গত কয়েক বছর ধরে করা বিভিন্ন গবেষণায় শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গেই, এমনকি রক্তের প্রবাহে ও ধমনীতে আটকে থাকা প্লাকে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান মিলেছে।
Published : 23 Sep 2024, 01:32 PM
এবার মৃত মানবদেহের মস্তিষ্কের টিস্যুতে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা পাওয়ার দাবি করেছেন ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা।
তাদের এ গবেষণাটি সোমবার প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জামা নেটওয়ার্ক’-এ।
গত কয়েক বছর ধরে করা বিভিন্ন গবেষণায় শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গেই, এমনকি রক্তের প্রবাহে ও ধমনীতে আটকে থাকা প্লাকে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান মিলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
আর এই প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা মানুষের মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে কিনা তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা।
সর্বশেষ এ গবেষণায় মানবদেহের মস্তিষ্কের ‘অলফ্যাক্টরি বাল্ব’ নামে একটি অংশের দিকে নজর দেন গবেষকরা। মস্তিষ্কের এ অংশটি মানুষকে গন্ধ সম্পর্কে তথ্য বা ধারণা দিয়ে থাকে। মানুষের দুটি ‘অলফ্যাক্টরি বাল্ব বা ঘ্রাণ বাল্ব’ রয়েছে, যেগুলো নাক থেকে গন্ধ সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ করে ও ঘ্রাণতন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠায়।
কিছু গবেষক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মস্তিষ্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পৌঁছানোর জন্য একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করতে পারে এমন অলফ্যাক্টরি বাল্বের পথ।
“মানুষ ও প্রাণীর উপর করা আগের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ু দূষণের বিষয়টি মস্তিষ্কে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এবং সেই কণা পাওয়া গেছে অলফ্যাক্টরি বাল্বে। আর এ কারণেই আমাদের ধারণা, সম্ভবত মাইক্রোপ্লাস্টিকের মস্তিষ্কে পৌঁছানোর প্রথম কয়েকটি পয়েন্টের মধ্যে একটি অলফ্যাক্টরি বাল্ব,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ব্রাজিলের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাও পাওলো মেডিক্যাল স্কুল’-এর প্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. থাইস মাউয়াদ।
গবেষণার জন্য ৩৩ থেকে ১০০ বছর বয়সের মধ্যে মারা গেছেন এমন ১৫টি মৃতদেহের অলফ্যাক্টরি বাল্ব টিস্যুর নমুনা নেন মাউদ ও তার গবেষণা দলটি। যার মধ্যে আটটি মৃতদেহের নমুনায় মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব কণা আকারে প্রায় ৫.৫ মাইক্রোমিটার থেকে ২৬.৪ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত ছিল।
সব মিলিয়ে টিস্যুতে ১৬টি প্লাস্টিক ফাইবার ও কণা পেয়েছেন গবেষকরা। এর মধ্যে প্লাস্টিকের সবচেয়ে ক্ষুদ্র কণাটি মানুষের লোহিত রক্তকণিকার ব্যাসের চেয়েও পাতলা, যার পরিমাপ প্রায় 8 মাইক্রোমিটার।
গবেষকরা এখানে প্লাস্টিকের সবচেয়ে সাধারণ যে ধরণটি খুঁজে পেয়েছেন সেটি হল পলিপ্রোপিলিন, এরপরে ধারাবাহিকভাবে রয়েছে পলিমাইড, নাইলন ও পলিথিলিন ভিনাইল অ্যাসিটেট।
“প্লাস্টিকের প্রোপিলিন ধরণটি আসবাবপত্র, গালিচা, জামাকাপড় সবখানেই রয়েছে,” বলেছেন মাউদ।
“যে জায়গাটিতে আমরা সবচেয়ে বেশি কণার সংস্পর্শে থাকি তা হল আমাদের বাড়ির ভেতরে। কারণ আমাদের বাড়িতে সব ধরনের প্লাস্টিকেরই দেখা মেলে।”
এদিকে, মস্তিষ্কের মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে গবেষণা করেছেন আরেক গবেষক ‘ইউনিভার্সিটি অফ নিউ মেক্সিকো’-এর টক্সিকোলজিস্ট ম্যাথিউ ক্যাম্পেন। তিনি বলেন, মস্তিষ্কের অলফ্যাক্টরি বাল্বে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির বিষয়টি ‘অনন্য হলেও খুব আশ্চর্যজনক নয়।’
“এমন প্রমাণ রয়েছে যে, খুব ছোট বায়ুবাহিত বিভিন্ন কণা অলফ্যাক্টরি বাল্বের মাধ্যমে মস্তিষ্কে যেতে পারে। তবে এটি মস্তিষ্কে উপাদান পাঠানোর প্রধান পথ হিসাবে তেমনভাবে পরিচিত নয়।”
“আমাদের অনুমান, ব্যাকটেরিয়া যদি এই পথ দিয়ে যেতে পারে তবে মাইক্রোপ্লাস্টিকও এ পথ দিয়ে যেতে পারবে।”
ক্যাম্পেন বলেন, রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি ন্যানোপ্লাস্টিকের, যা অলফ্যাক্টরি বাল্বের পরিবর্তে দেহের ফুসফুস বা পাচনতন্ত্র থেকে প্লাস্টিকের কণা তুলে নেয়। তবে রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করা কণার পক্ষে, এমনকি ফার্মাসিউটিক্যালসের জন্যও অত্যন্ত কঠিন।
কারণ ‘ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার বা রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা’ নামে একটি অর্ধভেদ্য ঝিল্লির মাধ্যমে বেষ্টিত থাকে মস্তিষ্ক। আর শরীরের মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে গবেষণার বিষয়টি এখনও নতুন এবং প্লাস্টিকের এইসব ক্ষুদ্র কণা মানুষের ‘ব্লাড-ব্রেইন-ব্যারিয়ার’ পেরিয়ে যেতে পারে কিনা তা এখনও একটি বড় প্রশ্ন।
প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত চার হাজার রাসায়নিক উপাদান ও বিভিন্ন টুকরা কীভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যা অনুমান করেন তার বেশিরভাগই প্রাণী গবেষণার মধ্যে সীমিত রয়েছে।