কেউ ভুল জায়গায় একটি সিকিউরিটি ক্যাম ইনস্টল করলে এটি অকেজো হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় মূল ঘটনা ক্যামেরায় ধরা নাও পড়তে পারে, এমনকি এর মালিক আইনি সমস্যায়ও পড়তে পারেন।
Published : 17 Apr 2024, 03:19 PM
বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমানে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন সিকিউরিটি ক্যামেরা। আর এসব ক্যামেরাও দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। ভালো লেন্সসহ একটি ‘সিঙ্গল ক্যাম’ বা ‘ভিডিও ডোরবেল’ বাড়ির আঙিনা, ড্রাইভওয়ে বা বাড়ির সামনের বিস্তৃত দৃশ্য তুলে ধরতে পারে। বাড়ির ভিতরে, একটি ‘প্যান/টিল্ট’ ক্যামেরা বা প্রশস্ত ‘ফিল্ড অফ ভিউ’ বড় খোলা জায়গাগুলো ক্যাপচার করতে পারে।
তবে, সিকিউরিটি ক্যামেরা বসানোর জায়গাটি বেছে নিতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। কেউ ভুল জায়গায় একটি সিকিউরিটি ক্যাম ইনস্টল করলে উপকার না ও মিলতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে অকেজো হয়ে যেতে পারে দামি এই ডিভাইস। অনেক সময় মূল ঘটনা ক্যামেরায় ধরা নাও পড়তে পারে, এমনকি এর মালিক আইনি সমস্যায়ও পড়তে পারেন। সবচেয়ে কমদামী সিকিউরিটি ক্যামেরাও এত ঝক্কি পোহানোর যোগ্য নয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি সাইট সিনেট।
এ কারণে, নিজের জিনিসপত্রের ওপর নজর রাখতে ও চুরি ঠেকাতে সিকিউরিটি ক্যামেরাগুলো সঠিক স্থানে ইনস্টল করুন। চলুন, দেখে আসি কোন কোন স্থানগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
১. প্রাইভেসির প্রত্যাশা রয়েছে এমন জায়গা
সাধারণত বাসাবড়িতে সিকিউরিটি ক্যামেরা ব্যবহার হয় বাড়িকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। এটি করতে গিয়ে কেউ নিশ্চয় অন্যদের প্রাইভেসি লঙ্ঘন করতে চাইবেন না। মানুষ যে স্থানে প্রাইভেসি প্রত্যাশা করে এমন স্থানে ক্যামেরা ইনস্টল করে সম্ভাব্য আইন ভঙ্গের ঝুঁকি নেবেন না।
উদাহরণ হিসাবে, বাথরুমে, বাড়ির কোনো বেডরুমে কিংবা অনুরূপ জায়গায় সিকিউরিটি ক্যামেরা ইনস্টল করা উচিত নয়। কোনো কারণে যদি বেডরুমে ক্যামেরা রাখতেই হয়, সেক্ষেত্রে নিশ্চিত করুন ক্যামেরাটি সম্পর্কে বাড়ির সবাই জানে ও সেটি দৃশ্যমান। বাড়ির বাইরের ক্যামেরার জন্য, সাধারণত এগুলো বাড়ির পাশের রাস্তা, ফুটপাথের মতো ‘পাবলিক প্লেসে’র দৃশ্য ধারণ করে। এসব জায়গায় প্রাইভেসির প্রত্যাশা কম।
২. প্রতিবেশীর বাড়ি বা জায়গা সরাসরি দেখা
নিজের বাড়ির প্রাইভেট জায়গা সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি এমন জায়গায় ক্যামেরা বসাবেন না যেখান থেকে প্রতিবেশীর বাড়ির জানালা বা উঠোনের কিছু অংশ ক্যামেরায় ধরা পড়ে। আইনত এগুলো এমন জায়গা যেখানে প্রতিবেশীদের তাদের প্রাইভেসির অধিকার রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মামলাও হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিনেট।
এই কারণেই প্রতিবেশীর উঠোনের দিকে মুখ করা বা তাদের জানালায় উঁকি দেওয়া ক্যামেরাগুলো এড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। অনেক আধুনিক সিকিউরিটি ক্যামেরায় ‘প্রাইভেসি জোন’ তৈরি করার ফিচার থাকে যা ক্যামেরার লাইভ ভিউ বা রেকর্ডিংয়ে নির্দিষ্ট কিছু জায়গাকে ব্লক করে দেয়। কোনো প্রতিবেশী অভিযোগ করলে, তাদের বাড়ির কোনো অংশ রেকর্ড করা হচ্ছে না সেটি প্রমাণ করতে ‘প্রাইভেসি জোন’ দেখাতে পারবেন।
৩. দেখা যায় না এমন স্থান
অনেকেই বাড়ির এমন জায়গায় ক্যামেরা ইনস্টল করতে চাইতে পারেন যেসব স্থান সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। এর একটি কারণ রয়েছে, যদি কেউ জানালা বা দরজা থেকে তাকিয়ে বাড়ির কোন জায়গা দেখতে না পান, তখন মনে হতেই পারে কেউ সেখানে লুকিয়ে রয়েছে। অনেকেই ভাবতে পারেন এসব লুকানো স্থান বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য চোরদের পছন্দের জায়গা।
