বয়স ১৮ বছরের কম হলে দিনে এক ঘণ্টার বেশি টিকটক নয়

কেবল স্ক্রিন টাইম কমানোই নয়, প্ল্যাটফর্মটিকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক কনটেন্টের ফিড ‘পরিষ্কার করে’ শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মনযোগ দেওয়া উচিৎ।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2023, 10:32 AM
Updated : 2 March 2023, 10:32 AM

প্ল্যাটফর্মে থাকা ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের অ্যাপ ব্যবহারের সময়সীমা দৈনিক ৬০ মিনিট নির্ধারণ করে দিয়েছে ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক।

অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীরা এই সময়সীমা অতিক্রমের পর একই দিনে সেবাটির ব্যবহার চালিয়ে যেতে তাদের একটি পাসকোড লিখতে হবে।

তবে, নতুন এই সেবা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরেও আসতে পারবেন তারা। টিকটক বলছে, আসন্ন সপ্তাহগুলোর মধ্যেই চালু হবে এটি।

অ্যাপটির মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্স বলেছে, ব্যবহারকারীদের অ্যাপ ব্যবহার ‘নিয়ন্ত্রণে রাখতে’ সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে তারা এই ফিচার চালু করেছে।

টিকটক বলেছে, কিশোরদের নিজস্ব স্ক্রিন টাইম পরিচালনায় উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে তারা গত বছর একটি প্রম্পট চালুর পর নতুন এই সময়সীমা এলো। তারা আরও বলেছে, এটি তাদের স্ক্রিন টাইম ভিত্তিক টুলের ব্যবহার দুইশ ৩৪ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীর বয়স অন্তত ১৩ বছর হতে হয়। আর নতুন এই ফিচারের অংশ হিসেবে, ১৮ বছরের কম বয়সী সকল ব্যবহারকারী নিজের ‘স্ক্রিন টাইম পুনরাবৃত্তির’ জন্য সাপ্তাহিক নোটিফিকেশন পাবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

স্ক্রিন টাইমের কোনো ‘সঠিক দৈর্ঘ্য’ নেই

এই পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার পরপরই এর আওতাধীন ব্যবহারকারী স্ক্রিনে নিজের ‘টাইম লিমিট পাসকোড’ পাবেন।

নতুন এই ৬০ মিনিটের সীমাবদ্ধতা থেকে সরে এসে কেউ দৈনিক একশ মিনিট অ্যাপটি ব্যবহার করলে তিনি টিকটক থেকে একটি প্রম্পট পাবেন, যার মাধ্যমে তিনি নিজেই নিজের স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

অ্যাপে ‘ফ্যামিলি পেয়ারিং’ নামের সুবিধা ব্যবহার করা শিশুদের মা-বাবারাও স্ক্রিন টাইমের সীমা নির্ধারণ করতে পারবেন। সেইসঙ্গে তারা একটি ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করতে পারবেন, যেখান থেকে সন্তানের অ্যাপ ব্যবহারের বিস্তারিত তথ্য মিলবে।

টিকটকের নিরাপত্তা প্রধান কনম্যাক কিনান বলেন, নতুন সময়সীমা তৈরিতে বিভিন্ন গবেষকের সঙ্গে কাজ করেছে কোম্পানিটি।

“স্ক্রিন টাইমের ‘সঠিক’ সময় নিয়ে সমষ্টিগতভাবে কোনো অনুমোদিত অবস্থান বা স্ক্রিন টাইমের প্রভাব সম্পর্কেও বিস্তারিত কিছু উল্লেখ না থাকায়, আমরা এই সীমা নির্ধারণে বর্তমান একাডেমিক গবেষণা ও বস্টন চিলড্রেনস হসপিটালের ডিজিটাল ওয়েলনেস ল্যাবের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি।” --বলেন তিনি।

অ্যাপের সমালোচকরা স্ক্রিন টাইমে সময়সীমার এই সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানালেও টিকটকে কম বয়সী ব্যবহারকারীরা প্ল্যাটফর্মে যে ‘এক্সপোজার’ পায় সেই তুলনায় একে তারা ‘সামান্য’ হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।

‘ক্র্যাক কোকেইন অফ অ্যালগরিদমস’

মার্কিন অলাভজনক সংস্থা ‘সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইট’ সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে তুলে ধরেছে, টিকটকের অ্যালগরিদম তরুণদের কাছে বিভিন্ন ক্ষতিকারক কনটেন্টের বিশাল সংগ্রহ পৌঁছে দেয়।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদ বলেন,  “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের জয় করে নিয়েছে টিকটক।”

“এটি আসলে অ্যালগরিদমের ‘ক্র্যাক কোকেইন’। এটি সবচেয়ে আসক্তিমূলক, সবচেয়ে বিপজ্জনক হওয়ায় একে সবচেয়ে জরুরিভাবে মোকাবিলা করা প্রয়োজন।”

আহমেদ বিবিসিকে বলেন, গত বছরের শেষে তার সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে, টিকটকে অ্যাকাউন্ট খোলার কেবল মিনিটের মধ্যেই এক ১৩ বছর বয়সী তরুণীর নিউজ ফিডে বিভিন্ন খাদ্য সংক্রান্ত জটিলতা ও নিজের ক্ষতি করার মতো কনটেন্ট আসতে থাকে।

তিনি প্ল্যাটফর্মটিকে কেবল স্ক্রিন টাইম কমাতেই নয়, বরং বিভিন্ন ক্ষতিকারক কনটেন্টের ফিড ‘পরিষ্কার করে’ শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মনযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষা ও টিকটকের মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্সের সঙ্গে চীনের সরকারের সম্পর্ক নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই এই পদক্ষেপ এলো।

এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই পদক্ষেপ অনুসরণ করে নিজ দেশের সরকারী ডিভাইসে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করেছে কানাডার সরকার।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে টিকটক বলেছে, তারা মাসিক একশ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারীর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছেছে, যার ফলে এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক সাইটগুলোর একটি।