যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা খাতে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা বিচার করে দেখতে প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার হাতে পেয়েছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
Published : 10 Jun 2022, 04:17 PM
দ্রুত গতিতে জটিল হিসাব-নিকাশের সক্ষমতা আছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের। প্রচলিত কম্পিউটারগুলোর সক্ষমতার বাইরের সমস্যাগুলোরও এ প্রযুক্তি সমাধান করতে পারবে বলে গবেষকদের প্রত্যাশা।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা খাতে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করতে ব্রিটিশ কোম্পানি ‘অর্কা কম্পিউটিং’-এর সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার হাতে পাওয়াকে একটি মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন মন্ত্রণালয়ের ডিফেন্স সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ল্যাবরেটরির (ডিএসটিএল) জ্যেষ্ঠ গবেষক স্টিফেন টিল।
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার বাইনারি পদ্ধতিতে তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘বিট’ হিসেবে। আর কোয়ান্টাম কম্পিউটার তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘কিউবিট’ হিসেবে। এতে বাইনারি পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ আর পদার্থবিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণ কম্পিউটারের যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বছরের পর বছর সময় লাগে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দিতে পারবে কয়েক মিনিটে।
পার্থক্য আছে প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতায়?
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সম্ভাবনা বাস্তবায়নে আরও সময় লাগবে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্সের ‘সাসেক্স সেন্টার ফর কোয়ান্টাম টেকনোলজি’ প্রধান উইনফ্রিড হেনসিঙ্গার।
তার ভাষায়, “কোয়ান্টাম কম্পিউটার কার্যত এখনও কোনো ব্যবহারিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না।”
তবে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ প্রযুক্তিতে আগ্রহী হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবেই দেখছেন তিনি।
“কোয়ান্টাম কম্পিউটিং যে কোনো খাতেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। আর প্রতিরক্ষা খাতের কথা ভেবে দেখুন, এখানে অনেক জটিল বিষয় আছে, সেখানে অপটিমাইজেশন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।”
কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রচলিত ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনের চেয়ে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাজ করে। তবে, এই প্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তন, ওষুধ নিয়ে গবেষণা এবং কৃক্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার মতো জটিল বিষয়গুলোর পাশাপাশি সামরিক খাতেও বড় ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রাখে বলে উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
বর্তমান বাজারের প্রচলিত কম্পিউটারের শুরুর দিনগুলোর মতই কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তিও এমন পর্যায়ে আছে, যেখানে যন্ত্রাংশগুলো আকারে অনেক বড় এবং ওজনে ভারি। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ‘বিল্ডিং ব্লক’ হিসেবে পরিচিতি কিউবিটগুলোকে হিমায়িত করে রাখতে হয়। পুরো বিশ্বে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সংখ্যাও হাতে গোনা কয়েকটি।
তবে ওর্কার তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি খানিকটা ব্যতিক্রম বলে জানিয়েছে বিবিসি। কিউবিট হিমায়িত করে রাখার প্রয়োজন পড়ে না সেখানে।
নির্মাতা আত্মবিশ্বাসী
কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তির বাস্তবতা এবং ব্যবহারিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকলেও, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে এ প্রযুক্তির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ‘আস্থা ভোট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন অর্কা কম্পিউটিংয়ের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড মারে।
“এমওডির সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের এমন সুযোগ দিচ্ছে যা এই বিপ্লবী প্রযুক্তির যৌথভাবে নতুন নতুন প্রয়োগ আবিষ্কারে ভূমিকা রাখবে,” বলেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, অর্কার তৈরি ছোট আকারের পিটি-১ কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজ করবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই কোম্পানির দাবি, ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার এটি।