বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে সেবা দিতে লাইসেন্সধারীকে অন্তত একটি গেটওয়ে দিয়ে সংযুক্ত করতে হবে। তাতে নিয়ন্ত্রণ আসলে সরকারের হাতেই থাকবে।
Published : 27 Mar 2025, 03:15 PM
দেশে স্যাটেলাইট নির্ভর ইন্টারনেট সেবায় ‘আইনসম্মত’ আড়িপাতার সুযোগের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যখন তখন বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগও থাকছে।
বুধবার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবার বিষয় সরকারের জারি করা নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এসব বিষয়।
দেশে স্যাটেলাইট নির্ভর ইন্টারনেট সেবা চালুর তোড়জোড় চলছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি স্টারলিংকের সেবা ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে চালু করতে নির্দেশ দিয়েছেন খোদ প্রধান উপদেষ্টা।
এর অংশ হিসেবেই সরকারের টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বুধবার ‘রেগুলেটরি অ্যান্ড লাইসেন্সিং গাইডলাইনস ফর নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর ইন বাংলাদেশ’ নামের এই নির্দেশিকা জারি করে।
সেখানে বলা হয়েছে,বাংলাদেশে স্যাটেলাইট নির্ভর ইন্টারনেট সেবা দিতে প্রথমে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। তারপর বিটিআরসির কাছে আবেদন করতে হবে।
আবেদন ফি পাঁচ লাখ টাকা। লাইসেন্সের জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট দিতে হবে আড়াই কোটি টাকা। লাইসেন্স দেওয়া হবে ১০ বছরের জন্য, থাকবে বার্ষিক ফিও।
যারা স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুধু আইওটি সার্ভিস দেবেন, তাদের জন্য বার্ষিক ফি ১০ হাজার ডলার। আর যারা স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড এবং অন্যান্য সেবা দেবেন, তাদের বার্ষিক ফি ৩০ হাজার ডলার।
নির্দেশিকার নেটওয়ার্ক ও অপারেশন অধ্যায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে সেবা দিতে লাইসেন্সধারীকে অন্তত একটি গেটওয়ে দিয়ে সংযুক্ত করতে হবে। লাইসেন্সধারী তার এনজিএসও গেইটওয়ে দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেইটওয়ে বা আইআইজি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত করে ইন্টারনেট ট্রাফিক পরিবহন করবে।
একজন টেলিকম ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, দেশীয় গেটওয়ে বা আইআইজিগুলোর মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়ার ফলে এর নিয়ন্ত্রণ আসলে সরকারের হাতেই থাকবে এবং যখন তখন তা বিচ্ছিন্ন করা বা সেবা বন্ধ করা সম্ভব হবে সরকারের পক্ষে।
যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল, বিগত সরকারের মত যখন তখন যাতে ইন্টারনেট বন্ধ করা না যায়, সেজন্যই বাংলাদেশে স্টারলিংক আনা হচ্ছে।
আরেক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, আইআইজিগুলোর লাইসেন্সের শর্ত হিসেবে বলা আছে যে তারা সরকারের নির্দেশনা মানবে। কাজেই এই সরকার যদি নাও চায় অন্য কোন সরকার কোন অসময়ে তাদের এরকম নির্দেশনা দিতেও পারে।
কিন্তু স্টারলিংক চাইলে আবার ইন্টারনেট সংযোগ চালু রাখা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে তারা অন্য কোন দেশের গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবহার করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। মূলত ব্যয় সশ্রয়ের জন্যই দেশীয় গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশে এখন বিটিআরসির লাইসেন্সধারী ৩৪টি আইআইজি বা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেইটওয়ে কোম্পানি রয়েছে।
থাকছে আড়িপাতার সুযোগও
নির্দেশিকার ১৬তম সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস অধ্যায়ে বলা হয়েছে, এই ব্যবস্থায় ল ফুল ইন্টারসেপশনের (আইনানুগ আড়িপাতা) ব্যবস্থা থাকবে। কোম্পানিগুলোর সিস্টেম এলআই কমপ্লায়েন্ট হতে হবে, অর্থাৎ সিস্টেমে আড়িপাতার মত ব্যবস্থা রাখতেই হবে।
‘ল ফুল ইন্টারসেপশনের’ বিষয়ে সুমন আহমেদ বলেন, “অন্য দেশগুলোর স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস হচ্ছে, কোর্টের আদেশের ওপর ভিত্তি করে টার্গেটেড ব্যবহারকারীর সংযোগে আড়ি পাতা যায়। এক্ষেত্রে রাউটারে একটি এলআই পোর্ট ব্যবহার করা হয়। যেখান থেকে ডেটা কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে কপি করে দেওয়া হয়। তবে নির্দেশনা থাকে যে, একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটা ডিসকাস করতে হবে যে কার কার লাইনে ইনটারসেপ্ট করা হয়েছিল।”
স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্সধারী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, আইওটি, মেশিন টু মেশিন কমিউনিকেশন, আর্থ স্টেশন ইন মোশন সেবার পাশপাশি বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে নতুন সেবা দিতে পারবেন।
তবে ব্রডকাস্টিং বা ডিটিএইচ সেবা, টেরিস্ট্রিয়াল বা স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিফোন বা আইএমটি সেবা দিতে পারবে না এই লাইসেন্সধারী।