গবেষণায় দেখা গেছে, রান্নার সময় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে এনেছে রোবটটি, যা ব্যস্ত পরিবারের মানুষদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক।
Published : 25 Jan 2025, 05:23 PM
রোবট এখন আর কল্পবিজ্ঞানের অংশ নয়। বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনের একটি সহায়ক অঙ্গ হয়ে উঠছে এরা, বিশেষ করে যখন মানুষের পরিবারের যত্নের কথা আসে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোবটকে এমনভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে, যাতে ঘরবাড়ির কাজ থেকে শুরু করে মানসিকভাবেও সাহায্য করতে পারে এরা।
মানুষের জীবনযাপন সহজ করে তুলছে এসব রোবট, বিশেষ করে বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বেলায়। ব্যক্তিগত হোম কেয়ার হচ্ছে প্রতিটি ব্যক্তির অনন্য চাহিদা পূরণের বিষয়ে। রোবটরা অভিযোজিত ও স্মার্ট হওয়ার মাধ্যমে এতে বড় ভূমিকা রাখে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। যেমন– কিছু রোবট মানুষকে তাদের ওষুধ খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে, তাদের উঠে দাঁড়াতে ও চলাফেরায় সহায়তা করতে পারে।
২০২২ সালে জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় এমন রোবট নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন গবেষকরা, যা বয়স্কদের হাঁটতে অসুবিধার হলে তাদের শারীরিক সহায়তা দিতে পারে। তাদের পড়ে যাওয়া ঠেকাতে সেন্সর দিয়ে কাজ এসব রোবট এবং ব্যবহারকারীর চাহিদার উপর ভিত্তি করে তাদের সহায়তা দেয়। গবেষণার এসব ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, রোবটের মাধ্যমে বাড়িতে চলাফেরা করার সময় নিরাপদ ও আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন ব্যবহারকারীরা।
মানুষের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করার জন্যও রোবটের ব্যবহার হচ্ছে, যা জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও আরামদায়ক করে তুলেছে। যেমন– এরইমধ্যে অনেক বাড়িতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ও মপের মতো ঘর পরিষ্কারের রোবট। নতুন ধরনের রোবটও তৈরি হচ্ছে, যেগুলো খাবার তৈরি, কাপড় ভাঁজ ও ঘরের অন্যান্য কাজও করতে পারে।
২০২৩ সালে রান্নাযর কাজে সহায়তার জন্য ডিজাইন করা এক রোবট চালু করেছিলেন জার্মানির গবেষকরা। রোবটটি বিভিন্ন রান্নার রেসিপি অনুসরণ করে রান্না করতে, সবজি কাটতে ও তা পরিষ্কারও করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, রান্নার সময় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে এনেছে রোবটটি, যা ব্যস্ত পরিবারের মানুষদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক।
হোম কেয়ারে রোবোটিক্সের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর প্রয়োগের মধ্যে একটি হচ্ছে, মানসিক সমর্থন। কিছু রোবটকে ডিজাইন করা হয়েছে সামাজিকভাবে মিথস্ক্রিয়া করার জন্য। যারা একাকী বা বিচ্ছিন্ন বোধ করেন তাদের সঙ্গী হিসাবে কাজ করে এরা। যেমন– বয়স্কদের জন্য তৈরি হয়েছে রোবোটিক পোষা প্রাণী, যারা জ্যান্ত প্রাণীদের যত্ন নিতে পারে না তবে এখনও এদের সাহচর্য কামনা করে তাদের জন্য।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রোবোটিক পোষা প্রাণীর সঙ্গে ছিলেন এমন বয়স্ক ব্যক্তিরা একাকীত্বের অনুভূতি কমার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়েছে।
মানুষের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণেও সাহায্য করছে রোবট। রোবোটিক সহকারীদের মতো বিভিন্ন ডিভাইস দেহের গুরুত্বপূর্ণ নানা লক্ষণ ট্র্যাক, স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাথমিক সতর্কতা লক্ষণ শনাক্ত ও কিছু ভুল হলে যত্নশীল আচরণ করতে বা ডাক্তারদের জানাতে পারে। ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এক গবেষণায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য স্বাস্থ্য-পর্যবেক্ষণ রোবট পরীক্ষা করেন গবেষকরা।
এ রোবটটি মানবদেহের রক্তচাপ পরিমাপ, গ্লুকোজের মাত্রা ট্র্যাক ও চিকিৎসা পরিকল্পনা অনুসরণের কথাও ব্যবহারকারীদের মনে করিয়ে দিতে পারে। এ রোবট ব্যবহারের পর স্বাস্থ্যের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এসব উন্নতমানের রোবটের দাম বেশি হতে পারে, যা কিছু পরিবারের পক্ষে কেনা কঠিন। প্রাইভেসি সংক্রান্ত উদ্বেগ এখানে আরেকটি সমস্যার বিষয় হতে পারে। কারণ, অনেক রোবট ভালোভাবে কাজ করার জন্য ক্যামেরা ও সেন্সরের উপর নির্ভর করে। তবে গবেষকরা রোবটকে আরও সাশ্রয়ী ও নিরাপদ করতে কাজ করে যাচ্ছেন, যাতে আরও বেশি ঘরবাড়িতে পৌঁছাতে পারে এমন রোবট।