Published : 17 Sep 2024, 04:03 PM
টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যে আইন পাস হয়েছিল, এবার সেই আইনের বিরুদ্ধে সোমবার থেকে মামলা শুরু করছে চীনের কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন শর্ট ভিডিও অ্যাপটি।
নতুন পাশ করা মার্কিন আইনের আওতায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন অ্যাপ স্টোরে টিকটক নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, যদি না এর মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্স অ্যাপটির যুক্তরাষ্ট্র অংশের ব্যবসা অন্য কোথাও বিক্রি করে।
এজন্য কোম্পানিটিকে ২৭০ দিন বা ৯ মাস সময় বেঁধে দেওয়ার কথা প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
চীন সরকারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও মার্কিন ব্যবহারকারীদের ডেটা ঝুঁকিতে রয়েছে এমন উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে এপ্রিলে এই বিলটিকে স্বাক্ষর করে তা আইনে পরিণত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এদিকে, টিকটক ও বাইটড্যান্স বরাবরই চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিজেদের গোপন সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে এসেছে। একইসঙ্গে এই আইনটিকে ‘বাকস্বাধীনতার অধিকারের ওপর বড় আঘাত’ বলে আখ্যা দিয়েছে টিকটক।
ওয়াশিংটন ডিসির এক আপিল আদালতে তিন বিচারকের প্যানেলের সামনে নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে ১৭ কোটিরও বেশি মার্কিন ব্যবহারকারী রয়েছে বলে দাবি করা এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিটি।
কোম্পানিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই আপিলে যোগ দেবেন টেক্সাসের একজন র্যাঞ্চার ও টেনেসির এক বেকারি মালিকসহ টিকটক প্ল্যাটফর্মের জন্য কনটেন্ট তৈরি করা আট নির্মাতা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, নিজেদের পণ্য বাজারজাত করতে ও জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা টিকটকের উপর নির্ভরশীল।
এরপর নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করবেন দেশটির সরকারপক্ষের আইনজীবীরা।
ডেটা বা তথ্য নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি আমেরিকান ব্যবহারকারীর ডেটা চীনের সরকারের হাতে যাওয়ার, এমনকি সেগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর ঝুঁকি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত আমেরিকার শক্তিশালী বাক স্বাধীনতার অধিকারের সমর্থকরা বলছেন, বিভক্ত বা নিষিদ্ধ আইন বহাল রাখার মানে হবে কর্তৃত্ববাদী শাসকদের হাত শক্ত করা।
“বিশ্বের বিভিন্ন নিপীড়নমূলক সরকার যদি দেশের বাইরে থেকে তাদের নিজস্ব নাগরিকদের তথ্য, ধারণা ও মিডিয়াতে প্রবেশের অধিকারের উপর নতুন বিধিনিষেধের ন্যায্যতা প্রমাণ করার জন্য এই নজির উদ্ধৃত করে তবে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়,” বলেন ‘কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’র ‘নাইট ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট ইনস্টিটিউট’-এর স্টাফ অ্যাটর্নি জিয়াংনং ওয়াং।
একটি ‘অ্যামিকাস ব্রিফ’ দাখিল করেছে টিকটক। অর্থাৎ, এমন একজন বিশেষজ্ঞের বক্তব্য আদালতে পেশ করা হয়েছে যিনি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে মতামত দিয়েছেন।
টিকটকের সুনির্দিষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি সম্পর্কে অস্পষ্ট থাকার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের সমালোচনা করেন ওয়াং।
এদিকে, ওয়াশিংটনের ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর জেমস লুইস বলছেন, এ আইনটি খসড়া করা হয়েছিল টিকটককে বিচারিক তদন্তের আওতায় আনার জন্য।
“টিকটকের বিরুদ্ধে এ মামলার বক্তব্য খুবই শক্তিশালী। মূল বিষয়টি হল আদালত দেখবে যে, টিকটককে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কারো কণ্ঠরোধ করা করা হচ্ছে কি না।”
আপিল আদালত যেভাবেই রায় দিক না কেন বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ মামলাটি আরও দীর্ঘায়িত না হলেও কয়েক মাস ধরে চলতে পারে।