টেসলা গাড়ির এফএসডি প্রযুক্তি যে শিশুদের চেনে এবং কোনো শিশু সামনে চলে এলে যে ব্রেক করে থেমে যায়, সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তিনি।
Published : 21 Aug 2022, 03:51 PM
টেসলা গাড়ির ‘ফুল সেলফ-ড্রাইভিং (এফএসডি)’ প্রযুক্তির সক্ষমতা প্রমাণে নিজ সন্তানদের সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে ফেলেছিলেন টেসলা বিনিয়োগকারী ও মডেল ৩ গাড়ির মালিক ট্যাড পার্ক। ওই ‘পরীক্ষার’ ভিডিও পার্ক ইউটিউবে পোস্ট করলেও সেটি মুছে দিয়েছে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি।
‘ডাজ টেসলা ফুল-সেলফ ড্রাউভিং বেটা রিয়ালি রান ওভার কিডস’ শিরোনামের ভিডিওটি প্রথমে পোস্ট করা হয়েছিল ইউটিউব চ্যানেল ‘হোল মার্স ক্যাটালগ’ ইউটিউব চ্যানেলে। ভিডিওতে টেসলা গাড়ির বিতর্কিত এফএসডি ফিচারের কার্যক্ষমতা নিজ সন্তানদের ওপরই পরীক্ষা করে দেখেন পার্ক।
টেসলা গাড়ির এফএসডি প্রযুক্তি যে শিশুরা সামনে চলে এলেও কাজ করে এবং শিশুদের চিহ্নিত করে ব্রেক করে থেমে যায় সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন পার্ক। ‘পরীক্ষার’ অংশ হিসেবে প্রথমবার নিজের এক সন্তানকে রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন তিনি। আর দ্বিতীয়বার রাস্তা পার হচ্ছিল তার আরেক সন্তান। দুবারেই শিশুদের কাছে পৌঁছানোর আগেই থেমে যায় তার টেসলা মডেল ৩ গাড়িটি।
পার্কের ভিডিওটি নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকে মুছে দিয়েছে ইউটিউব। ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি জানিয়েছে, ‘অপ্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক অথবা দৈহিক আঘাত পাওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেলে এমন কনটেন্টের ব্যাপারে কঠোর নীতিমালা আছে’ তাদের।
এ প্রসঙ্গে ইউটিউব মুখপাত্র আইভি চই প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জকে বলেছেন, ভিডিও দুটি ক্ষতিকর এবং বিপজ্জনক কনটেন্ট নিয়ে প্ল্যাটফর্মের নীতিমালা ভঙ্গ করেছে এবং ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে বিপজ্জনক কোনো কাজে অংশ নিতে দেখানো হচ্ছে অথবা তাদের বিপজ্জনক কাজে উদ্বুদ্ধ করে এমন কোনো কনটেন্ট নিজ প্ল্যাটফর্মে রাখে না ইউটিউব’।
তবে নিজের ভিডিওতে পার্ক দাবি করেছিলেন, “আমি এফএসডি বেটা আগেই যাচাই করে দেখেছি। আমি আমার সন্তানদের জীবন এর হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করবো না।”
“আমি আত্মসবিশ্বাসী যে এফএসডি আমার সন্তানদের চিহ্নিত করতে পারবে। আর হুইলের নিয়ন্ত্রণ আমার হাতেই থাকবে যেন যে কোনো সময় ব্রেক চাপতে পারি।”-- ভিডিওতে বলেছিলেন পার্ক।
১৮ অগাস্ট পর্যন্ত ইউটিউবে ৬০ হাজার ভিউ পেয়েছিল ভিডিওটি। ভিডিওটি পরবর্তীতে টুইটারে পোস্ট করা হয়েছে এবং এখনও মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মে আছে ভিডিওটি।
টুইটারে ভিডিওটি থাকা বা না থাকার বিষয়ে জানতে মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর পায়নি ভার্জ।
পার্ক হঠাৎ করে নিজের সন্তানদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে টেসলার কার্যক্ষমতা প্রমাণে তৎপর হয়েছিলেন টুইটারের একটি বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেইনের ভিডিওর কারণে। ওই ভিডিওর বক্তব্য ছিল, শিশুদের সমান আকৃতির ডামি চিহ্নিত করতে পারছে না টেসলার এফএসডি প্রযুক্তি।
টেসলা ভক্তরা ভিডিওটি বিশ্বাস না করলেও এফএসডির সক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল টুইটারে।
পার্কের ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেইফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনএইচটিএসএ)’ বলেছে, “স্বয়ংক্রিয় যানের কোনো প্রযুক্তির সক্ষমতা যাচাই করতে কারও নিজের জীবন বা অন্য কারও জীবন ঝুঁকিতে ফেলা উচিত নয়। ক্রেতাদের কখনোই জীবন্ত মানুষ, বিশেষ করে কোনো শিশুর অংশগ্রহণে নিজেই যানের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করার চেষ্টা করা উচিত নয়।”
অন্যদিকে এফএসডি নিয়েও বিতর্ক আছে। টেসলা এ প্রযুক্তিকে ‘ফুল-সেলফ ড্রাইভিং’ নাম দিলেও গাড়িকে সম্পূর্ণ স্বনিয়ন্ত্রিত করে না এই প্রযুক্তি। আর এফএসডি সিস্টেম চালু থাকলেও গাড়ির হুইলে চালকের হাত থাকা বাধ্যতামূলক।
অন্যদিকে টেসলার অটোপাইলট এবং এফএসডি প্রযুক্তির কার্যক্ষমতা নিয়ে তদন্ত করে দেখছে এনএইচটিএসএ। জুন মাসেই সংস্থাটি জানিয়েছিল, ২০২১ সালের ২০ জুলাই থেকে ২০২২ সালে ২১ মে পর্যন্ত ২৭৩টি দুর্ঘটনায় পড়েছিল টেসলার অটোপাইলট নিয়ন্ত্রিত গাড়ি।
এনএইচটিএসএ যে দুর্ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত করছে তার মধ্যে প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভার্জ।