নতুন পদ্ধতিটি জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহার করে বর্জ্য তেল ও কম তাপমাত্রা, যা প্রচলিত বিভিন্ন প্রক্রিয়া তুলনায় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
Published : 12 Nov 2024, 07:27 PM
সম্প্রতি বর্জ্য তেল থেকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বায়োডিজেল তৈরির নতুন এক উপায় বা পদ্ধতি খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বর্জ্য তেল থেকে বায়োডিজেল তৈরির এই যুগান্তকারী উপায় তৈরি করেছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান্তা ক্রুজ’-এর রসায়নবিদদের একটি দল, যেখানে পরিবেশবান্ধব বায়োডিজেল তৈরির প্রক্রিয়াটিকে করে তোলা হয়েছে আরও সহজ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
বায়োডিজেল এক ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যা ব্যবহার হয়ে থাকে ট্রাক, ট্রেন ও জাহাজের মতো যানবাহনে। জ্বালানি থেকে পরিবেশে কম কার্বন নির্গমন ঘটায় এই নতুন উপায়ে তৈরি বায়োডিজেল। বর্তমানে পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ কার্বন।
২০২২ সালে মার্কিন পরিবহন খাত একাই প্রতিদিন ব্যবহার করেছে প্রায় ৩০ লাখ ব্যারেল ডিজেল, যা দেশটির মোট ডিজেল ব্যবহারের ৭৫ শতাংশের জন্য দায়ী। এর ফলে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
ইভি বা বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি জনপ্রিয়তা পেলেও বেশিরভাগ যানবাহন ও শিপিং শিল্প এখনও ডিজেলের উপর নির্ভর করে করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
জ্বালানি হিসেবে ডিজেলের বদলে বায়োডিজেলের ব্যবহার ভাল বিকল্প হলেও প্রচলিত বায়োডিজেল তৈরির বিষয়টি বেশ জটিল, ব্যয়বহুল ও বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন। আর এ বিষয়টিই জ্বালানি হিসেবে বায়োডিজেল ব্যবহারে বড় চ্যালেঞ্জ।
কম সময়ে ও কম তাপমাত্রায় ব্যবহৃত বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেলকে বায়োডিজেলে পরিণত করার এ প্রক্রিয়ায় ‘সোডিয়াম টেট্রামেথক্সাইবোরেট বা এনএবি (ওএমই)৪’ নামের এক রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
এ যৌগটিকে কেবল বর্জ্য তেলের উপর ঢেলে দিলেই তা জ্বালানিকে সহজে অন্যান্য উপজাত থেকে আলাদা করতে সহায়তা করে, যা বায়োডিজেলের পরিশোধনকে আরও সহজ ও দ্রুত করে তোলে।
এ পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, এটি কম তাপমাত্রায় অর্থাৎ ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় কাজ করতে পারে, যার মাধ্যমে সাশ্রয় হবে বিদ্যুৎ ও অর্থ উভয়ই।
এ ছাড়া, এ প্রক্রিয়ায় জ্বালানির উপজাত হিসেবে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে দামি উপাদানটিকে পুনরায় তৈরি করা যেতে পারে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি সাশ্রয়ী হয়ে উঠবে নতুন প্রক্রিয়াটি।
“বায়োডিজেলের প্রতি আমি সবসময় আগ্রহী,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান গবেষক কেভিন লফগ্রেন।
“নতুন যৌগটি নিয়ে পরীক্ষা শুরুর সময় আমি দেখতে চেয়েছি, বায়োডিজেল তৈরিতে এটি উদ্ভিজ্জ তেলের চর্বি ভেঙে ফেলতে পারে কি না। আর সেখান থেকেই এই নতুন পদ্ধতির শুরু।”
বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধটিতে বায়োডিজেল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপ এবং উপজাত হিসাবে এটি তৈরি করে সাবান, যা জ্বালানির পরিশোধনকে আরও কঠিন করে তোলে।
এর বদলে নতুন পদ্ধতিটি জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহার করে বর্জ্য তেল ও কম তাপমাত্রা, যা প্রচলিত বিভিন্ন প্রক্রিয়া তুলনায় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।