ক্যাসিও যখন ঘড়ির বাজারে প্রবেশ করে, তখন এর পরিচিতি দাঁড়ায়, কোম্পানিটি সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো ঘড়ি তৈরি করে। সুপরিচিত এ ঘড়ি নির্মাতা এ বছর ৫০তম বছরে পা রেখেছে।
Published : 02 May 2024, 04:10 PM
এফ-৯১ বলার সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ হয়ত ধরতে পারবেন কোন জিনিসটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে। তবে, অধিকাংশই সম্ভবত উচ্ছাস প্রকাশ করবেন ছবি দেখার পর। নস্টালজিকও হতে পারেন। এটি সম্ভবত মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘড়ি।
শিক্ষাজীবন পেরিয়ে পেশাদার জীবনে প্রবেশ করেছেন এমন যে কারো ছাত্রজীবনের সঙ্গে যে ব্র্যান্ডটি জড়িয়ে আছে সেটি ক্যাসিও। সবচেয়ে সস্তার, ও সঠিক সময় দেওয়া ঘড়ি।
হ্যাঁ, পপ কালচার জগতে কয়েক দশক ধরেই সুপরিচিত ঘড়ি নির্মাতা ক্যাসিও এ বছর ৫০তম বছরে পা রেখেছে।
১৯৮৫ সালের সিনেমা ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’-এর মূল চরিত্র মার্টিন ম্যাকফ্লাইকে যে কালো রঙের ‘ক্যাসিও সিএ৫৩ডব্লিউ’ ক্যালকুলেটর ঘড়ি পরতে দেখা গেছে, তা এখনও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
এমনকি ২০২৩ সালের ব্ল্যাক কমেডি সিনেমা ‘সল্টবার্ন’-এর অভিনেতা ব্যারি কিউগনের ধূর্ত চরিত্রকে যে ডিজিটাল স্টেইনলেস স্টিলের ক্যাসিও ঘড়ি পরতে দেখা গেছে, সেটির বাজারমূল্য ৪৫ ডলার।
এ ছাড়া, ১৯৯৪ সালের অ্যাকশন সিনেমা ‘স্পিড’-এর একটি দৃশ্যে জনপ্রিয় অভিনেতা কিয়ানু রিভসের কব্জিতে দেখা গিয়েছিল ক্যাসিও’র ক্লাসিক ‘জি-শক ডব্লিউ-৫৬’ মডেলের ঘড়ি, যেখানে তাকে টাইম বোমা সেট করা একটি বাস চালাতে দেখা যায়।
“এই দৃশ্যটি ক্যাসিও’র ঘড়িকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে,” বলেন ক্যাসিও’র পণ্য পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রযোজক শিনজি সাইতো।
“এটি একটি ফ্যাশন আইকনে পরিণত হয়েছে, যার মাধ্যমে লোকজনের মধ্যে ক্যাসিও’র ঘড়ি কেনার ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল।”
এদিকে, নিজেদের ৫০তম বর্ষপূর্তিতে গ্রাহকদের সেই শুরুর দিনে ফিরিয়ে নিতে চাইছে ক্যাসিও। ফেব্রুয়ারিতে বাজারে নতুন করে ‘ক্যাসিওট্রন টিআরএন-৫০’ মডেল উন্মোচন করেছে কোম্পানিটি, যা আসলে ১৯৭৪ সালে বাজারে আসা ক্যাসিও’র প্রথম হাতঘড়ির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী। এমনকি এর দামেও আসল মডেলটির সঙ্গে মিল রাখা হয়েছে, যার বাজারমূল্য ছিল ৫৮ হাজার ইয়েন (প্রায় ৩৭৫ ডলার)।
“এই প্রকল্প নিয়ে যখন কথা চলছিল, তখন আমরা এর মূল মডেলটি খুঁজে পাইনি,” বলেন সাইতো।
এজন্য তাদেরকে টোকিও’র ‘তোশিও কাশিও মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অফ ইনভেনশন’ থেকে এর একটি মডেল ধার নিতে হয়েছিল।
“এর কারণ ছিল, আমরা যেন মূল ডিজাইনের প্রতি ঠিকঠাক শ্রদ্ধা জানাতে পারি।”
এদিকে, প্রযুক্তি সাইট জিকিউ’কে ক্যাসিওট্রনের একটি গাঢ় নীল রঙের স্বতন্ত্র ডায়ালওয়ালা মডেলও দেখিয়েছেন সাইতো।
“এটি আমাদের কাছে থাকা আসল ডায়াল। পার্থক্য হচ্ছে এতে আমরা সোলার প্যানেল যোগ করেছি।”
