্টো মুদ্রা বা ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীক মুদ্রা ব্যবস্থা হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। 

বিবিসি লিখেছে, এই বিকেন্দ্রীক বৈশিষ্টের কারণে মূল ধারা থেকে আর্থিক স্বাধীনতার খোঁজ করেন এমন অনেকের কাছেই জনপ্রিয় এই ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থা। আবার ঠিক একই কারণে মূল ধারার আর্থিক ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি অস্থিতিশীল এ বাজার।

ব্লকচেইন

সকল ক্রিপ্টোমুদ্রার মূল প্রযুক্তি অবকাঠামো হচ্ছে ব্লকচেইন। ক্রিপ্টো মুদ্রার লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয় এ সবকিছুর হিসাব সংরক্ষিত থাকে এই ডিজিটাল স্প্রেডশিটে।

আরও সহজ করে বললে; প্রতিদিন একটি করে খোলা পাতায় নিজের দিনলিপি লেখার কথা ভাবুন; বছর শেষে সবগুলো খোলা পাতাকে এক সুতোয় বেঁধে পুরোদস্তুর ডায়রির আকার দিতে পারবেন আপনি।

ব্লকচেইনও কাজ করে ঠিক একইভাবে। প্রতিটি লেনদেন লিপিবদ্ধ হয় আলাদা আলাদা ব্লকে; আর ব্লকগুলো নির্দিষ্ট ক্রমে সাজিয়ে তৈরি হয় দানবীয় ব্লকচেইন।

বছর শেষে ডায়রি বানানোর উদাহরণটির সঙ্গে এ কার্যপ্রনালীর মূল পার্থক্য হল– দিনলিপি লেখা বা ডায়রি নেহাত ব্যক্তিগত বিষয়, কিন্তু ব্লকচেইন একেবারেই উল্টো একটি উন্মুক্ত ব্যবস্থা। কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে একটি ক্ষুদ্র লেনদেনের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করতে মাঠে রয়েছেন ব্লকচেইনে স্বেচ্ছসেবকদের বিশাল এক দল।

পুরো অবকাঠোমো বিকেন্দ্রীক হওয়ায় ব্লকচেইন নির্দিষ্ট একটি কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক বা কোনো কোম্পানির অধীনে সংরক্ষিত থাকে না। পৃথিবীর যে কেউ উন্মুক্ত ব্লকচেইন থেকে তথ্য অনুসন্ধান করতে পারবেন।

ক্রিপ্টোমুদ্রা

ব্লকচেইন নির্ভর সকল মুদ্রাকে এক নামে ডাকতে ব্যবহৃত হয় ‘ক্রিপ্টো মুদ্রা’ বা ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ শব্দটি।

ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ

ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ হলো এক ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। বিনিয়োগকারীরা এতে ক্রিপ্টো মুদ্রা কেনা-বেচা ও বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রচলিত বিনিয়োগ ব্যবস্থার মতই ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ আদতে মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা পালন করে। এতে ব্যাংক থেকে পাউন্ড বা ডলারের মত প্রচলিত মুদ্রা পাঠিয়ে তা বিটকয়েন বা ইথেরিয়ামের মত ক্রিপ্টোমুদ্রায় রূপান্তর করে নিতে পারেন ব্যবহারকারী।

তবে, এমন লেনদেনের ক্ষেত্রে আলাদা ফি দিতে হয় ব্যবহারকারীকে।

ক্রিপ্টো ওয়ালেট

বাস্তব জীবনে পকেটের ওয়ালেটে যেভাবে নগদ অর্থ রাখা যায়, ঠিক তেমনভাবেই বিভিন্ন ভার্চুয়াল সম্পদ সংরক্ষণ করা যায় ক্রিপ্টো ওয়ালেটে।

ক্রিপ্টো ওয়ালেট মূলত দুই ধরনের; একটি হল ‘হট ওয়ালেট’ আর অন্যটি হল ‘কোল্ড ওয়ালেট’। ইন্টারনেট সংযোগ থাকে হট ওয়ালেটে; আর বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকে কোল্ড ওয়ালেট।

ইন্টারনেট সংযোগের কারণে হট ওয়ালেটে প্রবেশ করা যায় দ্রুত, লেনদেনও করা যায় কম সময়ে। আর কোল্ড ওয়ালেট হল বিশেষভাবে তৈরি এক ধরনের ডিভাইস যা সাধারণত ইউএসবি ড্রাইভের মত কোনো হার্ডওয়্যার নির্ভর হয়। দীর্ঘদিন নিরাপদে ক্রিপ্টো মুদ্রা সংরক্ষেণে কাজে এর চল বেশি।