‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়নস টোন্টো গ্রুপ’-এ রয়েছে ৫০ কোটি বছর আগে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময়কালের বিভিন্ন পাললিক স্তর ও জীবাশ্ম।
Published : 13 Nov 2024, 06:13 PM
গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বিভিন্ন শিলায় লুকিয়ে আছে পৃথিবীর দীর্ঘ সময়ের নানা গল্প। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান মিলেছে এ গিরিখাতের পাথরে।
সেই ধারাবাহিকতায় এবার প্রাচীন প্রাণের বিস্ময়কর রহস্যের খোঁজ মিলল গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বিভিন্ন শিলায়— এমনই দাবি ভূতাত্ত্বিকদের।
প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে শুরু হয় ক্যামব্রিয়ান যুগের বিস্ফোরণ। এটি এমন এক যুগ, যে সময়ে সব ধরনের প্রধান গোষ্ঠীর প্রাণী বিবর্তিত হতে শুরু করে, যা বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়কে চিহ্নিত করেছে।
এ সময়ের বিভিন্ন জীবাশ্মের মধ্যে রয়েছে শক্ত খোলসওয়ালা অনেক আদি প্রাণী, যা মানুষ’সহ আজকের বিভিন্ন প্রাণীদের পূর্বপুরুষ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়নস টোন্টো গ্রুপ’-এ রয়েছে ৫০ কোটি বছর আগে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময়কালের বিভিন্ন পাললিক স্তর ও জীবাশ্ম। সাম্প্রতিক গবেষণায় বিখ্যাত এসব শিলার বিভিন্ন স্তরকে পুনরায় পরীক্ষা করেছে ‘ইউটাহ স্টেট ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক ক্যারল ডেহলারের নেতৃত্বে ‘নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটি বা ইউএনএম’-এর অধ্যাপক ফ্রেড সান্ডবার্গ ও সহযোগী এক গবেষণা দল।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জিএসএ টুডে’তে। এ গবেষণায় ক্যামব্রিয়ান যুগের সামুদ্রিক পরিবেশ বোঝার জন্য সুপরিচিত এক মডেলকে আপডেট করেছেন গবেষকরা। ৫০ বছর আগে এ মডেলটি প্রথম তৈরি করেন ভূতত্ত্ববিদ এডি ম্যাককি।
ম্যাককির মডেলটিতে উল্লেখ ছিল, বিভিন্ন মহাদেশের উপর দিয়ে ধীরে ধীরে বয়ে যায় সমুদ্র। ফলে ভূমির ওপর ধীরে ধীরে তৈরি হয় পলির গভীর স্তর। তবে নতুন গবেষণায় এ মডেলটিকে আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন গবেষকরা।
“টন্টো গ্রুপ থেকে পাওয়া ৫০০ মিটার পুরু পাললিক স্তর থেকে আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বিপর্যয়কর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের প্রভাব সম্পর্কে জেনেছি, যা সম্ভবত ছিল আজকের বিধ্বংসী হারিকেনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। আর এটি এমন এক পৃথিবীতে ঘটেছে যেখানে গাছপালা ছিল না ও উষ্ণতাও ছিল বেশি। সে সময় পৃথিবী অবস্থা ছিল একেবারে বরফ মুক্ত,” বলেছেন ডেহলার।
“ওই সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এত বেশি ছিল যে, টন্টো গ্রুপে থাকা পাললিক স্তর ও জীবাশ্মের বেশিরভাগই মহাদেশের উপরের পরিবেশে জমা হয়েছিল। যা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, আগের ধারণার চেয়েও অনেক দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাণীর পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটেছে।।
নতুন মডেলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের শিলার সামুদ্রিক ও অ-সামুদ্রিক উভয় পরিবেশই খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা, যেখানে শিলার অনাবৃত ফাঁক ফোকরে পলি জমার কোনও প্রমাণ পাননি তারা।
ভূ-বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে এই পুনরায় রূপ পাওয়া মডেলটির। কারণ, গতিশীল সময়কালে পৃথিবীতে প্রাণ কীভাবে বিকশিত হয়েছিল সে সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের আরও গভীর ও সঠিক ধারণা দিতে পারে এটি।
“পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত ল্যান্ডস্কেপের বাইরে গিয়ে বিজ্ঞানের সঙ্গে মানুষের সখ্যতা গড়ে তুলেছে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের শিলা নিয়ে করা আমাদের এ গবেষণাটি, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সবসময়ই বিকশিত হচ্ছে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান,” বলেছেন ‘ডেনভার মিউজিয়াম অফ নেচার অ্যান্ড সায়েন্স’-এর ভূতত্ত্বের কিউরেটর ও এ গবেষণার সহ-লেখক জেমস হ্যাগাডর্ন।