তবে, বাস্তবতা হল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোর সবচেয়ে সুস্পষ্ট পথ দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। মার্কিন সিকিউরিটি কোম্পানি এডিটি-এর তথ্য অনুসারে, ৩৪ শতাংশ চোর সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ও ২২ শতাংশই প্রথম তলার জানালা ব্যবহার করে।
অনেকে ভাবতে পারেন এসব জায়গায় চোখ দিয়েই ক্ষতিকারক কার্যকলাপ ধরে ফেলা যায়, তবে এগুলো ‘ব্রেক-ইন’ বা চুরি করে বাড়িতে ঢোকার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পথ। এমন জায়গায় একটি ক্যামেরা এ কাজে বাধা দিতে পারে এবং যে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করলে তাকে শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
মনে হতেই পারে, বাড়ির পাশের গলিতে বা বাড়ির পেছনে সিকিউরিটি ক্যামেরা স্থাপন করলে এটি আশপাশে লুকিয়ে থাকা কাউকে ধরতে পারবে। তবে, এ ক্ষেত্রে আসল ঘটনা ফসকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
৪. বাধার পেছনে
এটি খুব স্বাভাবিক শোনালেও ক্যামেরার বাধাগুলো সবসময় এত স্পষ্ট হয় না। বাইরের ক্ষেত্রে একটি বাতাসে দুলতে থাকা গাছের ডালও হতে পারে। দ্রুত বাড়তে থাকা গাছগাছালির বিষয়েও সতর্ক থাকা উচিত যেন প্রতি বছর ক্যামেরা দুই তিনবার সরাতে না হয়।
বাড়ির ভেতরে ক্যামেরার রেঞ্জ অফ ভিউ ও বিবেচনা করতে হবে। খেয়াল রাখুন বাড়ির কোনো দরজা বা জানালা খোলা বা বন্ধ করার ফলে সেটি ক্যামেরাকে আড়ালে ফেলে দেয় কি না। জায়গাতেও ক্যামেরা লাগানো উচিত নয় যেখানে কোনো পোষা প্রাণী এর নাগাল পাবে। এমন জায়গা খুঁজুন যেখান থেকে বাড়ির ভেতরের পুরোটা ভালোভাবে দেখা যাবে।
৫. জানালার পাশে
কেবল বাড়ির ভেতরে জানালা লাগোয়া জায়গায় একটি ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি বেশ লোভনীয় মনে হতে পারে। মনে হতে পারে, জানালার ঠিক ভেতরে ইনস্টল করেই বাইরের ভাল দৃশ্য দেখা সম্ভব হবে। তবে, এর দুটি বড় সমস্যা রয়েছে।
প্রথমত, জানালার কাঁচে আলোর ঝলকের সমস্যা। এমনকি যখন ক্যামেরাটি কাঁচের খুব কাছাকাছি বসানো হয় তখনও এ সমস্যা হতে পারে। তাই সূর্য যখন একটি নির্দিষ্ট কোণে থাকে বা বাইরে অন্ধকার থাকে তখন ক্যামের দৃশ্য প্রায়ই কাজ করে না। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুলো একই সমস্যা সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয়ত, বাড়ির জানালা দিয়ে যে কোণে একটি জায়গার দৃশ্য দেখতে পারেন তা খুবই সীমিত। জানালায় স্থাপন করা ক্যামেরায়, মূল জায়গার, উঠোনের বা ড্রাইভওয়ের দৃশ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
৬. ক্যামেরা যেন ওপরের দিকে মুখ করে না থাকে
কেউ ইচ্ছা করে কোনো সিকিউরিটি ক্যামেরা এমনভাবে স্থাপন করেন না যেখানে ছবির অনেকখানি জুড়ে আকাশ থাকে। ‘ওয়াইড ফিল্ড অফ ভিউ’ বা বিস্তৃত দৃশ্য ধারণ করতে পারে এমন ক্যামেরার ছবিতে বড় অংশ জুড়ে আকাশ থাকে। এক্ষেত্রে, সূর্যের আলোতে ক্যামেরার দৃশ্য ধারণে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া, ঘন ঘন ও সরাসরি সূর্যের আলো ক্যামেরার ক্ষতি করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে সিনেট।
এই সমস্যাগুলো এড়াতে, ক্যামেরা এমন অ্যাঙ্গেল বা কোণে ইনস্টল করুন যেন এতে আকাশ চলে না আসে। আর ছাদ, গাছ বা পাহাড়ের লাইনের নিচের দৃশ্যগুলোতে ফোকাস করুন৷ এছাড়াও, এমন জায়গায় ক্যামেরা স্থাপন করার চেষ্টা করুন যেখানে ক্যামেরাগুলো ছায়াতে থাকে।