প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রবেশ করার আগে, কিংবা যাদের প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান কম তাদের অবশ্যই কিছু মৌলিক নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে এবং সতর্কতার সঙ্গে অনলাইনে ব্রাউজ করতে হবে।
Published : 30 Jul 2024, 05:02 PM
কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ইমেইল, ওয়েবসাইট! এ জগতের দরজা প্রথমবার খোলার স্মৃতি আর উচ্ছাস একেবারেই আলাদা। তবে, উত্তেজনার পাশাপাশি এ জগতে রয়েছে ভয়ানক সব বিপদের ঝুঁকিও।
সাবধান না হলে হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া, ভুল করে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে ফেলা, এমনকি প্রাইভেসি ও অর্থ সংক্রান্ত বিষয়েও আপস করতে হতে পারে অনেক ক্ষেত্রেই।
যারা প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহী, নিয়মিত নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাদের অনেক সময় ‘টেক স্যাভি’ বলে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু, সবাই তো একইরকম অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নন। বাকিরা তাহলে কী করবেন?
তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট হাওটুগিক।
তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রবেশ করার আগে, কিংবা যাদের এ বিষয়ে জ্ঞান কম তাদের অবশ্যই কিছু মৌলিক নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে এবং সতর্কতার সঙ্গে অনলাইনে ব্রাউজ করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছে সাইটটি। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেখানে দেওয়া কয়েকটি নিরাপত্তা টিপস।
ফিশিং ইমেইল ও টেক্সট: ফিশিং হল হ্যাকারদের ব্যবহার করা অত্যন্ত সাধারণ একটি কৌশল। এ পদ্ধতির মাধ্যমে হ্যাকাররা শিকারকে লোভ দেখিয়ে কোনো একটি কাজ করানোর মাধ্যমে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো লিংকে ক্লিক করানোর মাধ্যমে) তার অ্যাকাউন্ট ও ডিভাইসের অ্যাক্সেস নিতে পারে। নিজেকে রক্ষা করতে, এসব জালিয়াতিপূর্ণ ইমেইল ও টেক্সটের বিভিন্ন লক্ষণ শনাক্ত করতে শিখুন এবং এর সঙ্গে পরিচিত হন। কোনো টেক্সট বা ইমেইল বৈধ কিনা সেটি বুঝতে প্রেরকের ইমেইল ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর যাচাই করুন।
এ ছাড়া, হ্যকারদের লেখায় সাধারণত পেশাদারী সাইটের মান বজায় রাখা সম্ভব হয় না। ফলে তুচ্ছ বানান ভুল বা ব্যাকরণগত ঝামেলা থেকেই যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে হাও-টু গিক।
প্রতারণামূলক ইমেইল ও মেসেজে প্রায়ই নাম ব্যবহার করার পরিবর্তে “প্রিয় গ্রাহক” এর মতো গণ শুভেচ্ছা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এতে বানান ও ব্যাকরণের ভুল থাকতে পারে, দ্রুত জরুরী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা বা ভয় দেখানোর মতো বার্তা থাকতে পারে। এ ছাড়া, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাকতে পারে ক্ষতিকারক লিঙ্ক। তাই নিশ্চিত না হয়ে কোনোভাবেই অপরিচিত লিংক অথবা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা এড়িয়ে চলুন।
অপরিচিত বন্ধু তৈরি: বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ও অনলাইন গ্রুপ স্ক্যামারে পরিপূর্ণ থাকতে পারে। ফলে, কখনও দেখা বা কথা হয়নি এমন অপরিচিতদের সঙ্গে অনলাইনে বন্ধুত্ব করা এড়িয়ে যান। কেবল বাস্তব জীবনে পরিচিত মানুষদের সঙ্গেই অনলাইনে যুক্ত হন। এ ছাড়া, ছদ্মবেশী বা নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখছে এমন কারো সঙ্গে কোনো বিষয়ের সংযোগ স্থাপন করা উচিত হবে না। কোনো প্রোফাইলের সঙ্গে যোগাযোগ করার আগে সবসময় যাচাই করার চেষ্টা করুন প্রোফাইলটি ভুয়া কিনা। একেকবারে নতুন তৈরি করা প্রোফাইল থেকেও সতর্ক থাকুন।
ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ারের সতর্কতা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী কী শেয়ার করেন সে সম্পর্কে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। পুরো নাম, বাড়ির ঠিকানা, জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, বা আর্থিক বিবরণের মতো ব্যক্তিগত তথ্য কখনই প্রকাশ করবেন না। এমনকি, ভ্রমণ পরিকল্পনা শেয়ার করা এবং ভ্রমণের সময়ে বর্তমান অবস্থান প্রকাশ করা এড়িয়ে চলুন।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ড, পাসওয়ার্ড, যে কোনো আইডি, বা অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্যের ছবি কোনোভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করবেন না। এগুলো সহজেই অপব্যবহার করতে পারে সাইবার অপরাধীরা। এ ছাড়া, নিজের কর্মক্ষেত্র বা কোম্পানি সম্পর্কে এমন কিছু শেয়ার করা এড়িয়ে চলুন যা আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে।
নিরাপদ ব্রাউজিং অনুশীলন: ওয়েব ব্রাউজ বা অনলাইনে ঘুরে বেড়ানোর সময় সতর্ক থাকুন ও নিরাপদ ব্রাউজিং অনুশীলন অনুসরণ করুন। প্রথমত, সবসময় ব্রাউজার ‘আপডেট’ করুন এবং চেষ্টা করুন ব্রাউজারের সব নিরাপত্তা সেটিং সেটআপ করার। এ ছাড়া, ‘পপ-আপ ব্লকার’ চালু করুন, অদ্ভুত বিজ্ঞাপন বা ‘পপ-আপ’-এ ক্লিক করা এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ কোনো ওয়েবসাইট ব্যবহারের সময় যখন বিভিন্ন বিজ্ঞাপন স্ক্রিনের ওপর ভেসে ওঠে সেখানে ক্লিক না করাই ভাল।
পাশাপাশি, যে ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করছেন সেগুলো সিকিউর সকেট লেয়ার (এসএসএল) দিয়ে সুরক্ষিত আছে কিনা সেটি নিশ্চিত করুন। এসএসএল একটি এনক্রিপশন-ভিত্তিক ইন্টারনেট নিরাপত্তা প্রোটোকল। ফিশিং ওয়েবসাইট নিয়েও সতর্ক থাকুন।
অনির্ভরযোগ্য সাইট থেকে কোনোকিছু ডাউনলোড করা এড়িয়ে চলুন। ম্যালওয়্যারের জন্য ডাউনলোড লিংক পরীক্ষা করুন। ব্রাউজারে কোনো থার্ড-পার্টি এক্সটেনশন ব্যবহার করার আগে এর নির্মাতা কোম্পানি ও এক্সটেনশনের রিভিউ দেখে নিন। আর ব্রাউজারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ করবেন না বা এমন অপশন এলেও সেটি বাছাই করবেন না।
একটি লিংক ঠিক কোথায় নিয়ে যাবে সেটি না জেনে, না বুঝে কোনো লিংকে ক্লিক করা এড়িয়ে চলুন।
অনুপযুক্ত কনটেন্ট-এর সম্মুখীন হওয়া এড়াতে ‘সেইফ সার্চ ফিল্টার’ চালু করে নিন ও নিয়মিত ব্রাউজিং ডেটা মুছে ফেলুন।
অচেনা কল-এ সতর্ক হন: অপরিচিত নম্বর থেকে আসা কোনো কলে ব্যক্তিগত বা আর্থিক তথ্য দেবেন না। কোনোভাবেই নিশ্চিত না হয়ে তাদের বিশ্বাস করবেন না, বিশেষ করে যদি তারা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে কল শেষ করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। সবময় কলারের নাম, নম্বর, কোম্পানির নাম ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে নিন। অনেক ক্ষেত্রে স্ক্যামাররা ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে, তাই এগুলো শোনার পরেও অপরিচিত কলারকে বিশ্বাস না করাই শ্রেয়।
কলের সঙ্গে যদি আইনি বিষয় জড়িত থাকে তবে কলারকে বক্তব্য লিখিতভাবে পাঠাতে বলুন। অনিশ্চিত হলে কল কেটে দিন, ও কলারকে ব্লক করুন।
সংবাদের শিরোনাম আসল না ভুয়া যাচাই করুন: ইন্টারনেটজুড়ে ভুয়া ও প্রতারণামূলক খবর প্রচুর। এসব খবর মানুষের আবেগকে প্রভাবিত করে। অনেকেই দ্রুত ও অসতর্ক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারেন, যা বয়ে আনতে পারে বিপদ। এ ধরনের ভুল তথ্য দ্রুত শনাক্ত করতে বিভিন্ন লক্ষণ চিনতে শিখুন।
নিশ্চিত করুন খবরটি বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে এসেছে, আরও যাচাই করুন অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যম একই খবরের প্রতিবেদন করছে। পাশপাশি, এটি সম্প্রতিক খবর কিনা সেটি নিশ্চিত করতে তারিখ পরীক্ষা করুন৷
সংবাদে ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত থাকলে সেগুলো যে পুরানো নয় সেটি নিশ্চিত করতে ‘রিভার্স সার্চ’ টুল ব্যবহার করুন, এবং প্রতিবেদনটি উৎসর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিনা তা দেখুন৷ চাঞ্চল্যকর শিরোনাম নিয়ে সতর্ক থাকুন এবং গোটা প্রসঙ্গটি বুঝতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়ুন। অনেক সময়ই ‘ক্লিক বেইট’ ধাঁচের শিরোনাম থাকে যার ভেতরের সংবাদের তেমন মিল থাকে না। সংবাদ যাচাইয়ের সহজ পদ্ধতি হতে পরে, গুগল সার্চে সংবাদের শিরোনামটি লিখে তার সঙ্গে যোগ করে দিন “is this true?”। সার্চ ফলাফল থেকেই সহজে জানা যাবে খবরটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য।
এ ছাড়া, অন্যান্য পাঠকরা খবরটি নিয়ে কি মতামত প্রকাশ করছে সেটি জানার জন্য খবরের ‘মন্তব্য’ বিভাগটি দেখুন।