এক বছরের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় হারল গুগল। অনলাইন সার্চেও কোম্পানিটি একচেটিয়া কর্তৃত্ব ফলায় বলে আগের মামলায় রায় হয়েছে।
Published : 19 Apr 2025, 02:04 PM
অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রযুক্তিতে সার্চ জায়ান্ট গুগল একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে বলে রায় দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক।
মার্কিন বিচার বিভাগ’সহ যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি অঙ্গরাজ্য মিলে গুগলের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেছিল। তাদের যুক্তি, কোন বিজ্ঞাপন অনলাইনে কোথায় স্থান পাবে তা নির্ধারণ করে এমন প্রযুক্তিতে অবৈধভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে গুগল।
এক বছরের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় হারল গুগল। অনলাইন সার্চের ক্ষেত্রেও কোম্পানিটি একচেটিয়া কর্তৃত্ব ফলায় বলে আগের মামলায় রায়ের কথা প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
গুগল বলেছে, আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবে তারা।
নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে গুগলের শীর্ষ কর্মকর্তা অ্যান মুলহল্যান্ড বলেছেন, “প্রকাশকদের কাছে অনেক বিকল্প থাকার পরও তারা গুগলকে বেছে নেন। কারণ, আমাদের বিজ্ঞাপন প্রযুক্তির বিভিন্ন টুল সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর।”
যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট বিচারক লিওনি ব্রিনকেমা রায়ে বলেছেন, “জেনেশুনে বাজার প্রতিযোগিতাবিরোধী বেশ কয়েকটি কাজ করেছে” গুগল, যার মাধ্যমে বাজারে “একচেটিয়া ক্ষমতা অর্জন ও তা বজায় রেখেছে” কোম্পানিটি।
“গুগলের এমন ব্যতিক্রমী আচরণ প্রকাশক ও গ্রাহকদের, প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া ও শেষ পর্যন্ত উন্মুক্ত ওয়েবে তথ্য ভোক্তাদের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে।”
গুগল দুটি ক্ষেত্রে হেরেছে এবং তৃতীয় অভিযোগটি খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
“আমরা এই মামলার অর্ধেক জিতেছি এবং বাকি অর্ধেকের ক্ষেত্রে আমরা আপিল করব,” বলেছেন মুলহোল্যান্ড।
“আদালত খতিয়ে দেখেছে আমাদের বিজ্ঞাপনদাতাদের টুল ও ডাবলক্লিক-এর মতো কোম্পানি অধিগ্রহণের বিষয়টি বাজার প্রতিযোগিতার ক্ষতি করে না।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়া স্কুল অফ ল’-এর অধ্যাপক লরা ফিলিপস-সয়্যার বলেছেন, এই রায় মার্কিন অ্যান্টিট্রাস্ট প্রয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়।
“বিভিন্ন এজেন্সি কেবল মামলা করতেই ইচ্ছুক নয় বরং বিচারকরা বড় বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগও করতে চায়– এ মামলা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে,” বলেছেন লরা।
তিনি আরও বলেন, এই রায় গুরুত্বপূর্ণ এক আইনি নজির স্থাপন করেছে, যা কর্পোরেট আমেরিকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
গুগলের আইনজীবীদের যুক্তি, মামলাটিতে কেবল গুগলের অতীত কার্যকলাপের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সরকার পক্ষ এবং বাজারে অ্যামাজনের মতো অন্যান্য বড় বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি সরবরাহকাকে উপেক্ষা করেছেন তারা।
অনলাইন প্রকাশকদের প্রতিনিধিত্বকারী এক বাণিজ্য সংঘ ‘ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সট’-এর প্রধান জেসন কিন্ট বলেছেন, “বারবার বাজার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজেদের পণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ও উদ্ভাবনকে দমন করছে গুগল। আর বিশ্বজুড়ে প্রিমিয়াম প্রকাশকদের সাংবাদিকতা ও বিনোদন বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে কোম্পানিটি।”
অনলাইন বিজ্ঞাপন বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষেরই বড় বিভিন্ন কোম্পানির মালিক গুগল। সেইসঙ্গে কোম্পানিটির বিজ্ঞাপন বিনিময় চর্চা, যা চাহিদা ও সরবরাহের সঙ্গে মেলে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
‘জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি’র আইন ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক অনুপম চান্দর বলেছেন, “গুগলের বিজ্ঞাপন বাণিজ্যে কাঠামোগত পরিবর্তনের আদেশ দিতে পারেন বিচারক, যা গুগলের মূলধনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে তা বিজ্ঞাপন ব্যবসায় মধ্যস্বত্বভোগী হিসাবে কোম্পানিটির ওপর তেমন হুমকি তৈরি করবে বলে মনে হচ্ছে না।”
বিবিসি লিখেছে, অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার চলমান এই সিরিজে মার্কিন সরকারের যুক্তি, গুগল ও এর মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটকে ভেঙে ফেলা উচিত। যার মধ্যে ক্রোম ব্রাউজারের মতো কোম্পানির কিছু অংশ বিক্রির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
‘নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র অর্থনীতির অধ্যাপক জন কোওকা বলেছেন, মার্কিন মামলাটি এখন দ্বিতীয় ‘প্রতিকারের’ পর্যায়ে চলে যাবে। যার ফলে ভেঙে যেতে পারে অ্যালফাবেট।
এদিকে, গত সপ্তাহে অনলাইন সার্চ বাজারে নিজেদের প্রভাবশালী অবস্থানের অপব্যবহারের অভিযোগে অ্যালফাবেটের গুগলের বিরুদ্ধে ব্রিটেনে ছয়শ ৬০ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা হয়েছে দেশটির ‘কম্পিটিশন আপিল ট্রাইব্যুনাল’-এ।