প্রার্থীদের পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে নিজ নিজ পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
Published : 20 Apr 2025, 10:12 PM
মে মাসের ৮ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার হলে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগেই ঢুকতে হবে পরীক্ষার্থীদের।
রোববার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, নির্ধারিত দিনে সকাল ১০টা থেকে লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে। পৌনে ১০টার পর কোনো প্রার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে।
৮ থেকে ১৯ মে চলবে ৪৬তম বিসিএসের অবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা। গত ১৩ মে কমিশন জানিয়েছিল, এ বিসিএসের পদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর পরীক্ষা জুনের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়ে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে।
সময় হাতে নিয়ে কেন্দ্রে আসার পরামর্শ
রোববার প্রকাশিত আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসির পক্ষ থেকে লিখিত পরীক্ষার প্রার্থীদের পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে নিজ নিজ পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
কমিশন বলছে, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি’ এড়িয়ে চলতে হাজিরা তালিকায় প্রার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বর জোড় ও বিজোড়ে বিন্যাস্ত করে এবং প্রতিটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর কক্ষওয়ারি দৈবচয়নের ভিত্তিতে সাজিয়ে হাজিরা তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় আসন ও কক্ষ খুঁজে পাওয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় সময় হাতে নিয়ে নিজ নিজ পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে বলা হয়েছে প্রার্থীদের।
পরীক্ষায় নিয়ে যত নির্দেশনা
রোববার প্রকাশিত অপর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রার্থীদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে পিএসসি।
এতে বলা হয়েছে, পরীক্ষা হলে বই-পুস্তক, সকল প্রকার ঘড়ি, মোবাইল ফোন, সায়েন্টিফিক প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড সদৃশ কোন ডিভাইস, গহনা, ব্রেসলেট ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পরীক্ষা হলের গেটে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশের উপস্থিতিতে প্রবেশপত্র এবং মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে মোবাইল ফোন, ঘড়ি, ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ নিষিদ্ধ সামগ্রী তল্লাশির মধ্য দিয়ে প্রার্থীদের পরীক্ষা হলে প্রবেশ করতে হবে।
পরীক্ষার দিন এসব নিষিদ্ধ সামগ্রী সাথে না আনার জন্য সব প্রার্থীর মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হবে। ওই এসএমএসের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
কমিশন জানিয়েছে, পরীক্ষার সময় প্রার্থীরা কানের ওপর কোন আবরণ রাখবেন না, কান খোলা রাখতে হবে। কানে কোনো ধরনের হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শপত্রসহ আগে থেকে কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে।
পিএসসি বলছে, পরীক্ষার হলে কোনো প্রার্থীর কাছে নিষিদ্ধ সামগ্রী পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
একইসঙ্গে ভবিষ্যতে পিএসসির সব নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ওই প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন, ২০২৩ এর ধারা-১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ অনুযায়ী কোনো অপরাধ করলে বা অপরাধে সহায়তা করলে, নির্ধারিত ধারায় দণ্ডিত হবেন।
বিসিএসের জট নিরসনের চেষ্টায় পিএসসি
৪৪তম বিসিএসের ভাইভা চলছে। এরমধ্যে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়েছে। আর ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা গত বছর জানুয়ারিতে হলেও এখনও ফল প্রকাশ পায়নি। এদিকে আগামী ৮ অগাস্ট ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে পিএসসি।
প্রার্থীদের একাংশ ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন। তারা ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা শেষে এবং ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এ পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, তাদের অনেকেই এ তিন বিসিএসের প্রার্থী, তাই মৌখিক পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষার কারণে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা ধারাবাহিকভাবে বিসিএসের কার্যক্রম চালানোর দাবি জানিয়েছেন।
এমন বাস্তবতায় পিএসসি বলেছে, বিসিএসের এ জট নিরসনে কমিশন সর্বোচ্চে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১৩ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন জানিয়েছে, বিসিএস প্রার্থীদের উদ্বেগ বিবেচনায় রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান জট সমাধানের জন্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন সবোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য অপরিহার্য কিছু বিষয় যেমন প্রশ্নপত্র ছাপানো, পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনায় কমিশনকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করতে হয়।
২২ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত থাকবে এবং স্থগিত মৌখিক পরীক্ষাগুলো ১৬ জুনের পরে দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হবে। স্থগিত মৌখিক পরীক্ষাগুলোর পরিবর্তিত সূচি অতিসত্বর জানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কমিশন।
২০২১ সালে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা এক দফায় শুরু হলেও গত ১৮ নভেম্বর তা বাতিল ঘোষণা করে পিএসসি। পরে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ফের ভাইভা শুরু হয়।
প্রথম দফায় মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ৮ মে। মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে তা প্রথম দফায় এবং সরকার পতনের পর ২৫ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় তা স্থগিত করা হয়।
আগে ৩ হাজার ৯৩০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে মোট ১১ হাজার ৭৩২ জনের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। 'ন্যায্যতা বজায় রাখতে প্রার্থীদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে' ওই পরীক্ষা বাতিল করার কথা বলেছিল কমিশন।
৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশ করেছিল পিএসসি। ২০২৩ সালের ১৯ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ জন প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২ হাজার ৭৮৯ জন লিখিত পরীক্ষায় বসেন গত বছর ২৩ জানুয়ারি, যা শেষ হয় ৩১ জানুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। পিএসসি গত নভেম্বরে জানিয়েছে, কমিশন সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮ মে থেকে শুরুর ঘোষণা দিয়েছে কমিশন। দুই দফায় প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করার পর উত্তীর্ণ ২১ হাজার ৩৯৭ জন প্রার্থী এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি, যার প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬১ প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। ওই বছর ৯ মে প্রিলিমিনারি প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ৬৩৮ জন।
গত বছরের ২৮ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকার পরির্তনের পর অস্থির সময়ের কারণে ২৫ অগাস্ট তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
‘বৈষম্য দূরীকরণে’ প্রথম দফায় প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের সঙ্গে আরও সমসংখ্যক প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে ফের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে গত ১৮ নভেম্বর ঘোষণা দেয় পিএসসি।
পরে গত ২৭ নভেম্বর আগে উত্তীর্ণ ১০ হাজার ৬৩৮ জনের সঙ্গে আরও ১০ হাজার ৭৫৯ প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল ফের প্রকাশ করেছে পিএসসি।
৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৭ জুন (শুক্রবার) হবে বলে জানিয়েছিল পিএসসি। পরে তা পিছিয়ে ৮ অগাস্ট নতুন তারিখ রাখা হয়।
৩ হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার এবং ২০১টি নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিতে গত ২৮ নভেম্বর ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পিএসসি।
গত ১০ ডিসেম্বর সকালে ১০টা থেকে অনলাইনে এ বিসিএসের আবেদনগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৯ ডিসেম্বর তা স্থগিত করে পিএসসি।
পরে গত ২৬ ডিসেম্বর ৪৭তম বিসিএসের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে আবেদন ফি ও মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) নম্বর কমানো হয়।
এ বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ করা হয়েছে। ফলে মোট নম্বর ১১০০ থেকে পরিবর্তন করে ১০০০ করা হয়েছে।
এ বিসিএসে প্রথমবারের মতো আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এ বিসিএসের আবেদন, চলে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।