এর আগের বিভিন্ন ছোট পরিসরের গবেষণায় এরইমধ্যে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের ট্রমা শিশুর মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তন করে।
Published : 24 Apr 2024, 06:12 PM
কীভাবে শিশুবয়সে ঘটা ট্রমা মানব মস্তিষ্কে কেমন প্রভাব ফেলে তা নিয়ে হয়েছে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় গবেষণা। আর এ থেকে পাওয়া তথ্য ভুক্তভোগীদের দেখাচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।
এই গবেষণার আওতায় এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন শত শত ব্যক্তির মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়েছে, যারা শিশু থাকতে নিপীড়ন ও মানসিক যন্ত্রণার মতো অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন।
গবেষণাটি চালিয়েছে যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্স’। এতে তারা খুঁজে পান, কীভাবে শিশুদের মস্তিষ্ক বিকশিত হয় ও সমস্যা সমাধান বা সহমর্মিতার মতো পরিস্থিতিতে তারা কেমন আচরণ করেন।
গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. মেগান ক্লাবুন্ডে, যিনি শিশু মনোবিদ ও ইউনিভার্সিটি অফ এসেক্স-এর মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক।
ড. ক্লাবুন্ডে বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে সেইসব নেতিবাচক প্রভাব বন্ধ করে নতুন চিকিৎসার সম্ভাবনা জেগেছে।
যুক্তরাজ্যের ‘ট্রমা কাউন্সিল’-এর তথ্য অনুসারে, দেশটির প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন ১৮ বছরে পৌঁছানোর আগেই বিভিন্ন মর্মান্তিক ঘটনার সম্মুখীন হন।
বিবিসি বলছে, এ ধরনের ঘটনা সাধারণত এতটাই বিপজ্জনক বা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে থাকে, যা ভুক্তভোগীর মনে তীব্র ভয় সৃষ্টি করে।
এর আগের বিভিন্ন ছোট পরিসরের গবেষণায় এরইমধ্যে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের ট্রমা শিশুর মস্তিষ্কের আকারে প্রভাব ফেলে। তবে, সর্বশেষ গবেষণায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এ বিষয়ে বোঝাপড়া বাড়ানোর ও তথ্য পাওয়ার নতুন উপায় শনাক্ত করা গেছে।
“মস্তিষ্কের দুটি বড় অংশে যে পরিবর্তন আসে, তা আমরা স্পষ্টভাবেই দেখেছি এই গবেষণায়,” বলেন ড. ক্লাবুন্ডে।
“এটি যে সমস্যা সমাধান ও নিজের ওপর মনযোগ দেওয়ার মতো বিষয়গুলোর ওপর প্রভাব ফেলে, তা এখন আমাদের জানা। এর মানে, ভুক্তভোগীরা নিজের আবেগ, সম্পর্ক তৈরি এমনকি নিজেদের শারীরিক অবস্থা বুঝতেও সমস্যার মুখে পড়েন।”
তিনি আরও যোগ করেন, এর প্রভাব পড়ে ভুক্তভোগীর স্মৃতি ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও।
‘আমার অঙ্গহানী করা হয়েছে’
১৬ বছর বয়সে নাইজেরিয়ায় ‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম)’ বা যৌনাঙ্গ হানীর মতো অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছিলেন ভ্যালেরি।
তিনি বলেন, “কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজেকে মেঝেতে দেখতে পাই আমি। আর কেউ একজন আমার বুকের ওপর বসে আমার অঙ্গহানী করছে।”
“এটা আমার জীবনে দীর্ঘ ট্রমার সূচনা ছিল। অনেক বছর ধরেই আমি শারীরিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।”
ভ্যালেরির মতে, তিনি সবসময় ভাবতেন, কেন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অন্যদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করছেন তিনি। তিনি আরও যোগ করেন, এই আবিষ্কার ‘অনেকটা লটারি জেতার মতো ঘটনা, যা যুক্তিসঙ্গতও বটে’।
এদিকে, ছোটবেলায় যৌন নিপীড়নের শিকার কারি বলেছেন, “গবেষণাটি আমার কাছে কতো গুরুত্বপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা করার মতো ভাষা নেই আমার কাছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অনেক বছর ধরেই আমি সম্পর্ক তৈরি করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েছি। আর আমি সবসময়ই ভেবেছি, ‘আমারই কেন বারবার এমন হবে?”
“এখন আমি জানি, এতে আমার কোনো দোষ নেই।”
কারি ও ভ্যালেরি অলাভজনক সংগঠন ‘এসেক্স ট্রমা অ্যাম্বাসাডর্স’-এর সদস্য, যারা এমন ভুক্তভোগীদের সমর্থনের পাশাপাশি তাদের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা তৈরি করে থাকে।
অনেক ট্রমা থেরাপিতেই ভুক্তভোগীর দুর্বলতার জায়গা এড়ানো ও ভয়ঙ্কর চিন্তাভাবনা মোকাবেলার ওপর মনযোগ দেয়। তবে ড. ক্লাবুন্ডে’র অনুসন্ধান বলছে, ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ বা পিটিএসডি’র স্পষ্ট লক্ষণ থাকা ভুক্তভোগীরা চিকিৎসার পরও এমন নেতিবাচক অনুভূতি পেয়ে থাকেন।
“এখন মনে হচ্ছে, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ ধাঁধার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বাদ যাচ্ছে, ” বলেন ড. ক্লাবুন্ডে।
“এ ছাড়া, ট্রমা কীভাবে শরীর, নিজস্ব অনুভূতি ও সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, সেটিও পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ।”
“গবেষণাটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে কারণ মস্তিষ্কের গতিবিধি বদলানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে সঠিক চিকিৎসা।”