‘ফিজিটাল’ ফ্যাশন বাজার নির্মাণের চেষ্টা করছেন কিছু উদ্যোক্তা– যেখানে ক্রেতারা একই সঙ্গে বাস্তব পৃথিবীর পোশাকের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতে নিজের অ্যাভাটারের জন্য পোশাকের ডিজিটাল সংস্করণও কিনবেন।
Published : 23 Dec 2022, 02:28 PM
বছরে নয় কোটি ২০ লাখ টন বর্জ্য আসে আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল ও ফ্যাশন শিল্প থেকে। এই শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে এখন নজর দিচ্ছেন ব্লকচেইন নির্ভর ডিজিটাল ফ্যাশনের দিকে।
ফ্যাশন পণ্যের সঙ্গে ব্লকচেইনের সংশ্লিষ্টতা আপাত দৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও, ব্যবসা সফল খাতটির সঙ্গে উদীয়মান প্রযুক্তি সমন্বয়ের অভিনব কৌশল খোঁজার চেষ্টা করছেন ফ্যাশন সংশ্লিষ্টরা।
‘ফিজিটাল’ ফ্যাশন বাজার নির্মাণের চেষ্টা করছেন তারা, যেখানে ক্রেতারা একই সঙ্গে বাস্তব পৃথিবীর পোশাকের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতে নিজের অ্যাভাটারের জন্য পোশাকের ডিজিটাল সংস্করণ কিনবেন।
নিজস্ব নকশার পোশাকের ডিজিটাল সংস্করণ নির্মাণে পশ্চিমা ফ্যাশন হাউজ এবং ব্র্যান্ডগুলোকে সহযোগিতা করছে ইতালির কোম্পানি ল্যাবলাকো। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির দুই প্রতিষ্ঠাতা লরেঞ্জো আলব্রিঘি এবং এলিয়ানা কুও উভয়ের ফ্যাশন শিল্পে কাজ করার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা আছে।
সিএনএন জানিয়েছে, ফ্যাশন শিল্পকে একটি টেকসই শিল্পখাত হিসেবে স্বীকৃতি এনে দিতে এবং ‘সার্কুলার ফ্যাশন’ বা চক্রাকার ফ্যাশন ভাবনাকে মূল ধারায় গ্রহণযোগ্যতা এনে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন ল্যাবলাকোর দুই প্রতিষ্ঠাতা। বর্জ্যের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্য মাথায় রেখে পোশাকের নকশা এবং উৎপাদন নির্ধারণের কৌশলকে ‘সার্কুলার ফ্যাশন’ হিসেবে বর্ণনা করছেন তারা।
২০১৯ সালে ‘সার্কুলার ফ্যাশন সামিট’ আয়োজন করেছিলেন আলব্রিঘি এবং কুও। অন্যদিকে ২০২১ সালে ব্লকচেইননির্ভর পোশাক ভাড়া করার ব্যবসা চালু করতে খুচরা বিক্রেতা ‘এইচঅ্যান্ডএম’-কে সহযোগিতা করেছিল ল্যাবলাকো।
ল্যাবল্যাকো প্রতিষ্ঠাতাদের দাবি, ফ্যাশন ও ডিজিটাল জগতের সমন্বয় চক্রাকার ফ্যাশন ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ।
এ কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেলে বিক্রির পরেও জোড়া হিসেবে বিবেচিত হয় পোশাকের ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল সংস্করণ। ক্রেতা যদি পোশাকের বাস্তব সংস্করণ বিক্রি করে দেন, তবে এর ডিজিটাল সংস্করণও গিয়ে জমা হয় নতুন ক্রেতার ডিজিটাল ওয়ালেটে।
আর ব্লকচেইন প্রযুক্তির স্বচ্ছতার কারণে পোশাক আদৌ আসল কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন ক্রেতা; উৎপাদকও নিজস্ব পণ্যের গন্তব্যস্থল প্রসঙ্গে অবহিত থাকার সুযোগ পাবেন।
এ প্রসঙ্গে আলব্রিঘি সিএনএনকে বলেন, “আপনি যদি পণ্য ডিজিটাইজ না করেন, তবে আপনার কাছে পরিমাপযোগ্য কোনো ডেটা থাকবে না এবং আপনি ফ্যাশনের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারবেন না।”
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কী আদৌ সম্ভব?
উদীয়মান ব্লকচেইন ও মেটাভার্স প্রযুক্তির সঙ্গে ফ্যাশন শিল্পের সমন্বয় করে এ খাত থেকে উৎপাদিত বর্জ্যের আকার কমানো সম্ভব হবে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ল্যাবল্যাকো প্রতিষ্ঠাতা কুওর মতে, বাস্তব পৃথিবীর বদলে মেটাভার্সের ডিজিটাল দুনিয়াকেই নতুন পণ্যের ‘টেস্টবেড’ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। একজন ডিজাইনার চাইলে একই নকশার পোশাক ১০টি রঙে মেটাভার্সে মুক্তি দিয়ে বিক্রির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেন। আর সে তথ্যের ভিত্তিতে বাস্তব দুনিয়ায় পোশাক উৎপাদনে যেতে পারে কোম্পানিগুলো।
“এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটা অন-ডিমান্ড মডেলে পরিণত হবে যা ফ্যাশন শিল্পের বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে পারে,” সিএনএনকে বলেছেন কুও।
ভার্চুয়াল জগতেই পোশাকের ডিজিটাল সংস্করণ পরে দেখা গেলে এর মাধ্যমে বাস্তব পৃথিবীতে বিক্রেতার কাছে ফেরত আসা পোশাকের সংখ্যাও কমানো সম্ভব হবে বলে সিএনএনকে বলেছেন আলব্রিঘি।
এছাড়া ভার্চুয়াল ফ্যাশন শো আয়োজনের মাধ্যমে এ শিল্পের প্রচার খরচ কমানো সম্ভব হবে এবং এর মাধ্যমে এ শিল্পখাতের কার্বন নিঃসরণ কমানো যাবে বলে মনে করেন দুই ফ্যাশন উদ্যোক্তার।
কিন্তু এই উদ্ভাবনী ব্যবসা কৌশলের বহুল প্রচলনের জন্য ফ্যাশন ডিজাইনারদের বিশেষ সমর্থন প্রয়োজন বলে মত আলব্রিঘির। ‘ফিজিটাল’ মডেলে একই পোশাক যতবার বিক্রি হবে, ব্লকচেইনের স্বচ্ছতার সুবাদে ততবার সেই লেনদেন থেকে রয়্যালটি পাবে নির্মাতা কোম্পানি।
এতে উৎপাদন কমবে এবং আয় বাড়বে বলে মনে করেন আলব্রিঘি। “এটা এক নতুন শিল্প খাতের সূচনা,” সিএনএনকে বলেছেন তিনি।