ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় কারণ অ্যাপটি নিজের এমন কর্পোরেট গ্রাহকদের থেকে পয়সা কামিয়ে থাকে।
Published : 17 Oct 2024, 09:25 PM
অনেকেরই প্রশ্ন থাকতে পারে, হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং সেবা তো বিনামূল্যেই ব্যবহার করা যায়, তাহলে কোম্পানিটি কীভাবে অর্থ উপার্জন করে? আর শুধু হোয়টসঅ্যাপ কেন, অন্যদের আয়ের উৎস কী?
হোয়াটসঅ্যাপের বেলায় সম্ভবত এর পেছনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এর মালিক কোম্পানি মেটা, যার মালিকানায় আছে ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামও।
ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় কারণ অ্যাপটি নিজের এমন কর্পোরেট গ্রাহকদের থেকে পয়সা কামিয়ে থাকে, যারা সাধারণ ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক।
গত বছর থেকে বিভিন্ন কোম্পানি বিনামূল্যেই হোয়াটসঅ্যাপে নিজস্ব চ্যানেল সেটআপ করার সুযোগ পেয়েছে, যার ফলে তারা চ্যানেল গ্রাহকদের কাছে বার্তা পাঠাতে পারে।
তবে এর জন্য তারা যে অর্থ প্রদান করে তাতে অ্যাপের বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে কথোপকথন ও লেনদেন উভয় কাজের সুবিধা মেলে।
ভারতে ব্যাঙ্গালুরু শহরকে উদাহরণ ধরেই বলা যায়, ব্যবহারকারীরা এখন সেখানে হোয়াটসঅ্যাপ থেকেই বাসের টিকেট কিনতে পারেন এবং বাসে নিজের পছন্দের সিট বাছাইও করতে পারেন।
“আমাদের লক্ষ্য হল, আমরা যদি সবকটা বিষয়ে সঠিক হই, তবে এটি এমন এক ব্যবসা, যেখানে গ্রাহক চ্যাটিং থেকেই সব কাজ ঠিকভাবে করতে পারবেন,” বলেছেন মেটার বিজনেস ম্যানেজিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকিলা শ্রিনিভাসান।
“এর মানে, আপনি যদি টিকেট বুক করতে, তা ফেরত দিতে বা এর জন্য অর্থ পরিশোধ করতে চান, তবে চ্যাট থ্রেড থেকেই সেটা করা সম্ভব। এর পর আপনি নিজের জীবনের অন্যান্য কথোপকথনেও ফিরে যেতে পারবেন।”
এর পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্যবসা এখন অর্থ পরিশোধ করার লিংকও যোগ করতে পারবেন, যা হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাট বক্সে ফেইসবুক বা ইনস্টাগ্রামের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে আসা বিজ্ঞাপনের মতোই দেখা যাবে। শ্রিনিভাসান বলছেন, কেবল এই বিজ্ঞাপনী সুবিধাটিরই মূল্য মেটার কাছে ‘কয়েক বিলিয়ন ডলার’।
অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপ অবশ্য ভিন্ন পথে গিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, সিগনাল নামের অলাভজনক অ্যাপকে, যা নিজের মেসেজিং নিরাপত্তা প্রোটোকলের জন্য সুপরিচিত, তা এখন এ খাতের মানদণ্ড হয়ে উঠেছে। তাদের দাবি, তারা কখনওই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নেয়নি, যেখানে টেলিগ্রাম অ্যাপ নির্ভরই করে ওই অর্থের ওপর।
সিগনাল অ্যাপটি আর্থিক অনুদান নিয়ে চলে, যেখানে ২০১৮ সালে হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাকটন পাঁচ কোটি ডলার দিয়েছেন।
“আমাদের লক্ষ্য হল, যত দ্রুত সম্ভব এমন ছোট ও বড় বিনিয়োগকারীদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে ওঠা, যারা সিগনাল নিয়ে চিন্তা করেন,” গত বছর এক ব্লগ পোস্টে লিখেছিলেন কোম্পানিটির প্রেসিডেন্ট মেরেডিথ হুইটটেকার।
এদিকে, মেসেজিং অ্যাপ ডিসকর্ডের সিংহভাগ ব্যবহারকারীই তরুণ গেইমার, যার ‘ফ্রিমিয়াম’ মডেলে বিনামূল্যেই সাইন-আপ করা যায়। আর এর অন্যান্য ফিচারের মধ্যে রয়েছে গেইমে প্রবেশের সুযোগ, তবে সেক্ষেত্রে পয়সা গোনা লাগে। পাশাপাশি, ‘নাইট্রো’ নামের পেইড মেম্বারশিপও আছে এতে, যেখানে মাসিক নয় দশমিক ৯৯ ডলার খরচ করে উচ্চমানের ভিডিও স্ট্রিমিং ও কাস্টম ইমোজি ব্যবহার করার সু্যোগ মেলে।
অন্যদিকে, স্ন্যাপচ্যাটের মালিক কোম্পানি স্ন্যাপ এমন বেশ কিছু মডেল সমন্বয় করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞাপন দেখানোর সুবিধাও। ২০২৪ সালের অগাস্ট পর্যন্ত এর আর্থিক ফি’ভিত্তিক গ্রাহক ছিল এক কোটি ১০ লাখ। এর পাশাপাশি, ‘স্ন্যাপচ্যাট স্পেক্টাকলস’ নামের অগমেন্টেড রিয়ালিটি গ্লাসও বিক্রি করে থাকে কোম্পানিটি।
মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এমন আরেক কৌশল ব্যবহার করে কোম্পানিটি প্রায় তিন কোটি ডলার মুনাফা কামিয়েছে। তবে, স্ন্যাপের অর্থ আয়ের মূল উৎস হল বিজ্ঞাপন, যেখানে বছরে প্রায় চারশ কোটি ডলারের মুনাফা আসে।