ইউক্লিড স্পেস টেলিস্কোপের তোলা প্রথম দিকের বিভিন্ন ছবি প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ‘ইএসএ’। এক হাজার বছর আগের মহাবিশ্বের ৩ডি ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে এই টেলিস্কোপের মাধ্যমেই।
টেলিস্কোপের তোলা একটি ছবি হল ‘হর্সহেড নেবুলা’, যা ‘মিল্কি ওয়ে’র মতো দেখতে ‘স্পাইরাল’ এক ছায়াপথে ‘লুকিয়ে’ আছে। এ ছবিতে মহাকাশের বিভিন্ন পরিচিত বস্তুর পাশাপাশি আগে দেখা যায়নি এমন অনেক কিছুই দেখিয়েছে ইউক্লিড।
ইউক্লিড ‘ডার্ক ইউনিভার্স’ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে, যেখানে ‘ডার্ক পাওয়ার’ ও ‘ডার্ক ম্যাটার’ কীভাবে মহাবিশ্বের বিবর্তনে প্রভাব ফেলে, তার বিভিন্ন লক্ষণ জানার উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান চালাচ্ছে মহাকাশযানটি।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামনের ছয় বছরে মহাকাশের এক তৃতীয়াংশ পর্যবেক্ষণ করবে এটি, যেখানে কয়েকশ কোটি ছায়াপথ নিয়ে গবেষণা চালাবে চার ফুট প্রস্থওয়ালা এই টেলিস্কোপের ‘ভিজিবল ওয়েভলেন্থ’ ক্যামেরা ও এর ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড’ ক্যামেরা/স্পেক্টোমিটার।
মহাকাশযানটি উৎক্ষেপিত হয়েছিল ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, তবে এর আনুষ্ঠানিক মিশন শুরু হতে পারে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে।
প্রাথমিক পরীক্ষাতেই এটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।
ইএসএ বলছে, পার্সিয়াস নক্ষত্রপূঞ্জে থাকা একগুচ্ছ ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করেছে এই টেলিস্কোপ, যা পৃথিবী থেকে ২৪ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এ ছাড়া, কেবল নক্ষত্রপূঞ্জে থাকা এক হাজার ছায়াপথই নয় বরং এর চেয়ে দূরের প্রায় এক লাখ ছায়াপথ শনাক্ত করেছে টেলিস্কোপটি।
এর পাশাপাশি, ‘মিল্কি ওয়ে’র মতো দেখতে ‘আইসি ৩৪২’ বা ‘হিডেন গ্যালাক্সি’ নামে পরিচিত এক স্পাইরাল ছায়াপথও শনাক্ত করেছে স্পেস টেলিস্কোপটি। এই ছায়াপথের এমন নামকরণের পেছনের কারণ হল, এগুলো খালি চোখে পৃথিবী থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় না।
মহাকাশের বিশাল অংশ পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা আছে ইউক্লিডের। ইএসএ’র তথ্য অনুসারে, কেবল একটি স্ন্যাপশটেই মহাবিশ্বে লুকিয়ে থাকা নক্ষত্রপূঞ্জের মতো সুনির্দিষ্ট বস্তুকে ছবিতে দেখানোর সক্ষমতা রয়েছে এই টেলিস্কোপের।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ‘এনজিসি ৬৩৯৭’ নক্ষত্রপূঞ্জ, যেখানে মাধ্যাকর্ষণওয়ালা লাখ লাখ তারা রয়েছে। ইএসএ বলছে, ইউক্লিডের তোলা ছবিতে এই নক্ষত্রপূঞ্জের তারাগুলোকে যত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, তা অতুলনীয়।
এটি এমন বস্তুও শনাক্ত করতে পারে, যা অন্যান্য যন্ত্রের মাধ্যমে শনাক্ত করা জটিল। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, ওরিয়ন নক্ষত্রপূঞ্জে অবস্থিত হর্সহেড নেবুলার অত্যন্ত স্পষ্ট ছবি, যেখানে এমন ছোট তারা ও গ্রহ দেখা গেছে, যা এর আগে শনাক্ত করা যায়নি।
এ ছাড়া, ‘এনজিসি ৬৮২২’ নামের বামন ছায়াপথও পর্যবেক্ষণ করেছে ইউক্লিড, যা পৃথিবী থেকে ১৬ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এ ক্ষুদ্র ও প্রাচীন ছায়াপথে ‘আমাদের নেজেদের ছায়াপথের উৎপত্তির সূত্রও লুকিয়ে থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এনগ্যাজেট।
এগুলো কেবল ইউক্লিডের শুরুর দিকের ছবি হলেও টেলিস্কোপটি এরইমধ্যে কাছের ও দূরবর্তী মহাবিশ্বের বিভিন্ন অজানা তথ্য প্রকাশ করছে।
“আমরা এর আগে কখনওই জ্যোতির্বিজ্ঞানের এমন ছবি দেখিনি, যেখানে এতটা বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।” --ছবিগুলো সম্পর্কে বলেন ইএসএ’র ইউক্লিড প্রকল্পের বিজ্ঞানী রেনে লরেইজস।
“আমাদের প্রত্যাশের চেয়ে বেশি সুন্দর ও স্পষ্ট এগুলো। আর আমরা নিকটবর্তী মহাবিশ্বে থাকা বিভিন্ন অদেখা বস্তুও দেখেছি এতে।”