বিভিন্ন আইনী নথির ভাষা সহজভাবে শুরু হওয়া সম্ভব। তবে আরও তথ্য ও শর্ত যোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বাক্য আরও জটিল হয়ে উঠতে শুরু করে।
Published : 21 Aug 2024, 04:25 PM
বিভিন্ন আইনী দলিল বা নথি বোঝা সাধারণ লোকজনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলে খ্যাতি রয়েছে। এমনকি আইনের শিক্ষার্থীদের পক্ষেও এগুলো বোঝা বেশ কঠিন। কিন্তু কেন? কেন এসব ডকুমেন্ট এত জটিল উপায়ে লেখা হয়?
সম্প্রতি এর উত্তর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন ‘ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)’র গবেষকরা।
গবেষণা অনুসারে, আইনী নথিতে ব্যবহৃত বিভ্রান্তিকর এসব ভাষা ‘লিগ্যালিজ’ নামে পরিচিত, যা অনেকটা ‘ম্যাজিক স্পেল বা জাদু মন্ত্রের’ মতো কাজ করে।
কোনো মন্ত্রকে যেমন আরও শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ শব্দ ও বাক্যের ব্যবহার করা হয়ে থাকে ঠিক তেমনি বিভিন্ন আইনী নথিকে আরও পাণ্ডিত্যপূর্ণ করতে বিভিন্ন জটিল ভাষাকে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ। গবেষণায় দেখা গেছে, আইনী প্রশিক্ষণ নেননি এমন মানুষরাও আইন সংশ্লিষ্ট বিষয় লেখার সময় এই ধরনের রচনাশৈলী ব্যবহার করেন।
“বিভিন্ন ধরনের আইন কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে একটি না বলা নিয়ম রয়েছে, যা মানুষরা বুঝতে পারেন। তাই তারা এগুলোকে সেভাবেই লেখেন,” বলেছেন এমআইটি’র ‘ব্রেইন অ্যান্ড কগনিটিভ সায়েন্স’ বিভাগের অধ্যাপক ও এ গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক এডওয়ার্ড গিবসন।
গবেষণার প্রধান লেখক ‘হার্ভার্ড ল স্কুল’ থেকে পিএইচডি ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া এরিক মার্টিনেজ। একই সঙ্গে এই গবেষণাপত্রে অবদান রেখেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন’-এর প্রভাষক ফ্রান্সিস মল্লিকা।
আইনী ভাষার ‘মন্ত্র’
২০২০ সালে আইনী ভাষার অদ্ভুত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে এ গবেষণাটি শুরু করেন গিবসনের গবেষণা দল। সেই সময় মার্টিনেজ নিজের আইনী ডিগ্রি শেষ করার পরে এমআইটি’তে যোগ দেন।
এর আগে ২০২২ সালের গবেষণায় গিবসন, মার্টিনেজ ও মল্লিকা আইনি নথির এক বড় সংগ্রহ বিশ্লেষণ করেন, যেখানে আইন সংশ্লিষ্ট শব্দ ছিল প্রায় ৩৫ লাখ। এসব আইনী নথিকে অন্যান্য ধরনের লেখার সঙ্গে তুলনা করেছেন গবেষকরা। যেমন চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট, সংবাদপত্রের নিবন্ধ ও নানাবিধ অ্যাকাডেমিক কাগজপত্র।
গবেষণায় দেখা মিলেছে, আইনী নথির বিভিন্ন বাক্যের ঠিক মাঝখানে দীর্ঘ ও জটিল সংজ্ঞার বিষয়টি ঢোকানো থাকে। ‘সেন্টার-এম্বেডিং’ নামে পরিচিত এসব বৈশিষ্ট্য এমন কিছু যা ভাষাবিদদের ভাষায়, যে কোনো লেখাকে বোঝার জন্য আরও কঠিন করে তোলে এটি।
“অন্যান্য ভাষার কাঠামোর মধ্যে জটিল কাঠামো রাখার অভ্যাস গড়ে তুলেছে লিগ্যালিজ, যা বেশিরভাগ মানুষের ভাষার মতো সাধারণ নয়,” বলেছেন গিবসন।
২০২৩ সালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন, এ ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয় আইনজীবীদেরও।
“লিগ্যালিজ পছন্দ করেন না আইনজীবীরা। এমনকি সাধারণ মানুষও এ ভাষা পছন্দ করেন না। তাই বিভিন্ন আইনী নথি এখনও কেন জটিল ভাষায় লেখা হয় তা আমরা খুঁজে বের করতে চেয়েছি,” বলেন গিবসন।
‘কপি ও এডিট’ অনুমান
কেন ‘লিগ্যালিজ’ ভাষা এত বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে এর সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ অনুমান করেছেন গবেষকরা। যার মধ্যে একটি ধারণাকে ‘কপি অ্যান্ড এডিট হাইপোথিসিস বা অনুমান’ বলা হচ্ছে।
এ অনুমান অনুসারে, বিভিন্ন আইনী নথির ভাষা সহজভাবে শুরু হওয়া সম্ভব। তবে আরও তথ্য ও শর্ত যোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বাক্য আরও জটিল হয়ে উঠতে শুরু করে।
এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই এডিটিং প্রক্রিয়াটি ভাষাকে আরও বিভ্রান্তিকর ও ‘সেন্টার-এম্বেডিং’ বৈশিষ্ট্যের দিকে নিয়ে যায়, যা আইনী ভাষায় খুব সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।