বৃহস্পতিবার দিন শেষে অ্যাপলের শীর্ষস্থান হারানোর পেছনে কারণ শেয়ারমূল্য পড়তির মধ্যেই বছর শুরু করা ও চীনের বাজারে আইফোনের চাহিদায় ৩০ শতাংশ পতনের মতো বিষয় ছিল।
Published : 12 Jan 2024, 03:28 PM
বিশ্বের সবচেয়ে দামী কোম্পানি হিসেবে সম্প্রতি কিছু সময়ের জন্য অ্যাপলের জায়গা দখল করে নিয়েছিল সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট।
এমন ঘটনা শেষ ঘটেছিল ২০২১ সালে। তবে, নিউ ইয়র্ক স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিন শেষে অ্যাপলের শীর্ষস্থান হারানোর পেছনে কারণ শেয়ারমূল্য পড়তির মধ্যেই বছর শুরু করা ও চীনের বাজারে আইফোনের চাহিদায় ৩০ শতাংশ পতনের মতো বিষয় ছিল।
এর বিপরীতে, গত বছর থেকেই মাইক্রোসফটের শেয়ারমূল্য দ্রুত গতিতে বাড়তে দেখা গেছে। এর পেছনে কারণ ছিল, চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা কোম্পানি ওপেনএআইয়ের জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তির ওপর কোম্পানির বড় বিনিয়োগ।
বৃহস্পতিবার মাইক্রোসফট দিন শেষ করেছে শেয়ারমূল্যে ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে। এর ফলে, কোম্পানিটির বাজারমূল্য বেড়ে গিয়ে ঠেকেছে দুই লাখ ৮৫ হাজার নয়শ কোটি ডলারে। এমনকি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দুই শতাংশ শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির পর মাইক্রোসফটের বাজারমূল্য বেড়ে গিয়ে পৌঁছেছিল দুই লাখ ৯০ হাজার তিনশ কোটি ডলারে।
অন্যদিকে, অ্যাপলের শেয়ারমূল্য কমেছে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ, যার ফলে কোম্পানিটির বাজারমূল্য কমে দাঁড়ায় দুই লাখ ৮৮ হাজার ছয়শ কোটি ডলারে। অনেক বছর ধরেই কোম্পানি দুটির মধ্যে শীর্ষস্থান দখলের এ লড়াই চলছে।
“মাইক্রোসফটের দ্রুত অগ্রগতি ও জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি বিপ্লব থেকে লাভের মুখ দেখার পর থেকেই মনে হচ্ছিল, তারা অ্যাপলকে ছাড়িয়ে যাবে।” --বলেন বিনিয়োগ কোম্পানি ডি এ ডেভিডসনের বিশ্লেষক জিল লুরিয়া।
গত বছর নিজেদের উৎপাদনশীল সফটওয়্যার খাতে ওপেনএআইয়ের প্রযুক্তি সমন্বিত করেছে মাইক্রোসফট, যার সাহায্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রান্তিকে কোম্পানির ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসা আবারও ঘুরে দাঁড়ায়।
একই সময়ে, নিজেদের সবচেয়ে বড় আয়ের খাত আইফোনের চাহিদা কমতে দেখেছে অ্যাপল। রয়টার্স বলছে কোম্পানির তৃতীয় বৃহত্তম বাজার অর্থাৎ চীনে হুয়াওয়ের মতো স্থানীয় কোম্পানির দিক থেকে চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে আইফোনের কপালে।
“আসন্ন বছরগুলোয় চীনে অ্যাপলের পারফর্মেন্স এমনই থাকতে পারে।” --বুধবার প্রকাশিত বিশ্লেষণে বলেছে বাজার গবেষণা কোম্পানি ‘রেডবার্ন আটলান্টিক’। এ ছাড়া, অ্যাপলের শেয়ারকে ‘নিউট্রাল’ শ্রেণিতে তালিকাভুক্ত করেছে কোম্পানিটি।
২০২৪ সাল শুরুর পর থেকে ৪১টি বিশ্লেষক কোম্পানির মধ্যে অন্তত তিনটি তাদের মানদণ্ডে অ্যাপলের রেটিং কমিয়েছে।
জানুয়ারিতে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনো শহরে অ্যাপলের শেয়ারমূল্য কমেছে তিন দশমিক তিন শতাংশ। সে তুলনায় মাইক্রোসফটের বেড়েছে এক দশমিক আট শতাংশ।
উভয় কোম্পানির প্রত্যাশিত আয়ের চেয়ে শেয়ারমূল্য বেশি। ‘পাব্লিকলি লিস্টেড কোম্পানি’ বা ‘পিএলসি’ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা শেয়ারবাজারে ‘প্রাইস-টু-আর্নিং রেশিও’ বা ‘পিই’ নামে পরিচিত।
লন্ডনভিত্তিক বিনিয়োগ কোম্পানি ‘এলএসইজি’র তথ্য অনুসারে, বর্তমানে অ্যাপলের পিই রেশিও ২৮, যেখানে গত ১০ বছরে কোম্পানির গড় পিই রেশিও ছিল ১৯-এর কিছু বেশি।
অন্যদিকে, বর্তমানে মাইক্রোসফটের পিই রেশিও প্রায় ৩১, যেখানে গত দশ বছরে গড় পিই রেশিও ছিল ২৪।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তিন লাখ আট হাজার একশ কোটি ডলার বাজারমূল্য নিয়ে নিজস্ব বাজারমূল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল অ্যাপল। মাইক্রোসফটের বেলায় তা ঘটেছিল ২৮ নভেম্বর, যখন কোম্পানির বাজারমূল্য গিয়ে পৌঁছায় দুই লাখ ৮৪ হাজার চারশ কোটি ডলারে।
২০১৮ সালের পর থেকে বেশ কয়েকবার অ্যাপলের কাছ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামী কোম্পানির খেতাব কেড়ে নিতে দেখা গেছে মাইক্রোসফটকে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাটি ছিল ২০২১ সালে, যখন কোভিড মহামারীর কারণে আইফোনের সরবরাহ চেইনে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। আর এর প্রভাব পড়েছিল অ্যাপলের শেয়ারমূল্যে।