এ ছাড়া, ঘড়িটিতে একটি স্মার্টফোনের লিংক ও রেডিও তরঙ্গ গ্রহণের ব্যবস্থাও যোগ করা হয়েছে।
“এটা দেখতে একই। কিন্তু আমরা এতে নতুন প্রযুক্তি যোগ করেছি, যার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের কাছে ক্যাসিও’র আরও আপগ্রেডেড পণ্য পৌঁছাতে চেয়েছি।”
তবে ঘড়িটি পেতে কপালের জোর লাগবে। কারণ, মডেলটির মাত্র চার হাজার পিস তৈরি করা হয়েছিল, যেগুলো উন্মোচনের কয়েক মিনিটেই বিক্রি হয়ে যায়।
ক্যাসিও যখন ঘড়ির বাজারে প্রবেশ করে, তখন এর পরিচিতি দাঁড়ায়, কোম্পানিটি সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো ঘড়ি তৈরি করে।
“যেহেতু আমরা এ খাতে নতুন ছিলাম, তাই আমাদের নিশ্চিত করতে হয়েছে, আমাদের পণ্য যেন কম দামে পাওয়া যায়। এ পন্থা অবলম্বন করেই আমরা এ বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে চেয়েছি। আমরা অনেক প্লাস্টিকের উপাদান ব্যবহার করেছি। আর দেখিয়েছি, কোয়ার্টজের ডিজিটাল ঘড়ির মাধমে কী করা সম্ভব।” বলেন সাইতো।
নিজস্ব পণ্যে ক্যালকুলেটার, পালস মাপার ডিভাইস, স্টপওয়াচের মতো বেশ কিছু সুবিধা যোগ করে বিবর্তিত হয়েছে ক্যাসিও।
এর মধ্যে বিশাল রূপান্তর ঘটানো জি-শক সিরিজটি এসেছিল ১৯৮৩ সালে।
সাইতো আরও বলেন, জাপানে তৈরি জি-শক ক্যাসিও’র জনপ্রিয়তার প্রথম ধাপ ছিল।
“১৯৮৪ সালে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশনে এমন এক বিজ্ঞাপন এনেছিলাম, যেখানে জি-শক’কে দেখা গেছে আইস হকি গেইমের ‘পাক’ হিসেবে, যেটিতে হকি স্টিক দিয়ে বাড়ি দিলেও তা ভেঙে যায় না। জি-শকের সামগ্রিক ধারণাও ছিল এটি, যেখানে দেখা গেছে, এটা সত্যিই খুব মজবুত ও শক-প্রতিরোধী ঘড়ি।”
“সে সময় ক্যাসিও’র জি-শক শ্রেণির ঘড়ি জাপান থেকে আমদানি করা হতো আমেরিকান সংস্কৃতির একটি আইকন হিসেবে। এমনকি জাপানের শিবুয়া শহরের তরুণ গ্রাহকদের কাজেও জনপ্রিয় ছিল এটি, যা জি-শককে জাপানে পুরোপুরি নতুন এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল।”
প্রতিবেদনে জিকিউ বলছে, বাজারে কোন ট্রেন্ড চলছে, সেটি অনুসরণ করে কখনওই ঘড়ি বানায়নি ক্যাসিও।
“আমাদের লক্ষ্য ছিল, আমরা বিশ্বে কী ধরনের নতুন পণ্য আনতে পারি ও এতে কী ধরনের নতুন প্রযুক্তি ও উপাদান যোগ করতে পারি।”
এদিকে, কয়েক সপ্তাহ পরপরই ক্যাসিও’র বিভিন্ন নতুন মডেল বাজারে এলেও এখনও ক্যাসিও’র সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ঘড়ি হল জি-শক, যা প্রায়শই বিভিন্ন জনপ্রিয় তারকার কব্জিতে দেখা যায়।
উদাহরণ হিসেবে, মার্কিন র্যাপ তারকা এমিনেমকে লাল রঙের ফ্রগম্যান ঘড়ি পরতে দেখা গেছে। এমনকি ‘হাইয়ার’ শিরোনামের এক মিউজিক ভিডিও’তে সোনার প্রলেপওয়ালা ‘জিএম১১০জি-১এ৯’ মডেলের ঘড়ি পরেছিলেন তিনি।
এ ছাড়া, মার্কিন র্যাপার টাইলার দ্য ক্রিয়েটর, অভিনয়শিল্পী রায়ান গসলিং ও ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টও ক্যাসিও’র ভক্ত।
এমনকি স্প্যানিশ ফুটবলার জেরার্ড পিকেকে উদ্দেশ্যে তৈরি ‘ডিস ট্র্যাক’-এও ক্যাসিও’র নাম উল্লেখ করেছিলেন ‘হোয়েনেভার’ খ্যাত কলম্বিয়ান পপ তারকা শাকিরা। তবে, এর জবাবে তৈরি এক বিজ্ঞাপনে পিকে দাবি করেন, ক্যাসিও’র ডিজিটাল ঘড়ি ‘এক জীবদ্দশা পর্যন্ত’ টিকে থাকতে সক্ষম।