মাইনক্র্যাফটে পুরো পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব নির্মাণের ভাবনাটি সম্ভবত এর আগে আর কেউ বাস্তবতায় রূপ দেননি।
Published : 17 Oct 2022, 04:51 PM
জনপ্রিয় ভিডিও গেইম মাইনক্র্যাফটে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের পুরোটাই নির্মাণ করেছেন এক কিশোর। গ্রহ-নক্ষত্র, কৃষ্ণ গহ্বর থেকে শুরু করে ছায়াপথ পর্যন্ত সবই আছে ক্রিস্টোফার স্লেটনের সৃষ্টিতে।
মধ্যযুগীয় দুর্গ বা পৌরাণিক গল্পের ড্রাগনের মতো কল্পনার প্রায় সব কিছুই মনের ইচ্ছা মতো নির্মাণের সুযোগ রয়েছে মাইনক্র্যাফটে। এ সুবিধার কারণে গেইমারদের কাছে আলাদা কদর আছে গেইমটির। তবে মাইনক্র্যাফটে পুরো পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব নির্মাণের ভাবনাটি সম্ভবত আর কেউ বাস্তবতায় রূপ দেননি।
মহাবিশ্বকে মাইনক্র্যাফট সার্ভারে নির্মাণের জন্য দুই মাস সময় লেগেছে ১৮ বছর বয়সী স্লেটনের। নিজের ডেস্কটপ কম্পিউটারে পুরো মহাবিশ্ব তৈরির পর ফলাফল দেখানোর জন্য ভিডিও বানিয়ে ইউটিউব এবং রেডিটে পোস্ট করে ভাইরাল হয়েছে ওই কিশোর।
কোনো বিবেচনাতেই প্রথাগত স্পেস গেইমের তালিকায় পড়ে না মাইনক্র্যাফট। কিন্তু স্লেটন যে মডগুলো ব্যবহার করেছেন তা মাইনক্র্যাফটকে বাজারের সেরা মহাকাশ ভ্রমণকেন্দ্রীক গেইমগুলোর কাতারে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে স্পেস ডটকম।
তবে, ডেস্কটপে বসে পুরো মহাবিশ্ব নির্মাণ একেবারেই সহজ ছিল না স্লেটনের জন্য। ইউটিউব ভিডিওতেই উঠে এসেছে স্লেটনের দ্বিধান্বিত মানসিক অবস্থা; “আমার জীবন নিয়ে কী করছি আমি? আমি এই ছোট ঘরটাতে ঘামতে ঘামতে আট ঘণ্টা ধরে বসে একটি কৃষ্ণ গহ্বরের বাঁকানো সীমা আকার চেষ্টা করছি।”
মাইনক্র্যাফটের অভিষেক হয়েছে ২০০৯ সালে; গেইমটি আরও বড় পরিসরে এসেছে বাজারে ২০১১ সালে। পরিসংখ্যানবিষয়ক সাইট স্ট্যাটিসটার তথ্য বলছে বিশ্ব্যাপী মাইনক্র্যাফটের গেইমার সংখ্যা বর্তমানে ১৪ কোটিরও বেশি।
“মহাবিশ্বের ক্ষমতা আর বিশালতা নিয়ে সবাই অনেক আলোচনা করে, যা প্রথমে আমি নিজেই বুঝতাম না। কিন্তু মাইনক্র্যাফটে মহাবিশ্ব নিয়ে ছয় সপ্তাহ কাজ করার পর আর ইউটিউব ভিডিও বানাতে দুই সপ্তাহ খরচ করার পর আমি বুঝতে পেরেছি যে মহাবিশ্ব আসলেই কতো সুন্দর,” নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন স্লেটন।
মহাবিশ্বের মাইনক্র্যাফট সংস্করণ নির্মাণ করতে গিয়ে স্লেটন প্রথম যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন, সেটা হলে আলোর নির্দিষ্ট কোনো সূত্র নেই এমন একটি গেইমে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলোর আলোকিত অংশ এবং অন্ধকার অংশ নির্মাণ করা। এর সমাধান করতে উজ্জ্বল রঙের ব্লক আর অন্ধকার ব্লকগুলো একটি একটি করে বসাতে হয়েছে স্লেটনকে।
শনির বলয় বানাতে গিয়েও বিপাকে পড়েছিলেন স্লেটন। “বলয়গুলোকে সঠিক দুরত্বে নিয়ে কাত করে বসাতেই আমার পুরো একদিন লেগেছে” বলে ইউটিউব ভিডিওতে উল্লেখ করেছেন স্লেটন।
ছায়াপথের মতো মহাজাগতিক কাঠামোর আকারে সামঞ্জস্য রাখতে উচ্চতর গণিতের সহযোগিতাও নিয়েছেন তিনি।
ইউটিউবে স্লেটনের গ্রাহক সংখ্যা এখন আড়াই লাখেরও বেশি। অনলাইন থেকে নিজের আয় বাড়ানো অব্যাহত রাখাই এখন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন তিনি।
আর মাইনক্রাফটের মাধ্যমে মাল্টিভার্স, মেটাভার্সসহ আরও নানা চমকপ্রদ সৃষ্টির পরিকল্পনা করছেন এই কিশোর।
“আমি সত্যিকার অর্থেই বিনোদনমূলক গল্প বলতে চাই; যেমনটা মাইনক্র্যাফট বা সার্বিক গেইমিং কমিউনিটির কেউ আগে কখনো করেনি,” নিউ ইয়র্ক টাইমসে বলেছেন তিনি।