শরীরের শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন, যেমন পেটের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া ও দেহের টিস্যু ঘন হয়ে গেলে তা মেদওয়ালা ব্যক্তিদের ক্যান্সার বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে।
Published : 21 Jan 2025, 05:36 PM
গোটা বিশ্বেই স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থূলতা বা মেদ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এর সঙ্গে ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকির সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফ্রন্টিয়ার্স অফ মেডিসিন’-এ, যেখানে উঠে এসেছে মেদের সঙ্গে ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে এমন বিভিন্ন জৈবিক উপায় খতিয়ে দেখার পাশাপাশি মেদজনিত ক্যান্সার ঠেকানোর নানা বিষয়ও।
মেদ মানুষের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বলে প্রতিবেদনে লিখছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, ফ্যাট বা চর্বিওয়ালা টিস্যুতে দীর্ঘস্থায়ী নিম্নমানের প্রদাহ বা ঘা, যেখানে রোগ প্রতিরোধক বিভিন্ন কোষ ‘সাইটোকাইন’ নামের পদার্থ নিঃসরণ করে, যা কারো দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
এক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও ভূমিকা রাখে। যেমন– মেদওয়ালা ব্যক্তি, বিশেষ করে মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারীদের মধ্যে উচ্চ ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত।
ফ্যাট টিস্যু নিজেই একটি অন্তঃস্রাবী অঙ্গ বা অগ্ন্যাশয়ের রস নিঃসরণ গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে, যা ‘লেপটিন’ ও ‘অ্যাডিপোনেক্টিন’-এর মতো দেহে অ্যাডিপোকাইন নামের পদার্থ তৈরি করে। অ্যাডিপোকাইন হচ্ছে দেহের প্রদাহ বা ঘায়ের প্রোটিন। মেদওয়ালা ব্যক্তিদের দেহে লেপটিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন, যেমন পেটের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া ও ফাইব্রোসিস বা দেহের টিস্যু ঘন হয়ে গেলে তা মেদওয়ালা ব্যক্তিদের ক্যান্সার বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে।
ক্যান্সার ঠেকানোর কৌশল
মেদের সঙ্গে জড়িত ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য গবেষণাপত্রে বেশ কয়েকটি কার্যকর কৌশল তুলে ধরেছেন গবেষকরা।
● খাদ্যাভাস পরিবর্তন: সুষম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যেতে পারে। কম চর্বিওয়ালা ও কম কার্বোহাইড্রেট খাবারের মতো বিভিন্ন খাবার ক্যান্সার বিকাশের দুটি মূল কারণ দেহের প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
● ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ বিপাক উন্নত করে ও দীর্ঘস্থায়ী ঘা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে, যা কমিয়ে আনে মেদজনিত ক্যান্সারের ঝুঁকি।
● বারিয়াট্রিক সার্জারি: গুরুতর মেদওয়ালা ব্যক্তিদের জন্য বারিয়াট্রিক সার্জারি ওজন কমিয়ে এনে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বারিয়াট্রিক সার্জারির পরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এসেছে।
মেদ ও ক্যান্সারের মধ্যে সংযোগ বোঝার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও এখনও উত্তরহীন রয়ে গেছে কিছু প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের সমাধানে ও মেদজনিত ক্যান্সার প্রতিরোধ ও এর চিকিৎসার বিভিন্ন কৌশল খুঁজে বের করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে ব্যক্তির জেনেটিক্স, বয়স ও নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের মতো আলাদা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে উপযোগী বিভিন্ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা যেতে পারে।