সিএসএএম বা শিশু নিপীড়নের কন্টেন্ট চিহ্নিত করার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কন্টেন্টের উপর নজরদারি করার “সরকারি অনুরোধে সম্মতি দেওয়া হবে না” বলে জানিয়েছে অ্যাপল।
Published : 10 Aug 2021, 02:07 PM
সম্প্রতি শিশু নিপীড়নের কন্টেন্ট চিহ্নিত করতে ক্রেতার আইক্লাউড স্ক্যান করার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে মার্কিন টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপলের প্রযুক্তি সরকারি নজরদারির কাজে ব্যবহার হবে বলে অভিযোগ তুলেছেন হোয়াটসঅ্যাপ আর এপিক গেইমসের প্রধানের মতো প্রযুক্তি শিল্পের বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তা ও সমালোচক।
বিবিসি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ও বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মিলে ওই প্রযুক্তির বিরোধীতা করে খোলা চিঠি লিখেছেন। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ওই প্রযুক্তির কার্যপরিধি না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অ্যাপল।
শিশু নিপিড়নের কন্টেন্টের খোঁজে ডিভাইস স্ক্যান করার ঘোষণা দেওয়ার পরই সরব হয়েছিলেন সমালোচক ও বিশেষজ্ঞরা। আশঙ্কা, অ্যাপলের প্রযুক্তি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর নজারদারির কাজে ব্যবহারের সুযোগ পাবে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো।
কিন্তু অ্যাপল বলছে, তারা ওই প্রযুক্তির ব্যাপ্তি বাড়াতে “সরকারি কোনো অনুরোধে সম্মতি” দেবে না।
শিশু নিপিড়নের কন্টেন্ট বাদে অন্য কোনো কিছুর খোঁজে তাদের প্রযুক্তি যেন ব্যবহার করা না যায় সেটা নিশ্চিত করতে একাধিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
“ব্যবহারকারীর গোপনতা লঙ্ঘন করে, এমন প্রযুক্তি নির্মাণ ও প্রচারে সরকারি দাবির মুখোমুখি আমরা আগেও হয়েছি এবং অবিচলভাবে ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছি”, বলেছে অ্যাপল।
“আমরা ভবিষ্যতেও এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে যাবো।”
তবে, অতীতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা ধরে রাখতে অ্যাপল কিছু ছাড় দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
২০২০ সালে চীন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে ‘চায়নিজ অ্যাপস্টোর’ থেকে লাইসেন্স বিহীন ৩৯ হাজার গেইম সরিয়ে ফেলে অ্যাপল।
অন্যদিকে, ‘অ্যান্টি-সিএসএএম’ টুল অ্যাপলকে ব্যবহারকারীর ছবি সরাসরি দেখা বা স্ক্যান করার সুযোগ দেয় না বলে জানিয়েছে বিবিসি। শুধু আইক্লাউডের সঙ্গে শেয়ার করা ছবিগুলোই স্ক্যান করে ওই টুল।
ওই প্রযুক্তি ক্রেতার ডিভাইসের থাকা ছবি আইক্লাউডে আপলোড করার সময় সংখ্যাসূচক কোডে পরিণত করে পূর্ব চিহ্নিত সিএসএএম কন্টেন্টের কোডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে।
‘অ্যান্টি-সিএসএএম টুল’ দিয়ে ভুল অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করার আশঙ্কাও খুবই কম বলে দাবি করেছে অ্যাপল। “কোনো অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করতে এই প্রযুক্তির ভুল হওয়ার সম্ভাবনা এক লাখ কোটির মধ্যে একবারেরও কম”।
তবে গোপনতা অধিকার কর্মীরা বলছেন, নতুন প্রযুক্তি যে নজরদারির কাজে ব্যবহার হবে না, তার নিশ্চয়তা বলতে কেবল অ্যাপলের প্রতিশ্রুতি।
এই প্রসঙ্গে ডিজিটাল অধিকার সংগঠন ‘ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশান’ বলছে, “মেশিন লার্নিং প্যারামিটারের একটা এক্সপ্যানশন যোগ করলেই অন্যান্য কন্টেন্ট খুঁজতে পারবে ওই প্রযুক্তি”। আদতে ওই পুরো প্রযুক্তি বাহ্যিক চাপের মুখে পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
নতুন প্রযুক্তি নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই রাজনীতিবিদদের সমর্থনও পেয়েছে অ্যাপল। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী সাজিদ জাভিদ মন্তব্য করেছেন-- অন্যদেরও, বিশেষ করে ফেইসবুকের উচিত অ্যাপলের পথ অনুসরণ করা।