বৃহস্পতিবার উৎক্ষেপিত এই মহাকাশ যাত্রায় ছিলেন রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন করে ও নাসার দুই নভোচারী।
Published : 02 Mar 2023, 04:39 PM
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে চারজন নভোচারী নিয়ে রওনা হয়েছে ইলন মাস্ক মালিকানাধীন রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স-এর রকেট।
বৃহস্পতিবার উৎক্ষেপিত এই মহাকাশ যাত্রায় ছিলেন রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন করে ও নাসার দুই নভোচারী।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই যাত্রার মহাকাশযানে একটি ফ্যালকন ৯ রকেটের সঙ্গে যুক্ত আছে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে চালিত ‘এন্ডেভার’ নামের ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুল। পূর্বাঞ্চলীয় (নিউ ইয়র্ক) সময় রাত ১২টা ৩৪ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা ৩৪ মিনিটে) ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপিত হয় এটি।
নাসার সরাসরি ওয়েবকাস্টে দেখা যায়, এই ২৫তলা দীর্ঘ মহাকাশযান যখন লঞ্চ টাওয়ার থেকে এক লাখ ৭০ হাজার পাউন্ডের ধাক্কা দিয়ে উৎক্ষেপিত হয়, তখন এর মার্লিন ইঞ্জিনের গর্জনে বাষ্পের মেঘ তৈরির পাশাপাশি একটি লালচে আগুনের গোলা ভোরের পূর্ব আকাশকে আলোকিত করে তুলেছে।
প্রাথমিকভাবে এটি উৎক্ষেপিত হওয়ার কথা ছিল সোমবার। তবে, কাউন্টডাউন শুরুর কয়েক মিনিট আগে এর ‘ইঞ্জিন-ইগনিশন ফ্লুইড’ প্রবাহ বাধার মুখে পড়ায় অভিযানটি ৭২ ঘণ্টা পিছিয়ে যায়।
নাসা বলেছে, আটকে থাকা এক ফিল্টার প্রতিস্থাপন ও এর সিস্টেম পরিষ্কার করে এর সমাধান মিলেছে।
বৃহস্পতিবারের উৎক্ষেপণের নয় মিনিট পর, রকেটের ওপরের অংশ ক্রু ড্রাগনকে প্রাথমিক কক্ষপথে পৌঁছে দেয় কারণ এটি মহাকাশে চলাচল করে শব্দের চেয়ে ২০ গুণেরও বেশি গতিতে।
নিম্ন স্তরের পুনর্ব্যবহারযোগ্য ফ্যালকন বুস্টারটি এরইমধ্যে পৃথিবীতে ফিরে আটলান্টিক মহাসাগরে ভাসমান ‘জাস্ট রিড দ্য ইন্সট্রাকশনস’ নামের এক উদ্ধারকারী জাহাজে নিরাপদে অবতরণ করেছে।
ক্যাপসুলটি মহাকাশ কক্ষপথে পৌঁছানোর কিছু সময় পর এক স্পেসএক্স অভিযান নিয়ন্ত্রক রসিকতা করে বলেন, ‘আপনাদের এই যাত্রা পছন্দ হলে, আমাদের ফাইভ স্টার দিতে ভুলবেন না।”
এই অভিযানের কমান্ডার, নাসার নভোচারী স্টিফেন বোয়েন এর জবাবে বলেন, “আজকে কক্ষপথে যাওয়ার জন্য আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস), পৃথিবীর চেয়ে প্রায় চারশ ২০ কিলোমিটার দূরের এই গবেষণাগার ভ্রমণে প্রায় ২৫ ঘন্টা সময় লাগবে বলে ধারণা ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটি মহাকাশ স্টেশনে মিলিত হতে পারে শুক্রবার পূর্বাঞ্চলীয় সময় রাত একটা ১৫ মিনিটে।
রয়টার্স বলছে, ছয় মাস দীর্ঘ এই বৈজ্ঞানিক অভিযানে নভোচারীদের দল প্রায় দুইশটি পরীক্ষা ও প্রযুক্তির নমুনা পর্যবেক্ষণ করবে। এর মধ্যে আছে, মহাকাশে মানব কোষের বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা থেকে শুরু করে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে দাহ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলো।
‘ক্রু ৬’ নামের এই অভিযানে, ইলন মাস্কের স্পেসএক্স রকেট সেবা চালুর পর থেকে এই নিয়ে ষষ্ঠবার দীর্ঘমেয়াদী আইএসএস দল পাঠিয়েছে নাসা। ২০২০ সালের মে মাস থেকে এই রকেট কোম্পানির সহায়তায় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে মার্কিন নভোচারী পাঠাতে শুরু করে মহাকাশ গবেষণায় এই বাণিজ্যিক কোম্পানি।
নাসার সর্বশেষ এই আইএসএস ক্রু মিশনের নেতৃত্বে ছিলেন এক সময় মার্কিন নৌবাহিনীর সাবমেরিন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৫৯ বছর বয়সী স্টিফেন বোয়েন। তিনটি স্পেস শাটল ফ্লাইট ও সাতটি স্পেসওয়াকের একজন অভিজ্ঞ নভোচারী হিসাবে তিনি মহাকাশে ৪০ দিনেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন।
তার সহযোগী নাসা নভোচারী ৩৭ বছর বয়সী ওয়ারেন ‘উডি’ হোবার্গ এই অভিযানের পাইলট হিসেবে মনোনিত হয়েছেন। এর আগে একজন প্রকৌশলী ও বাণিজ্যিক বিমানচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হোবার্গে এটিই প্রথম মহাকাশযাত্রা।
এই মিশনে আরও আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৪১ বছর বয়সী নভোচারী সুলতান আলনেয়াদি। নিজ দেশ থেকে, মহাকাশে পাড়ি জমানো দ্বিতীয় ব্যক্তি হওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমি থেকে দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ স্টেশন দলে সুযোগ পাওয়া প্রথম ব্যক্তি তিনি।
এই মিশনের চতুর্থ সদস্য হলেন রাশিয়ার ৪২ বছর বয়সী কসমনট আন্দ্রেই ফেদিইয়েইভ। আলনেয়াদির মতো তিনিও একজন প্রকৌশলী ও আনেকোড়া মহাকাশ যাত্রী, যিনি দলের মিশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে মনোনিত হয়েছেন।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন নিয়ে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে চলমান উত্তেজনার পরও, ফেডিয়ায়েভ হলেন দ্বিতীয় নভোচারী, যিনি নাসা ও রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমসের ২০২২ সালের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত নতুন এক রাইড-শেয়ারিং চুক্তির অধীনে কোনো মার্কিন মহাকাশযানে যাত্রা করলেন।
মহাকাশ স্টেশনে ক্রু ৬ দলের সদস্যদের স্বাগত জানাবেন এরইমধ্যে সেখানে থাকা সাতজন নভোচারী। এর মধ্যে আছেন প্রথম আদিবাসী মার্কিন নারী হিসেবে মহাকাশে যাত্রা করা কমান্ডার নিকোল আউনাপু মান’সহ নাসার তিন সদস্যের পাশাপাশি তিনজন রাশিয়া ও জাপানের একজন করে নভোচারী।
মহাকাশ স্টেশনের দৈর্ঘ্য প্রায় একটি ফুটবল মাঠের সমান। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার যৌথ নেতৃত্বে কানাডা, জাপান’সহ ১১টি ইউরোপীয় দেশের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এটি।